গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাংলানিউজের সৌজন্যে ঢাকা শহরে বিএনপির শোডাউন দেখলাম। এই অনলাইনটির একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকা শহর যেন এক আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
হায় রে শান্তি! শেখ হাসিনা যখন বিশ্বশান্তি কায়েমে ব্যস্ত , তখন তার নিজের ঘর বেহাল দেখে আকাশের চাঁদও যেন লজ্জায় ম্রিয়মান হয়ে যায়। যেখানে সুপার পাওয়ার দেশগুলোসহ সারা বিশ্ব বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য মরিয়া হয়ে লড়ছে, সেখানে আমাদের দেশের মহান নেতারা হরতাল-আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি টাকা ধ্বংস করে দিচ্ছেন নিছক দলীয় স্বার্থে।
বেশ কিছুদিন আগে বিএনপি আহূত হরতাল পালিত হওয়ার সময় একটি জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখেছিলাম, একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। ভাবা যায়! আমাদের রাজনীতিকরা কি একবারও ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখেছেন, সেই এরশাদ আমল থেকে আজকের আওয়ামী শাসনামল পর্যন্ত হরতালের মাধ্যমে দেশের কত বিলিয়ন-বিলিয়ন টাকা নষ্ট করেছেন শুধুই ‘ক্ষমতা’ নামক বস্তুটির জন্য। মানুষের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি বা সমস্যার কথা না হয় বাদই দিলাম, সেই পুরনো আমল থেকে অদ্যাবধি হরতাল ডেকে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে যেভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে তা থেকেও যদি আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বিরত থাকতে পারতেন তাহলে দেশ আজ সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার কাতারে দাঁড়াতে পারত বলে আমার বিশ্বাস।
যে দেশের নেতারা কেবলই গলাবাজিতে ওস্তাদ, গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে হরতাল-বিক্ষোভের মাধ্যমে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি করে ও জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট করে দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকেই উচ্ছেদ করতে চায় কিংবা সরকার নিজেও যখন নিজের স্বার্থে নিরীহ জনগণের সাথে লুকোচুরি খেলে, সেখানে শান্তিকামী মানুষের শান্তি তো কেবলই যেন সোনার হরিণ।
ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেতাদের কিছু সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে আলোকপাত করব। এরই মধ্যে নজর পড়ল বাংলানিউজের আরেকটি আপডেট সংবাদের ওপর। সংবাদটির শিরোনাম: ‘সমাবেশে খালেদার একগুচ্ছ ওয়াদা’। অর্থাৎ বিএনপি আয়োজিত পল্টন সমাবেশে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, তাঁর দল আবার ক্ষমতায় গেলে তিনি সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন। তার ওয়াদায় আরও বলেছেন, দেশে দুর্নীতি থাকবে না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, স্বার্থরক্ষা করে গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হবে, জিনিসপত্রের দাম ক্রয়ক্ষমতার আওতাধীন থাকবে, না খেয়ে মানুষকে মরতে হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জনগণের জন্য কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার দৃঢ়তার কথা ব্যক্ত করেছেন তিনি।
যততুকু জানি গর্জন-নেতা হিসেবেই খ্যাত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যেখানে প্রায় সময় ডিজিটাল আন্দোলনের কথা বলে বেড়ান, সেখানে মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীর মুখে বস্তাপচা একগাদা ব্যাকডেটেড ওয়াদা শুনে আমার সাড়ে চার বছরের মেয়ের পোষা বেড়ালটাও হয়তো হেসেছে।
আপনারা যারা রাজনীতি করেন তারা কি কেবল নিজেদেরই মহাজ্ঞানী মনে করেন? জনগণ কি এতই বোকা! আর কত ধোঁকাবাজির খেলা খেলবেন! দু দুবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আপনার ছেলের হাওয়া ভবনের রসালো কীর্তি এখনো মানুষের মুখে মুখে। আপনি পল্টনের মহাসমাবেশে দাঁড়িয়ে যেসব সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন ওগুলো আপনাদের আমলেরই ফসল। আজ সমাজের পরতে পরতে যা দেখা যাচ্ছে তা তো কেবল সেসবের ধারাবাহিকতা মাত্র।
অথচ বিরোধী শিবিরে থেকে এখন আপনি সরকারকে ছি ছি করছেন, অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলে অর্থমন্ত্রীকে ভিক্ষুক বলছেন, রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর নামে মিথ্যে বলাসহ সরকারকে অসংখ্য অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জনসমাবেশে বেশ মুখরোচক কথা মানুষকে শুনিয়েছেন। মাসতুতো ভাই জামায়াতের ব্যাপারে সাফাই গাইতেও ভুল করেননি।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যিনি কঠিন অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেছেন তাঁর কথা তো বিশ্বাস না করে উপায় নেই। কিন্তু খটকা এখানেই, দু-দুবার প্রধানমন্ত্রীর গদিতে আসীন থেকেও যিনি বহু গুরুতর সমস্যার ‘স’-ও সমাধান করতে পারেননি, তিনি কোন জাদুমন্ত্রবলে পুনর্বার ক্ষমতায় পৌঁছেই সব সমস্যা এক ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেবেন! এর মাজেজা কী?
কথাবার্তার ধরন দেখে মনে হলো আমাদের মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে আলাদিনের চেরাগ আছে!
লেখক : আয়ারল্যান্ড প্রবাসী
[email protected]