সৌদি আরবে আটজন বাঙালির শিরশ্ছেদে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার পরে সংবাদপত্র, ফেসবুক, ব্লগ এবং অন্যান্য মাধ্যমগুলো ঢুঁ মারলে স্পষ্টতঃ দুইটি ভিন্ন ধারার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। এক পক্ষ ঘটনাটিকে বর্বর বলে তীব্র সমালোচনা করছে; অন্যপক্ষ বিচারের স্বচ্ছতা এবং প্রক্রিয়াটি এড়িয়ে গিয়ে কাজটিকে একটা বৈধতা দেবার চেষ্টায় লিপ্ত আছে।
যে আটজন বাঙালিকে শিরচ্ছেদে হত্যা করা হয়েছে তাদের সাথে দুজন সৌদী নাগরিকও ছিল। অস্ত্র লুন্ঠন এবং এক মিশরীয় নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যার গুরুতর অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। অপরাধ যদি সত্য হয়ে থাকে তবে সাজাতো পেতেই হবে। মনে হয়, কারো এ বিষয়ে দ্বিমত নেই। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান কিন্তু বাঙলাদেশেও রয়েছে। লক্ষীপুরের বিএনপি নেতার হত্যাকরীদের ক্ষমা করে দেওয়ায় এই সেদিনও আমরা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছি। মানবাধিকার যেমন সার্বজনীন ঠিক তেমনি অপরাধীর সাজা হওয়াটাও জরুরি সেই মানবাধিকারকে রার জন্যই। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আলোচনাগুলো আরো বেশী বুদ্ধিদীপ্ত, যৌক্তিক, গোছালো এবং গঠনমূলক হওয়া দরকার।
পরিস্কার করতে হবে আমাদের অবস্থান। আমরা কি সেই আটজন বাঙালি হওয়াতে তাদের সমর্থন করছি, নাকি আমাদের বক্তব্য, এক, আটজনের অপরাধ প্রমানের প্রক্রিয়ায় সচ্ছতার অভাব ছিল; দুই, সেখানকার দ্বিমুখী এবং এক চোখা বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে; তিন, অসচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে; চার, যে প্রক্রিয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে; নাকি পাচ, তাদের লাশ স্বজনদের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সম্পর্কে যাদের ধারনা আছে তারা সবাই জানেন, সেখানকার বিচার ব্যবস্থার দ্বিমুখী এবং একচোখা নীতির কথা। নিজ দেশের জনগণের জন্য এক দৃষ্টিভংগী, শক্তিশালী রাষ্ট্রের নাগরিকের জন্য আরেক এবং আমাদের মতো দেশের অসহায় জনগণের জন্য ভিন্ন দৃষ্টি। অনেক সময় এরা নিজ দেশের অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য অপরাধের দায় বিদেশি গরিব শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দেয়। কিংবা কোন গরিব বিদেশি অত্যাচারের সম্মুখীন হয়ে বিচারের দারস্থ হলে সেটা আমলে না নিয়ে উল্টো তাকে একটা মিথ্যা অপরাধে ফাঁসিয়ে শায়েস্তা করা হয়। শ্রমিকদের ভাষাগত সমস্যা এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের অসহযোগিতার কারণে এরা সেই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পায় না।
সৌদী তদন্তে ভরসা না করে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগেও একটা তদন্ত করা উচিত আসলে কি ঘটেছিল সেখানে। ওই আট বাঙালি কি সত্যি সত্যি অপরাধী ছিল? নাকি তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে? অপরাধ করে থাকলেও প্রোপটটা জানা দরকার। শুনেছি, এক ইন্দোনেশিয়ান নারী শ্রমিক বারবার গৃহকর্তার দ্বারা ধর্ষিত হবার পরে কোন উপায় খুজে না পেয়ে তাকে হত্যা করেছিল। এ রকম অন্য কোন ধরনের বৈরী পরিস্থিতির শিকার তারা হয়েছিল কিনা সেটা জানা দরকার। কে না জানে সেই সমকামী সৌদী যুবরাজের কথা যে ইংল্যান্ডে হোটেলে তার ব্যক্তিগত পরিচারককে নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। এগুলোর পাশাপাশি প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এ যুগে কতোটুকু গ্রহণযোগ্য সেটা নিয়েও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কথা বলা দরকার।
এটাও সত্য যে, বিদেশে অনেক বাঙালি নানা ধরনের অপরাধ কর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। যারা বিদেশে অপরাধ করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, এক চোখাভাবে তাদের সমর্থন জানিয়ে অপরাধকে সাধুবাদ জানানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমাদের দেশে ভিন দেশি কেউ অপরাধ করলে সেকি তার অপরাধের সাজা পাবে না?
