ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘নেত্রী মোদের আলাদা!’

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১১
‘নেত্রী মোদের আলাদা!’

উইকিলিকসের নথির সূত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক অন্দরমহলের বেআইনি তৎপরতা অথবা খামখেয়ালিপনার গোপন কিছু গুচ্ছ তথ্য বোমার আকারে যত বেরুচ্ছে, তত জানা যাচ্ছে এখানকার নেপথ্যের কুশীলব একেকজনের সব চরিত্র! যারা দেশের মানুষকে সত্য না বললেও বিদেশি তথা মার্কিনদের সঙ্গে বাতচিতে মিথ্যা বলেননি না অথবা বলতে পারেননি। ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার দেশত্যাগের প্রস্তুতির বিষয়-আশয় নিয়েও বেশকিছু গোমর ফাঁক হয়েছে উইকিলিকসের নথিতে!

যদিও দেশের ওয়াকিফহাল অনেকে তা আগে থেকে জানতেন! খালেদা জিয়া অবশ্য বিভিন্ন সময়ে দাবি করে বলেছেন ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপের মুখেও তিনি দেশ ছেড়ে যেতে রাজি হননি! তিনি নাকি তাদের মুখের ওপরে বলেছেন,  `মরতে হয় এখানে মরবেন, কিন্তু কোনও চাপের মুখে দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না!`

দেশের আমজনতা যারা আপোসহীন নেত্রীর অভিধায়-ভূমিকায় খালেদা জিয়াকে দেখতে-জানতে অভ্যস্ত, তারাও তার কথা সত্য বলে বিশ্বাস করে মনে করতে চেয়েছেন, আসলেইতো আপোসহীন ‘নেত্রী মোদের আলাদা!’ কিন্তু উইকিলিকসের নথিতে এসেছে, দেশ ছেড়ে যেতে রাজি ছিলেন খালেদা জিয়া।

কিন্তু তার শর্ত ছিল ছেলেদের সঙ্গে অথবা আগেপরে নিয়ে যেতে দিতে হবে।

এ ব্যাপারে তৎকালীন শেরাটন হোটেলের একটি স্যুটে খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলের বউ জোবাইদার সঙ্গে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিসের একটি বৈঠকও হয়। জোবাইদা সেখানে তার স্বামী তারেকের পুরোনো একটি ডাক্তারি নথি দেখিয়ে বিউটেনিসকে এ ব্যাপারে কনভিন্সড করার চেষ্টা করেন। তিনি বলার চেষ্টা করেন মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে হলেও বিদেশে চিকিৎসার জন্যে যেতে জামিন পেতে পারেন তাঁর স্বামী তারেক রহমান। অথবা এখানে দেশে থাকলে উল্টো দুর্নীতি মামলায় তারেকের সাজাসহ লম্বা কারাবাসের ভয়-ডর তাদের মনে বাসা বেঁধেছিল! উইকিলিকসের নথিতে এসেছে, ওই বৈঠকে খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, সরকার তার পরিবারের জন্য সৌদি আরবের ভিসা যোগাড়ে ব্যর্থ হয়েছে।

খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য ধরেও তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষের একটি অপক্ক তৎপরতার উল্লেখ করা যায়। ওই সময়ে যে কোন মুহূর্তে খালেদা জিয়া বিদেশে চলে যাচ্ছেন এমন একটি গুজবে এয়ারপোর্টে মিডিয়ার লোকজনের লম্বা অপেক্ষার কথা হয়তো অনেকের মনে আছে। তখন জানা গেল খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে রাজি হয়েছেন, কিন্তু একটি শর্তে। শর্তটি হলো তিনি কোনও সাধারণ প্যাসেঞ্জারস ফ্লাইটে যাবেন না।

তার জন্য বিশেষ একটি বিমান ভাড়া করতে হবে। সে ব্যাপারে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ রাজিও হয়েছিল! এ ব্যাপারে দুবাই’র একটি বিমানসংস্থার সঙ্গে ছোট একটি এয়ারক্রাফট ভাড়ার ব্যাপারে যোগাযোগও করা হয়। তখনও ঢাকার মিডিয়ার অনেকে জানতেন সেই ভাড়ার এয়ারক্রাফটটি যেকোন সময় ঢাকা আসবে আর সেটিতে সৌদি আরবে দেশান্তরী জীবনে ফুড়ুৎ করে উড়ে যাবেন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া!

