মানুষকে ভালো ও নিরাপদে রাখার অহর্নিশ চেষ্টা করেই তারা সুখ অনুভব করেন। কিছু পাওয়ার আশায় নয়, বরং তাদের সার্বক্ষণিক চিন্তা থাকে সাধারণ মানুষের জন্য ভালো কিছু করার।
আমরা যারা সাংবাদিকতা পেশায় আছি, আমাদের নিয়ে অনেক পাঠকেরই একটা অভিযোগ আছে। তা হলো- আমরা নাকি ভালো কাজের প্রশংসা কিংবা নিউজ গণমাধ্যমে তুলে ধরি না। তাদের কথা-আমরা নেগেটিভ নিউজ বেশি করে গণমাধ্যমে তুলে আনি। কথাটাকে আমরা শতভাগ সত্য বলতে পারি না। আবার কারণে-অকারণে পুরোপুরি মিথ্যাও বলা যাবে না।
গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতে, একটি সমাজ তথা দেশে চলমান অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরলে তা নেগেটিভ নিউজই হয়। তবে তা সমাজ তথা দেশেরই মঙ্গল বয়ে আনে। এতে করে সকল পর্যায়ের মানুষ সচেতন ও সতর্ক হয়। সফলতার খবর বা ইতিবাচক নিউজ যে গণমাধ্যমে আসে না, তা-ও জোর দিয়ে বলা যাবে না।
আজ এমন একজন মানুষের কথা তুলে ধরতে চাই, যিনি সত্যিকার অর্থে দেশে একটি উপজেলাকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
তিনি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। বর্তমানে তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মাস্টার'দা সূর্য সেন, কবি নবীন সেনসহ অনেক জ্ঞানতাপস ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান রাউজান। যা ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ছিল দেশের অন্যতম সন্ত্রাসের জনপদ। এমন কোন দিন, সপ্তাহ, মাস ছিল না যখন গুলির আওয়াজ আর লাশের গন্ধ পাওয়া যেত না। সেই রাউজান এখন শান্তি ও সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যেখানে গুলির আওয়াজে পাখির কলকাকলি পর্যন্ত শোনা কষ্টকর ছিল, সেখানে এখন দেশি পাখি তো বটেই, বিদেশি পাখিরও আনাগোনা বেড়েছে। এমন কোন সড়ক নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামীণ জনপদেও রাস্তার দুই ধারে সড়ক বাতি এবং সারি সারি বিভিন্ন জাতের বৃক্ষরাজি চলার পথে মানুষের মন কাড়বে সন্দেহ নেই। যা একমাত্র ফজলে করিম চৌধুরীর প্রত্যক্ষ নজরদারি ও আন্তরিকতার কারণে সম্ভব হয়েছে।
জানা গেছে, রাউজানে ফজলে করিম চৌধুরী তার চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে যা করেছেন, তা দেশের অন্য উপজেলাতে তো নয়ই, বিশ্বের কোথাও হয়নি বলা চলে। গত ২৫ জুলাই রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় মাত্র একঘন্টার মধ্যে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ফলদ বৃক্ষের চারা রোপণ করে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এ কাজে রাউজানের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। এতো বিপুল ফলদ চারা সংগ্রহ করাও একটি দুরহ কাজ। এসব চারা তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সংগ্রহ করেন। ২০১৬ সালেও তিনি লক্ষাধিক চারা রোপণ করেন। শুধু চারা রোপণ করেই তিনি থেমে যাননি। এখন চলছে চারা গাছের তদারকি ও পরিচর্যা। যেসব স্থানে গাছ মরে যাচ্ছে, সেসবে আবার নতুন চারা লাগানো হচ্ছে।
গত ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে রাউজানে ১০৮৪ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। একদিনে একটি উপজেলা থেকে এতো ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ দেশে বিরল ঘটনা। এর আগে গত বছরের এদিনে রাউজানে ৫৭৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। যা একমাত্র ফজলে করিম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে রাউজানের সরকারি-বেসরকারি ১৮২টি স্কুলে শুরু হয়েছে স্কুল ফিডিং (দুপুরের টিফিন) কার্যক্রম। এর আওতায় সম্পূর্ণ স্থানীয় উদ্যোগে প্রতিদিন ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে দুপুরের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। যা দেশে সর্বপ্রথম রাউজানেই ফজলে করিম চৌধুরী চালু করেন। বর্তমানে চট্টগ্রামে রাউজানকে কেউ বলে পিংক সিটি, আবার কেউ বলে গ্রিন সিটি। অনেকের কাছে রাউজানের জন্য শব্দ দুটিই সমার্থক। কারণ রাউজানের প্রতিটি বাড়িঘর এবং সড়কের পাশে অবস্থিত সব দোকান-পাট, দালান-কোঠা ও গাছে গোলাপি রঙ লাগানো। এছাড়া উত্তর রাউজানে এবং দক্ষিণ রাউজানে পিংক সিটি নামে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ দুই আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দ হয়ে গেছে।
অপরদিকে চারিদিকে সবুজ বৃক্ষরাজির সমারোহে রাউজান হয়ে উঠেছে ছায়া সুনিবিড় পরিবেশবান্ধব অনন্য উপজেলা। রাউজানে ২৬ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও স্থাপন করা হয়েছে। যা রাউজানের বাসিন্দাদের চাহিদা পূরণ করে পার্শ্ববর্তী উপজেলাতেও বিতরণ করা হয়ে থাকে। বিসিক শিল্প নগর স্থাপনকল্পে ৮০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের জন্য একনেক সভায় সম্প্রতি অনুমোদিত হয়েছে। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি কলেজ ও একটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। রাউজানস্থ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় আইটি পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা সম্বলিত একটি নথি ফজলে করিম চৌধুরী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করেছেন বলে জানা গেছে।
একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, সকাল ৬টা থেকে ফজলে করিম চৌধুরীর দৈনন্দিন কর্মঘণ্টা শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। নিয়মানুবর্তিতা আর কাজে বিশ্বাস করেন তিনি। দিনরাত ভাবেন কীভাবে রাউজানের মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায় সে কথা। কোনো ধরনের স্বীকৃতির আশায় তিনি কাজ করেন না। মানুষের কল্যাণের জন্যই তিনি অবিরাম কাজ করে চলেছেন।
রূপকথার গল্পের মত একেকটি কাজ করে ইতিহাস সৃষ্টি করলেও আজ অবধি তিনি কোনো মন্ত্রণালয়ের যেমন কাজ পরবর্তী সরাসরি ধন্যবাদ পাননি, তেমনি এসবের কথা চিন্তা করে কাজও করেন বলে মনে হয় না। যে লোক কাজে বিশ্বাসী তার আবার এসবে কি আসে যায়।
লেখক: জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক; দৈনিক সংবাদ।