আমি মনে করি, বাংলাদেশের সড়কে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও দুরাবস্থা সৃষ্টির অন্যতম কারণ মোটরসাইকেল। দেশে কেউ কি হেলমেট মাথায় দিয়ে আইন মেনে মোটরসাইকেল চালান বা চড়েন? অথচ ভিয়েতনামের মানুষ (নারী ও পুরুষ সবাই) হেলমেট মাথায় দিয়ে আইন মেনেই সড়কে মোটরসাইকেল চালান বা চড়েন।
ভিয়েতনামে মোটরসাইকেল ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় সমান হবে সারা দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। প্রতিটি পরিবার একাধিক মোটরসাইকেলের মালিক। হ্যানয় শহরে আমার বাসার গৃহকর্মী মেয়েটি প্রতিদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে আসা যাওয়া করে। বাংলাদেশ এমনটি কবে হবে? ভিয়েতনামে সবাই সাধারণভাবে ট্রাফিক আইন মেনে চলেন।
বাংলাদেশের কয়েক বছর পরে ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম স্বাধীনতা অর্জন করে। আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভিয়েতনাম এখন অনেক উন্নত দেশ। বর্তমানে ভিয়েতনামে জনপ্রতি গড় আয় ২২শ মার্কিন ডলার। আর বাংলাদেশের ১৬শ মার্কিন ডলার। ভিয়েতনাম বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ আইন-কানুন মেনে চলার চর্চা আর নাগরিকদের কর্তব্য সচেতনতা।
ভিয়েতনামের মোটরসাইকেল বিষয়ক আইন-কানুন বাংলাদেশের অনুরূপ। দেখা যাক মোটরসাইকেল সম্পর্কে বাংলাদেশের ট্রাফিক আইনের বিধান।
আসুন, জেনে নেই বাইক চালানোর গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়
গতি বাড়লে ঝুঁকিও বাড়ে
অনিয়ন্ত্রিত ক্ষিপ্রগতির কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তাই সাবধানে বাইক চালাতে হবে। মনে রাখবেন, একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। আর বাইকচালানোর সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে আপনার মাথার অংশ। তাই হেলমেট পরা জরুরি। রাস্তা ফাঁকা পেলেই দ্রুতগতিতে বাইক চালানো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
মোটরবাইকে গতিসীমার আইন
গতিসীমার ওপরে বাইক চালানোর জন্য মোটরযান সংক্রান্ত ১৯৮৩ অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১৪২ ধারায় মামলা দিতে পারেন ট্রাফিক সার্জন। আর দুর্ঘটনা ঘটলে মামলা হতে পারে ১৪৬ ধারায়।
হেলমেট আবশ্যক
বাইক চালাতে হলে অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে। শুধু বাইক চালকই নন, তার পেছনের মানুষটির জন্যও হেলমেট পরা জরুরি। একটু অসচেতনতার জন্য ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। হেলমেট ব্যবহার না করলে মামলা হবে ১৪৯ ধারায়।
ফুটপাতে বাইক নয়
অনেকেই জ্যামের কারণে সময় বাঁচাতে ফুটপাতে বাইক উঠিয়ে দেন। মনে রাখতে হবে, ফুটপাত হাঁটার জন্য, বাইকের জন্য নয়। ফুটপাতে বাইকচালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ফুটপাতে বাইক চালালে ট্রাফিক আইনে ১৩৭ ধারায় মামলা ও বিভিন্ন পরিমাণের অর্থমূল্যের জরিমানা।
বাইকের ফিটনেস
আপনার বাইকের ফিটনেসে কালো ধোঁয়া যেন বের না হয়, সেদিকে লক্ষ্যরাখতে হবে। ফিটনেসবিহীন মোটরবাইকের জন্য মামলা হতে পারে ১৫০ধারায়। এছাড়া বাইকে লুকিং গ্লাস ও নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহারের জন্য মামলা হতে পারে ১৩৯ ও ১৪৯ ধারায়।
লাল ও সবুজ বাতির সংকেত লক্ষ্য করুন
রাস্তায় চলার সময় অবশ্যই সবুজ ও লাল বাতির সংকেত মেনে চলতে হবে। তাড়াহুড়া করে আইন অমান্যের দায়ে ১৪০ ধারায় মামলা হতে পারে।
বাংলাদেশে হেলমেট মাথায় দিয়ে আইন মেনে মোটরসাইকেল চালানো এবং চড়ার বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা দরকার। এ বিষয়ে সবার কিছু করা উচিত।
সড়কে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা বন্ধ করে আইনানুগ সড়ক ব্যবহার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এবং নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থার জন্য আপনিও কিছু করুন সবার সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণার কাজ করুন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এএ