আসল কথা হলো রক্ষক যদি ভক্ষকের আসনে বসে তখন সমালোচনা হবেই। এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে দ্রুত ওই অপরাধী পুলিশ সদস্যকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা।
এসব কথার অবতারণা করলাম সম্প্রতি চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া এক অনভিপ্রেত ঘটনার সূত্র ধরে। যা পুলিশ বিভাগে তো বটেই, জনমনেও নানামুখী সমালোচনা হচ্ছে। গত ৩ জুলাই গভীর রাতে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার এক অভিজাত হোটেলে পুলিশ পরিদর্শক মাঈনুল ইসলাম ভূঁইয়া মদ্যপ অবস্থায় এক অকল্পনীয় ঘটনার জন্ম দেন। সেদিন তিনি মদ পান করার পরও আরও অতিরিক্ত মদ সরবরাহ না করার কারনে ওই হোটেলের চারজন কর্মী ও সিএমপির ডবলমুরিং থানার এক উপ-পুলিশ পরিদর্শককে পেটান। এই ঘটনা তৎক্ষণাৎ সিএমপির উর্দ্ধতন মহলের নজরে আসে এবং পরদিন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সর্বমহলে সমালোচনার ঝড় উঠে।
গুটিকয়েক পুলিশ সদস্যের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীকে নিয়ে সমালোচনা মোটেই ঠিক নয়। তবে অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা গেলে সমালোচলা কমে এবং পুলিশের চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে সাধারন মানুষ জানতে পারে। এক্ষেত্রে কতটুকু করা হচ্ছে সচেতন মহল তা দেখছে।
পুলিশ পরিদর্শক মাঈনুল ইসলাম ভূঁইয়া যে এবারই প্রথম এই ধরনের ঘটনা ঘটালেন তা নয়। এর আগে সিএমপির সদরঘাট থানার ওসি থাকাকালেও বিনা অপরাধে ছাত্রলীগের এক নেতাকে মারধর করার কথা পত্রপত্রিকায় এসেছে। তার সাথে ঘনিষ্ঠতা আছে এমন অনেকের মতে, সে আইনের মানুষ হলেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানো এবং ক্ষমতার অপব্যবহারে তার জুড়ি মেলা ভার। নগরীর খুলশী থানায় দায়িত্ব পালনকালেও রয়েছে তার বিরুদ্ধে নানা রকমের কীর্তিকলাপ। মূলত: পুলিশ বিভাগের সুনাম কারও অজানা নয়। জঙ্গি দমনে পুলিশের সাহসী ভূমিকা মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই পেয়েছে। চাঞ্চল্যকর অনেক ঘটনার সমাপ্তি ঘটাতে পুলিশের অপরিসীম মানসিকতার পরিচয় সর্বজনবিদিত। সন্ত্রাস দমনে পুলিশের প্রাণদান অহরহ, যা সকলে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। দুই একজন পুলিশ সদস্যের কারণে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীকে কালিমালিপ্ত করবে-তা হতে পারে না। সিএমপিতে এমন অনেক সাহসী ও নির্লোভ পুলিশ সদস্য আছেন, যারা দিনরাত নিরলসভাবে অপরাধ দমন করে এই বাহিনীকে সুনাম বাড়াচ্ছে। দুর্ধর্ষ অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে তাদের নির্ঘুম রাত কাটানোর গল্প শুনলে তাদের জন্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জন্মায়।
একজন দক্ষ ও সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমান কমিশনার ইকবাল বাহারের পরিচিতি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর কাছে সাধারণ মানুষ দেখতে চায় আইনের শাসনে কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়। আর তা যত দ্রুত হবে, ততই সিএমপি সমালোচনা মুক্ত হবে এবং সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে। আমরা অনেকক্ষেত্রে দেখেছি কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধ করলে তাকে বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয়। আবার এ-ও দেখেছি তদ্বিরের জোরে সেই শাস্তি উঠে গিয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত সদস্যকে ভালো জায়গায় পোস্টিং পেতে। এসবে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে, যা কাম্য নয়। ভদ্রলোকের মুখে যেমন অসভ্য কথা বেমানান, তেমনি সুশৃঙ্খল একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কোনো সদস্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়ানোও শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
আমরা আশা করবো অপরাধী যে-ই হোক- তাকে কোনো ব্যক্তি তদ্বিরে সহায়তা যেন না করে। কারণ অপরাধীর কাছে সকল ভাল মানুষই খারাপ। নিজের থেকে বেপরোয়া যে চলতে পছন্দ করে তাকে সুপথে আনা কঠিন। একমাত্র আইনের যথাযথ পথই পারে তাকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে।
লেখক: জেষ্ঠ্য সাংবাদিক, দৈনিক সংবাদ।