সে জন্যে কোন ফাঁকে আবার এক্সক্লুসিভ ছবি-নিউজটি মিস হয়ে যায়, সে ঝুঁকি না রাখতে অপেক্ষমান অনেকে তখন এয়ারপোর্টের ভিভিআইপি টার্মিনালের আশেপাশে বিনিদ্র রাত্রিযাপনও করেন! কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেপথ্যের উর্দিওয়ালাদের পরিস্থিতিও তখন যেন সবকিছু আন্ডার কন্ট্রোল... এমন! শেখ হাসিনাও তখন বিদেশে। খালেদা জিয়াও চলে যাবেন! এরপর দেশে নেমে আসবে আরাম শান্তি! আরাম খাঁটি নারকেল তেল মাথায় দিয়ে কিংস পার্টি গড়ায় উদ্যোগী তৎকালীন সো-কল্ড সামরিক হোমরারা সেকাজেই মনোযোগ দেবেন!

কিন্তু এরপর দেখা গেল নয় মন ঘি’ও যোগাড় হলো না, রাধাও নাচল না! অর্থাৎ কথিত সেই ভাড়া বিমানও এলো না, খালেদা জিয়ার দেশান্তরী হওয়াও হলো না! কথিত সেই বিমান কেন আসেনি? এ নিয়েই অনুসন্ধানে গিয়ে হাস্যরসের প্রথম গল্পটি বেরোয়। দুবাই থেকে রওয়ানা হবার আগেই অগ্রিম পেমেন্ট দাবি করেছিল বিমান সংস্থাটি। এখন ভাড়া কে শোধ করবে তা নিয়ে শুরু হয় ক্যাচাল! খালেদার সপরিবারে দেশান্তরী হবার বিশেষ বিমানের ভাড়া পরিশোধে রাজি হয় না তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষ। তারা নাকি দাবি করে ভাড়া খালেদা জিয়াকে পরিশোধ করতে হবে। যেহেতু তিনি এ ধরনের বিশেষ একটি ব্যবস্থায় যাবার প্রস্তাব করেছেন! কিন্তু এতে নাকি বেঁকে বসেন খালেদা জিয়া! তার বক্তব্য তোমরা আমাকে বিদেশ চলে যেতে বাধ্য করছো। তাই ভাড়া দেবে বা যাবার ব্যবস্থা কী করবে না করবে, সে দায়িত্ব তোমাদের!

কিন্তু আসলে কী শুধু বিমান ভাড়া কে দেবে না দেবে সেই কাইজ্যায় দেশান্তরী হওয়া হয়নি খালেদা জিয়ার? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে চূড়ান্ত হাস্যরস তথা সামরিক বাহিনী পরিচালিত সরকারের ‘হাঁটুবুদ্ধি’র খবর মেলে! সামরিক বাহিনী যেহেতু হাঁটুর জোরে লেফট রাইট আর যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়, দেশ-প্রশাসন পরিচালনার প্রশিক্ষণ তাদের দেওয়া হয় না বা দেবার কথা না, তাই দেশে দেশে মিলিটারি শাসনের নানাকিছু এই হাঁটুতে বুদ্ধির উপমা পায়। আমাদের দেশের উর্দিওয়ালারা যেমন গদিতে বসার সঙ্গে সঙ্গে গাছের গোড়াসহ সবকিছুতে চুনকাম আর লোকজনের লম্বা চুল ধরে ধরে কাটা শুরু করে দেয়!

সেক্ষেত্রের হাঁটু মার্কা বুদ্ধির সারবত্তাটি ছিল সামরিক বাহিনী খালেদাকে বিদেশ পাঠানোর জন্য দুবাইতে বিমান ঠিক করতে চলে গেছে, ভাড়া কে দেবে না দেবে সে বার্গেনিং  করছে! কিন্তু যেদেশে অর্থাৎ সৌদি আরব পাঠাবে, এর জন্যে সবার আগে যেটি দরকার সেটি তথা খালেদার লাটবহরের সে দেশে প্রবেশের ভিসাই যোগাড় করেনি বা করতে পারেনি! তৎকালীন সরকারের ভিসা যোগাড় ব্যর্থতার যে তথ্যটি খালেদায় জবানিতে এখন উইকিলিকসের নথিতে এসেছে! যে বক্তব্য প্রমাণ করে খালেদা জিয়া যে তখন দেশ ছেড়ে যেতে চাননি, এ ব্যাপারে তার আজকের দাবিটি ঠিক নয়। পুরা মিছা কথা।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের দেশান্তরী হওয়ার সেই প্রক্রিয়াটি ভেস্তে যাবার পর ঢাকার সৌদি রাষ্ট্রদূত সেনানিবাসের বাসায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি মিডিয়াকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী যদি উমরাহ উপলক্ষে স্বেচ্ছায় সৌদি আরব যেতে চান তাহলে তাঁকে অভ্যর্থনা দেওয়া হবে। নতুবা নয়। রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যেও প্রকাশ পায় খালেদাকে পাঠানোর সম্মতি তথা সৌদি কর্তৃপক্ষের ভিসা জোগাড় করতে পারেনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

