নামগুলোর মত ঘটনাটিও কাল্পনিক হলে খুশি হতাম বা এই কথাগুলোকে লিখতে হতো না তখন। কিন্তু ঘটনাটি সত্য ও নির্মম।
-শুনো, আমার ফিরতে এতটু দেরি হবে, গরমে পাগল হওয়ার দশা আজ, পারলে একটু শরবত করে রেখো। এখন রাখো, বাসায় ফিরে সব বলব ।
স্ত্রী রাহেলা বেগমের সাথে শফিক সাহেবের মোবাইল ফোনে আলাপচারিতা। এর ঘণ্টাখানেক পর আবার বেজে উঠল রাহেলার ফোন। রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে হাতে নিলেন ফোনটা। স্ক্রিনে নাম সেভ করা রাফিকের বাবা। রাফিক তাদের একমাত্র ছেলে। ফোন রিসিভ করলেন রাহেলা।
-হুম বল।
-আপনি কি শফিক সাহেবের পরিচিত কেউ?
অপরিচিত গলা আর কণ্ঠ শুনে বেশ স্বাভাবিক কারণেই শঙ্কিত হয়ে উত্তর দিলেন,
-জ্বি, আমি উনার স্ত্রী
-মহাখালী রেল ক্রসিংয়ের কাছে উনি অ্যাকসিডেন্ট করেছেন, আপনি আসুন।
-ও কোথায় এখন? (জানতে চাইলেন রাহেলা)
-আপানি মহাখালী রেল ক্রসিংয়েই আসুন
বুঝতে বাকি রইল না রাহেলার কি হয়েছে। রাফিককে ফোন করে জানিয়ে দিলেন তার বাবার দুর্ঘটনার কথা। কোনও এক অজানা কারণে পুরো সত্য বলতে পারলেন না ছেলেকে।
এরপর তার মনের অনুভুতি আর আঁচ করা যায়নি। মানুষ যন্ত্র হলে ঠিক ঠিক বলে দেওয়া যেত কি ভাবছিলেন তখন রাহেলা। কিন্তু মানুষ যন্ত্র না বলেই যন্ত্রণা তার একান্ত আপন, তার আরশি নগরের অজানা রহস্য।
সে সব কিছুকে ছাপিয়ে অনভূতির বহিঃপ্রকাশ করতে পারে মানুষ। পারে বলেই সে হয়ে উঠে পারিবারিক, সামাজিক তথা রাষ্ট্রের অবিচ্ছিন্ন অংশ। স্বীকৃত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশ হয়ে উঠতে এবং সেই অংশের অস্তিত্বকে রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত লাড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। এই লড়াইয়ে নিজের দুর্বলতাকে সে মেনে নেয় বা ’মানিয়ে নেয়া’ নামে বিশেষ একটি শব্দের মাধ্যমে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
স্বীকৃত এই প্রতিষ্ঠানগুলো তখন তার মানবিক চেতনা ও স্বাধীন ইচ্ছাগুলোর উপর নির্মম খড়্গ চালায়। এই খড়্গ চালাতে সে প্রতিনিয়ত খাজনা দেয়, নিজে না খেয়ে রাষ্ট্রকে খাওয়ায়, নিয়ম গড়ে আরও বেশি মাত্রায় হয়ে যায় পরাধীন।
আর প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঘটতে থাকে সেইসব লিখিত বা অলিখিত শর্তের, যার মাধ্যমে সে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের অংশ হয়ে ওঠে। মৃত্যু ঘটে শফিক সাহেবের, তার মানবিকতা বিলীন হয় কর্পূরের গন্ধে, তার স্বাধীন ইচ্ছাগুলো ভেসে যায় রাহেলা আর রাফির কান্নার জলে।
মো. আরিফ হোসেন রোমেল
[email protected]