কৌতূহল থামাতে না পেরে আবার জানতে চাইলাম- কীভাবে? এবার সে বললো- ‘বাবা, আমি রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে অনলাইনে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর আপডেট খবর দেখি। ’
শুনে আমি তো অবাক! তবে আমি হতবাক হইনি।
দেশ-বিদেশের খবর আপডেট শুধু আমার সন্তান রাখে তা নয়। অক্ষরজ্ঞান জানা সচেতন সবাই এখন দেশ-বিদেশের নিত্যনতুন খবরাখবর নিতে চায়।
হাজারো অনলাইন নিউজপোর্টালের ভিড়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ব্যতিক্রম। সনাতনী সংবাদপত্র জগত ও সাংবাদিকতার অবসান ঘটিয়ে নিউজপোর্টালটি দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এ কারণে বলা চলে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এখন আর ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারের পর্দায় সীমাবদ্ধ নয়, মানুষের হাতের মুঠোয়। বলতে পারি মুঠোফোনের পর্দায়ও।
আধুনিক সাংবাদিকতায় মেধার বিকল্প নেই। মেধাহীনরা এ পেশায় টিকে থাকাও সম্ভব নয়। কারণ আমরা যারা এ পেশায় জড়িত, তাদের মতে সংবাদপত্রের পাঠক সাংবাদিকদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান। বলতে গেলে এই এক যুগ আগেও একের অধিক পত্রিকা কোনো পাঠক পড়ত না। এখন দুইয়ের অধিক পত্রিকাতে অধিকাংশ পাঠক চোখ বুলায়। তারা এখন টুইস্টিং বা সুড়সুড়ি দেওয়া নিউজ কোনটি তা সহজে বোঝে। এককথায় মনের মাধুরী মিশিয়ে চর্বিতচর্বণ মার্কা নিউজ করলে পাঠক তা পড়ে সত্য, তবে মনে গাঁথেও না, রাখেও না। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এ ধরনের হীনমন্য ধারাকে কুপোকাত করে মেধাবৃত্তিক সাংবাদিকতাকে মূল্যায়ন করছে। যা সময়োপযোগী তো বটেই, পাশাপাশি সমাজ, দেশ সর্বোপরি রাষ্ট্রের মজবুত ভিত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে অনেক সাহসী রিপোর্ট আমরা দেখি, যা রক্তচোষা প্রভাবশালী মহলের ভিত প্রতিনিয়ত দুর্বল করে দিচ্ছে। একদল মেধাবী তরুণ তুর্কির ক্ষুরধার লেখনী নিউজপোর্টালটি পড়তে পাঠকদের সম্মোহনী শক্তির মতো যেন নিত্যদিন টানছে।
বাংলানিউজের প্রতিদিনের আয়োজন নিয়ে পাঠক মহলে আলোচনা-প্রশংসার পাশাপাশি মেধাবী সাংবাদিকদের অনুযোগও রয়েছে। এদের মতে, নিউজপোর্টালটি অনেক সাংবাদিককে অকর্মণ্য করে দিচ্ছে। খবরের পেছনে ছুটে বেড়ানো যেখানে সাংবাদিকতার মূলকথা, সেখানে দেখা যায় অনেকে সন্ধ্যায় অফিসে এসে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম দেখে পরের দিনের খবর লিখছে কিংবা পুরো খবরটি কপি করে চালিয়ে দিচ্ছে। যা মেধাবৃত্তিক সাংবাদিকতাকে চৌর্যবৃত্তিতে রূপ দিচ্ছে। এসব কারণে মেধাবী সাংবাদিকতা তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। প্রযুক্তির অভিনব পন্থা দিয়ে এ ধরনের চলমান কপি সংস্কৃতি রোধ করতে হবে। তবেই অনলাইন সাংবাদিকতায় মেধাবীরা উৎসাহের পাশাপাশি প্রেরণা পাবে।
দেখতে দেখতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম প্রতিষ্ঠার আট বছরে পদার্পণ করলো। সাফল্যের হিসেব মেলালে ঈর্ষণীয়। দেশ ছেড়ে বিশ্বজুড়ে তার পাঠক। বঙ্কিম চন্দ্রের 'কপালকুণ্ডলা' উপন্যাসের নায়ক নবকুমারের মতো অকুতোভয় প্রধান সম্পাদক থাকলে যা হয়, বলতে গেলে তা-ই হয়েছে বর্তমানে এর ডাল-পালা।
এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন ভাইয়ের সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তবে উনার লেখার সাথে সংবাদপত্রের সাথে যুক্ত হবার পর থেকে নিয়মিত পরিচয় রয়েছে। একজন আধুনিক রুচিসম্পন্ন অনুসন্ধিত্সু চৌকস সাংবাদিক হিসেবে আলমগীর হোসেন ভাইয়ের পরিচয় দেশে সুবিদিত। তার উদ্যমী নেতৃত্ব ও একদল মেধাবী সাংবাদিকের শাণিত লেখনীতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার সর্বোত্তম শিখরে উঠুক-প্রতিষ্ঠার অষ্টম বছরে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, দৈনিক সংবাদ।