সম্প্রতি ইন্দোনেশীয়ার বালিতে অস্ট্রেলিয়ার এক বালক মারিজুয়ানাসহ ধরা পড়ায় পুরো রাষ্ট্র জুড়ে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। সবাই বালকের মুক্তির পাশাপাশি কঠিন সত্যটাকেও অস্বীকার করেনি যে, সে অপরাধ করেছে।
অপরাধীর অপরাধকে আমলে না নিলে সমাজে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। সত্যকে স্বিকার করে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পুরো মিডিয়া বলছে ক্যানাবিস বহন অপরাধ ঠিক আছে, কিন্তু সে দেশের প্রশাসন নিরপেভাবে বিষয়টি দেখেনি। পর্যটন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বালিতে গড়ে ওঠা অপরাধীদের মূল চক্রকে বাঁচিয়ে রেখে আইনের খড়ক শুধু বিদেশিদের বেলায় কেন প্রয়োগ হবে। আমাদের কূটনৈতিক প্রচারও সে রকমটা হওয়া উচিত নয় কি।
সৌদী ধনকুবরদের দ্বারা শারিরীক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার গরীব দেশের অসহায় মানুষগুলো বাচার জন্য কিছু করে বসলে কেন শুধু আইনের খড়গ নেমে আসবে! কেন ঐ সমস্ত জালেম, রাসপুটিনদের অত্যাচারের বিচার হয় না সেটা বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে। ধর্মের আড়ালে অধর্মকে জায়েজ করার যে অপচেষ্টা সেটা মেনে নেয়া যায় না।
মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈর শাসকদের শুধু মাত্র মুসলমান হবার কারনে অবিবেচকের মতো মমতা দেখানো অধর্মের কাজ। মদ্যপ, নারী লোলুপ এই সকল স্বৈরশাসকেরা প্যালেস্টাইনে লাখ লাখ শিশু নিহত হচ্ছে জেনেও আমেরিকার পদলেহন করে। দরিদ্র মুসলিম বিশ্বে অনাহারে লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে জেনেও জুয়া, মদ এবং নারীর পিছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালতে দ্বিধা করে না। এদের দ্বারাই ইসলাম কলংকিত হয়েছে সবচেয়ে বেশী।
আমাদের দিয়ে দেবার কূটনীতি এবং নিয়ে নেবার রাজনীতি
সম্প্রতি আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তিস্তা চুক্তি এবং বাঙালির শিরচ্ছেদ ঠেকানোতে ব্যর্থতা, দুটি বড় কূটনৈতিক বিপর্যয়। অন্যটি রাজনীতিতে জামাত এবং এরশাদ আবারো দুই বড় দলের বগল দাবা হয়ে পুনর্বাসিত হয়েছে।
অনেকে বলে থাকেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন ভালো মানুষ। বিরোধী দলের লোকেরাও হয়তো সে কথাই বলবেন। কিন্তু ভাল মানুষ প্রতিবেশী হিসেবে ভাল মানায়। সে কোন ঝঞ্ঝাট করবে না। কিন্তু কোন দায়িত্বে থাকা লোকের ‘ভাল মানুষ’ গুণের সাথে ‘দ মানুষও’ হতে হয়। দতা প্রমাণের সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে দেশের ক্রান্তিকালীন সময়ে নিজের অবস্থান থেকে দেশের স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়ে আসা। উপরের দুটো ঘটনা প্রমাণ করে যে, সেই নিরীখে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর অবস্থান কোথায়। পররাস্ট্র দফতরের সিপাহসালারের যখন এই অবস্থা তখন তার সৈন্য সামন্তদের কি হাল সেটা হাড়ির একটা ভাত টিপে আন্দাজ করার মতোই বুঝা সহজ।