উইকিলিকসের এসব নথিতে খালেদার পাশাপাশি তারেকের স্ত্রী জোবাইদার বেশ কিছু বক্তব্য আছে। দেশের একজন সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম আর খানের মেয়ে জোবাইদা পেশায় চিকিৎসক। রাজনীতির সাতেপাঁচে কখনো তাকে দেখা যায়নি। বিউটেনিসসহ একাধিক মার্কিন কর্মকর্তাকে জোবাইদা অভিযোগ করে বলেছেন, তার স্বামীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। একজন পতিভক্ত স্ত্রীর যা একটি অতি স্বাভাবিক বক্তব্য।

কিন্তু এর আগে বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে জোবাইদা রাজনীতিতে বিমুখ। স্বামী আর কখনো রাজনীতিতে ফিরে আসুক তা তিনি চান না। এ বিষয়ে জোবাইদার এখনকার বক্তব্য অবশ্য জানে না কেউ। খালেদা জিয়াদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবার পর সেনানিবাসের মইনুল রোডের সে বাড়িতে সেনাবাহিনীর যে সব সদস্য তল্লাশি চালিয়েছিলেন, তাদের একজন বলেছিলেন সেখানে সন্ধান পাওয়া একটি গয়নার ভল্টের এক্সক্লুসিভ একটা তথ্য! বলা হয়েছে ভল্টটি খুলে সেটির ভিতর স্তুপিকৃত গয়নাগাটির সংগ্রহ দেখে তারা চমকে ওঠেন! কোন একজন মানুষ বা পরিবারের সংগ্রহে এত গয়নাগাটি, রত্মরাজি থাকতে পারে তা স্বাভাবিক কল্পনাও কঠিন! যা শুধু আদিকালের রাজারানীর গল্পেই শুধু পাওয়া যায়!

জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সেখানকার এত কিছু মিডিয়াকে বললেন, এ তথ্যটি বললেন না কেন? জবাব দেওয়া হয় আস্তে আস্তে বলা হবে! বলাবহুল্য সেই কথিত আস্তে আস্তে বলা আর হয়নি। এক পর্যায়ে নিজের নিরাপত্তার পাততাড়ি গোটাতে ব্যস্ত হয়ে যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার!

সেই গয়নাগাটির শেষ গতি কী হয়েছিল কেউ জানেনি। বিএনপির অপারেশন ক্লিনহার্ট অভিযানের সময় বৃহত্তর সিলেট এলাকার নানান গ্রামাঞ্চলে যেমন হুন্ডি ব্যবসায়ীদের টাকা ভর্তি গাড়ি উর্দিওয়ালারা বেমালুম গায়েব করে দেয়, টাকাগুলো অবৈধ হুন্ডির হওয়াতে জেল-জুলুমের ভয়ে কেউ তা আর দাবি করে বলতে পারতো না, সেই গয়নারাজিও কী তেমন কেউ বা কয়েকজন মিলে মেরে দিয়েছে? জানা গেল না তা! কারণ মালিকপক্ষ থেকে কখনো তা খোয়া যাবার অভিযোগও করা হয়নি।

সবশেষ দেশি মিডিয়ায় বঙ্গানুবাদ সূত্রে উইকিলিকসের তেমন এক নথিতে জানা গেল কী করে ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক আমলে শেখ হাসিনার দেশে প্রবেশ ঠেকাতে চেয়েছিলেন খালেদা জিয়ার আজকের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী! শেখ হাসিনাকে যাতে ঢাকার বিমানে চড়তে দেওয়া না হয় সেজন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে আবদার করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার! আর বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়’র কায়দায় নিজস্ব দলবাজির উগ্র চিন্তায় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত তৎকালীন রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে আবদার  করেছিলেন, শুধু দেশে ফেরা আটকানো নয়, যেন পাসপোর্টও জব্দ করা হয় শেখ হাসিনার!

