ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

উচ্চতর তামাক করে রাজস্ব বাড়ে, কমায় মৃত্যু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
উচ্চতর তামাক করে রাজস্ব বাড়ে, কমায় মৃত্যু প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তামাক ব্যবহারকারী দেশের একটি। দেশের ৪ কোটি ৬০ লাখ বা ৪৬ মিলিয়ন (৪৩ শতাংশ) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সিগারেট, বিড়ি, ধোঁয়াহীন তামাক বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন। পাশাপাশি দেশটি তামাকের ব্যবহার কমাতে ব্লুমবার্গ ইনিশিয়েটিভের (বিআই) পাঁচটি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দেশের একটি।

ধূমপান ধূমপায়ীদের পাশাপাশি অন্যদের জন্যও ক্ষতিকারক। পরোক্ষ ধূমপান বা পরিবেশগত তামাকের ধোঁয়ায় (ইটিএস) অধূমপায়ীরাও নিঃসন্দেহে ধূমপায়ীদের মতোই একই স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

পরোক্ষ ধূমপান মুখ, স্বরযন্ত্র ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। স্ট্রোক ও হৃদরোগ, দীর্ঘকালীন ফুসফুসের প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টিকারী রোগ (অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজেস-সিওপিডি), যক্ষা, এবং বার্জার রোগের সঙ্গেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপানের সম্পর্ক রয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপান অতি সাধারণ ঘটনা। ধূমপানমুক্ত কর্মক্ষেত্র নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, কর্মীদের স্বাস্থ্য উন্নত এবং কর্পোরেট ইমেজ বৃদ্ধি করতে পারে।

বাংলাদেশ ২০০৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম উন্নয়নশীল দেশ। ২০০৪ সালের পর থেকে এফসিটিসি’র কার্যকরী অংশীদার বাংলাদেশ। এ চুক্তির ৬ ধারা  অনুসারে অংশীদার দেশগুলো তাদের করনীতি ও মূল্য নীতিগুলোকে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করবে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার তামাকের ওপর উচ্চহারে কর আরোপের ব্যবস্থা করবে।

বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারকে ডব্লিউএইচও এফসিটিসি’র সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রী তামাকের ওপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন এ খাতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকপণ্যের ব্যবহার হ্রাস পায়।

‘বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত হবে’- তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় স্পিকারদের প্রথম সম্মেলনে এ ঘোষণা করেন।

সম্মেলনে ঢাকা ঘোষণা প্রকাশ করা হয়। সেখানে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো সকল অসংক্রামক রোগের (এনসিডি) উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসের জন্য কাজ করবে। তামাকের ব্যবহার এনসিডি’র ঝুঁকিরও মূল কারণ।

তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে তামাকের কর বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য কার্যকর পন্থা। এটি জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও রাজস্ব বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর। ধূমপায়ীরা অভ্যাসের কারণে ধূমপান ছাড়তে পারেন না অথবা কম মূল্যের কারণে তাদের ওপর আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে প্রভাব পড়ে না। এটি তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা। তামাকের কর বৃদ্ধি দরিদ্র, তরুণ এবং নতুন তামাক ব্যবহারকারীদের নিরুৎসাহিত করে এবং অন্যত্র আরো উৎপাদনশীল খরচ ও বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করে।

বিশ্বব্যাংক খুচরা মূল্যের দুই তৃতীয়াংশ থেকে চার-পঞ্চমাংশের মধ্যে তামাক কর আদায় করার পরামর্শ দেয়। কয়েকটি নিম্ন এবং মাঝারি আয়ের দেশ করের এ স্তরটি অর্জন করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের করের মাত্রা তারা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শুধুমাত্র আমাদের এসডিজি-৩ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেই সহায়ক হবে না, তামাকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের আরও অনেক লক্ষ্য অর্জনের অগ্রগতি এনে দেবে। যার মধ্যে রয়েছে- সব ধরনের দারিদ্র্য-ক্ষুধার অবসান, টেকসই কৃষিকাজে সহায়তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উন্নীত করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা।

তাই সরকারের জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে তামাকের কর বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে কম দামে সিগারেট পাওয়া যায়, এমন তিনটি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্‌’-এর প্রস্তাবনাপত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশের তামাকের বর্তমান কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল। বলা হয়েছে, সম্পূরক কর (এক্সসাইজ ট্যাক্স), মূল্যে শতাংশ হিসেবে ধার্য রয়েছে। তামাক পণ্যের ধরণ এবং ব্রান্ডভেদে সম্পূরক করের উল্লেখযোগ্য তফাৎ রয়েছে। দামি ব্রান্ডের তুলনায় সস্তা ব্রান্ডের ওপর করের মাত্রা অনেক কম।

সিগারেটের ক্ষেত্রে স্তরভিত্তিক যে কর কাঠামো বিদ্যমান, যা ভিন্ন ভিন্ন অ্যাড-ভ্যালোরেম কর হিসেবে খুচরা মূল্যস্তরের ওপরে ধার্য রয়েছে। বিড়ির ওপর ধার্য কর অত্যন্ত কম। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকর করারোপের মাধ্যমে প্রতি বছর তামাকপণ্যের দাম বাড়াতে হবে, যেন তামাকপণ্য ক্রমশ: ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।

লেখক
ইকবাল মাসুদ
ঢাকা আহসানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রধান
ই-মেইল: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।