ইউটিউবে আমাদের ওমানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য যারা দেখেছেন এবং শুনেছেন তারা হয়তো প্রথমে কোন কমেডিয়ানের কমেডি শো বলে ভুল ভাবতে পারেন। অবশ্য তিনি বর্তমান রাষ্ট্রদূত নাকি সাবেক সেটার কোন উল্লেখ নেই সেখানে। বাঙালি কম্যুনিটি অনুষ্ঠানে তার আরবী, ইংরেজী এবং বাঙলার মিশ্রনে বক্তৃতা সত্যিই হাস্যকর। তার কথা বলার ভঙ্গীমা এবং বক্তব্যগুলো যে কোন কমেডিয়ানের কমেডিকেও হার মানাবে।
রাজনৈতিক আনুগত্যে এবং আত্বীয়তার সূত্রে নিয়োগ পাওয়া আমাদের অযোগ্য প্রতিনিধিরা তাই আসল কাজ রেখে হাস্যরস সৃষ্টি করে অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে চান। এদের দ্বারা বিদেশে বাঙালির নিরাপত্তা কিংবা স্বার্থ কিভাবে নিশ্চিত হবে। শুধু শুধ সৌদি সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ কি!
‘ত্যাগেই সুখ’ এই হচ্ছে আমাদের কূটনীতি। তিস্তায় পানি নেই কিন্তু আমাদের রাস্তায় ভারতীয় বড় বড় ট্রাক ঢুকিয়ে ফেলেছি। ডালা ভরা বড় বড় ইলিশ পাঠাচ্ছি ওপাড়ে। তার বিনিময়ে পাচ্ছি ফালানীদের লাশ। অন্যদিকে, ‘ভোগেই আনন্দ’ এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের মূল মন্ত্র। মতায় গিয়ে পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে খানা খন্দ কোনটাই বাদ যায় না দখল করে নিতে। বড় নেতারা কে কাকে ভবিষ্যতে ডান্ডাবেরি পড়াবে, কে উন্নয়ন (উন্নয়নের উ যে কতো বড় জনগনতো সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে) দেখে পাগল হয়ে গেছে, কে কয়টায় ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে সেই হিস্যা দিতে ব্যস্ত। মতার মসনদের দিকে এতোই শ্যেন দৃষ্টি যে বড় দুই দলের কারোরই আট আটটা বাঙালির কাটা মাথার দিকে তাকানোর ফুরসত নাই।
‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রুগী মারা গেল’ এবং ‘শিরচ্ছেদ হবার পরে দেশবাসী জানতে পারলো’
আমাদের বড় দুই দল যখন যুদ্বপরাধী এবং স্বৈরাচারকে দলে টানায় ব্যস্ত, সেই ফাকে আটজন বাঙালী কতল হয়ে গেল দূর দেশে তরবারীর নীচে। আমাদের কূটনীতিবিদরা এতোই দ যে, আজরাইলে জান কবজ করার আগ পর্যন্ত দেশবাসীকে তারা কিছু জানাতেই পারলো না। ঘটনার পরে চিৎকার চেচামেচি করে লাভ কি? সভ্য দেশে জাতীয় স্বার্থে দলীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সবাই এক হয়ে যায়। আমাদের ল্যাং মারা রাজনীতির সংস্কৃতিতে জাতীয় সংকট হচ্ছে সরকারের জন্য একা সমাধান করে একাই ক্রেডিট নিয়ে নির্বাচনে জেতার কৌশল। আর বিরোধীদের কামনা সরকার যাতে ব্যর্থ হয়। বাপের কান গেছে তি কি! নিজেতো বাঁচলাম দৌড়িয়ে! খালেদা জিয়ার রোড মার্চ কি সৌদির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটা প্রতিবাদসভায় রুপান্তর হতে পারতো না? হাসিনা কি খালেদাকে সরাসরি আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারতেন না?