এসব জেনেশুনে ভাবতে হয় পেশাদার কূটনীতিক নামধারী কী গোবরভর্তি মস্তিষ্কের(!)সব লোকজন আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গদি দখল করে বসছিলেন বা এখনও আছেন! একজন কূটনীতিক একটি দেশের হয়ে দায়িত্ব পালনের সময় আরেকটি দেশের কাছে কী চাইতে পারেন বা পারেন না, এই স্বাভাবিক বোধ অথবা কাণ্ডজ্ঞানও এদের ছিল না অথবা নেই! অনেকে বলতে পারেন, একজন কূটনীতিক সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা বাস্তবায়নের পক্ষে কাজ করবেন, এটিই স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রেওতো নব নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে ঢোকার সময় নিজের মতো করে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন। প্রেসিডেন্টের হোয়াইট হাউস ত্যাগের সঙ্গে তারাও সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান।

কিন্তু বাংলাদেশে তখনতো বিএনপির সরকার ক্ষমতায় ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেখানে শেখ হাসিনাকে দেশের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর(!) ধারণা করে তাকে দেশে ঢুকতে দিতে চাইছে না, সেখানে শমসের মবিন কী তখনই বিএনপিতে এক পা দিয়ে রেখেছিলেন বলে কী ভবিষ্যত প্রাপ্তির অ্যাডভান্স বিনিয়োগ হিসাবে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট জব্দের বাড়তি কাজটি করতে চেয়েছিলেন? সেটি তখন না পারলেও আনুগত্যের পুরস্কার হিসাবেই কী আজ তার খালেদা জিয়ার উপদেষ্টার পদপ্রাপ্তি? ভালো ভালো! জাতিকে এসব একটু খোলাখুলি বলে নিলেতো আমরা সবাই মিলে আলোকিত হই, তাই না?

কিন্তু ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়’ দলবাজ এমন সব কর্মকর্তা-কর্মচারী যে একটি দল-সরকার বা রাষ্ট্রের জন্য কত ক্ষতিকর-বিপজ্জনক তা শমসের মবিনের এই একটি বাড়াবাড়ির দৃষ্টান্ত থেকেই ঠাওর করা যায়।   হাড়ির একটা ভাত টিপলে যেমন পুরো হাড়ির ভাত সেদ্ধ হয়েছে কিনা জানা যায়, তেমন তখন এদের তথা তত্ত্বাবধায়কের এসব অপক্ক কর্মযজ্ঞ থেকেই মার্কিনরাও তাদের ক্ষমতা বুঝে ফেলে! অর্থাৎ এরা কে বা কতদূর করার যোগ্যতা তাদের আছে! সে কারণে তখন ঢাকার মার্কিন কর্মকর্তারাও পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের মার্কিন আইনকানুন শেখানোর ক্লাস নেবার সুযোগটি মিস করেননি! মুখের ওপর তাদের বলে দিয়েছেন, মার্কিন আইনের কোন কোন ধারার কারণে শেখ হাসিনার স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি বা তার পাসপোর্ট জব্দ করতে পারেন না!

এই আমলে এক হরতালের সময় শমসের মোবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার পর্যায়ের একজন নেতাকে এভাবে আটকানো নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহও দেখা দেয়। অনেকে সেটিকে সরকারের বাড়াবাড়ি চিহ্নিত করে মনের থেকে নিন্দাও করেন। কিন্তু উইকিলিকসের এই নথিটি প্রকাশের পর কারো সেটির যোগফল মেলাতে অসুবিধা হয় না! এর মানে যুক্তরাষ্ট্রে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের সময় `কঞ্চি দড়` জ্ঞানে জনাব মোবিনের অবদানটি(!) শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের লোকজনও জানেন! অতএব নেত্রীকে খুশি করতে তাঁকে গ্রেফতারের একটি সাদাকালো প্রমাণও দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে!

যদিও প্রতিহিংসার কাজটি ঠিক হয়নি। অথবা আমাদের ঘরানার রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থা এমন প্রতিহিংসা এড়ানোও সহজ-সম্ভব না! একই সঙ্গে আরও যা স্পষ্ট হয়েছে তাহলো, শহীদ জিয়ার আদর্শ বা খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার প্রতি আনুগত্য না, নিজের কৃতকর্মের জন্যে ভবিষ্যতে নিজের মায়ার চামড়া বাঁচাতে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন! উইকিলিকসের তথ্যটি ফাঁস হওয়াতে শমসের মোবিনও হয়ত, তথ্য সঠিক নয়-উদ্দেশ্য প্রণোদিত আরেকটি পিঠ বাঁচানোর মতো ব্যাখ্যা দিতে পারেন। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের প্রতিবাদের মতো তা দ্বিতীয় পাতায় সিঙ্গেল কলামে ছাপা হবে বলে তা হয়তো অনেকের নজরেও পড়বে না। আমরা বরঞ্চ রাজনীতিতে নবাগত ভদ্রলোকের বস্ত্র আর পিঠের নিরাপত্তার জন্য আল্লাহপাকের কাছে খাস দিল’এ মুনাজাত করতে পারি।

ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদি

বাংলাদেশ সময় ১৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।