জন্মই আমার আজন্ম পাপ
গরিব বাঙালিরাই দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনীতির চাকাকে এখনো সচল রেখেছে। এক সময় পাটকে সোনালী আঁশ বলা হোত এবং এর পিছনে ছিল গরীব কৃষকদের অবদান। এখন দেশের আয়ের প্রধান দুটো উৎস হলো বিদেশি শ্রমিকদের বেতনের টাকা আর গার্মেন্টস কর্মীদের শ্রমের দামে বেচা তৈরি পোশাক। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়ও নূর হোসেনদের মতো গরীবের জীবন দান। খালেদা হাসিনার বড় বড় জনসভায় যাদের বিপুল উপস্থিতি তাদেরও বেশীর ভাগ সেই গরীব। কিন্তু কি হতভাগা তারা! দেশে বাইরে কোথাও তাদের নিরাপত্তার এতোটুকু নিশ্চয়তা নেই। যাদের টাকায় আমাদের মন্ত্রী আমলারা অফিসে গরম বাতাস, ঠান্ডা বাতাস খায়, যাদের টাকায় পতাকা টাঙানো গাড়ি হাকিয়ে চলাফেরা করে সেই গরিবেরা বিদেশে যাবার শুরু থেকেই নানা ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। দেশে দালালের টাকা মেরে দেবার ভয়, বিদেশে আমাদের সাহেব রাষ্ট্রদূতদের অবহেলা। আমরা আমাদের মা বোনদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাচ্ছি। তারা কি লম্পট সৌদি ধনকুবের দ্বারা লাঞ্ছিত হচ্ছে না কি কোন খোঁজ নেই। টাকা পাঠালেই ওনাদের সুখ। গরিবের টাকায় দেশ চলে, গরিবের রক্তে সরকার পরিবর্তন হয়। শুধু পরিবর্তন হয় না গরিবের ভাগ্যের।
সত্যি কথা কি, গরিবের ঠাঁই কোথাও নেই। দেশে থাকলেও কতো বিপদ। সন্ত্রাসী, র্যাব পুলিশের গুলিতে নিহত হবার ভয়। না খেয়ে মরার ভয়। বন্যায় ভেসে যাবার ভয়, খরায় শুকানোর ভয়। সড়ক দূর্ঘটনায় মরার ভয়, গাদাগাদি করে কম পয়সায় লঞ্চে ভ্রমণে নদীতে ডুবে মরার ভয়। সীমান্তে গুলি খেয়ে তারকাটায় ঝুলে মরার ভয়। বিদেশে উদ্ধত তলোয়ার, ইজ্জত হারানোর ভয়। ভয় আর ভয়, চারিদিকে শুধু ভয়! এ যেন ডাঙায় বাঘ, জলে কুমীর। কোথায় যাবে এরা! নজরুল ভুল করে লিখেছিলেন, হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছো মহান। সেটা হয়তো তার নিজের বেলায় সত্য ছিল। কিন্তু বাকী গরীবের কবিতা হচ্ছে, জন্মই আমার আজন্ম পাপ।
এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে নাকে তুমি
উপরের প্রশ্নগুলোর সাথে সাথে প্রয়োজন আত্ম সমালোচনার। আমাদের জানা দরকার;
এক, সৌদীতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কি করেছিলেন এই সব বাঙালীদের রার জন্য
দুই, আমাদের সরকার বিশেষত: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কি ভূমিকা ছিল
তিন, লাশ আনতে কেন ব্যর্থ হলো।
এই ঘটনার বাইরেও আরো গভীরে গিয়ে আলোচনা করতে হবে বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোর কর্মকান্ড সম্পর্কে। প্রতিনিয়ত যাদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ, সেগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। দূতাবাসের পিছনে প্রতি মাসে লাখ লাক টাকা ঢালা হয় শুধুমাত্র তাদের সংসার চালানোর খরচ বহনের জন্য নয়। বিদেশে আমাদের নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের বিপদে পাশে দাড়ানো দূতাবাসের প্রধান কাজ।
আমাদের জনগণের মনস্তত্ত্ব বোঝাও বেশ দুস্কর। দলীয় আনুগত্যে ভারাক্রান্ত আমাদের মন। আর কতো অন্যকে সমালোচনা করে নিজের দূর্বলতা ঢাকার চেষ্টা করবো? বারবার ব্যর্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বাচাতে ‘ভাল মানুষ তত্ত্ব’ আবিস্কারের লোকেরও অভাব নাই।
ঝকঝকে নতুন মডেলের নতুন গাড়ি হলেও চাঁদে যাওয়া যায় না। চাঁদে যেতে হলে পুরাতন চলনসই রকেট হলেও চলে। ঠিক তেমনি দেশের স্বার্থ রায় অতি ভাল মানুষ দরকার নেই আমাদের। দরকার একজন দ কূটনীতিক, তাকে মানানসই ভাল মানুষ হলেও চলবে। অদ ভালো মানুষদের কাছ থেকে ভালো কাজ আশা করি কি করে!
আমরা সৌদীর দ্বিমুখী এবং এক চোখা নীতির কট্টর সমালোচনা করছি। আমাদের দেশে কি এই দুটো বদ গুণের কোনটাই নেই। এইতো সেদিনের তাড়া খাওয়া সন্ত্রাসী শামীম ওসমান আবারো মতার দুয়ারে উকিঝুকি মারছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ভয়ংকর ভয়ংকর অপরাধীরা দন্ড মওকুফ পেয়ে আবারো অপরাধে মেতে উঠেছে। সমাজের প্রভাবশালীরা কিংবা টাকা খেয়ে পুলিশ নিরীহ লোকদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।
দেশের কোনো প্রান্তে কোনো নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা আছে কি? তাই সংস্কারটা নিজের দেশ থেকে শুরু করুন। সৌদী রাজপরিবারের বিরুদ্ধে লেগে কতোটুকু উপকার হবে আমাদের। ওরাতো মাত্র আটজনকে হত্যা করেছে। কিন্তু দেশের ভিতর প্রতিদিন রাষ্ট্র যন্ত্রের সহযোগিতায় যে খুন, ধর্ষনগুলো ঘটে চলেছে অহরহ, আসুন সবাই মিলে সেটাকে বন্ধ করি আগে। নিজের আতœমর্যাদা প্রতিষ্ঠা হলে দুনিয়ার সবাই সমীহ করতে বাধ্য হবে।
অমুক দেশ কি করেছিল, তমুক দেশ কি করেছিল বলে খামোখা চেচামেচি করলে কোন উপকার হবে না। ওগুলোর বেশিরভাগই ছিল আইনের বাইরে শক্তির খেলা, মুরব্বীয়ানা। যে খেলায় আমাদের দেশ থেকেও কয়েক বছর আগে আমেরিকা আল কায়েদা সন্দেহে এক বাঙলাদেশিকে তাদের দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারকে তারা কেয়ারও করেনি। একই ঘটনা ঘটিয়েছিল তারা পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদে লাদেনকে হত্যার সময়। পাকিস্তান তবুও একটু হাত পা ছুঁড়েছিল, বাংলাদেশ উ.. আ.. করারও সাহস পায়নি। শক্তির সেই একই খেলায় টুইন টাওয়ারের হত্যাকান্ডে ধৃতদের বিচার হলেও যুগ যুগ ধরে প্যালেস্টাইন, ইরাক, আফগানিস্তানে লাখ লাখ নারী, পুরুষ, শিশু হত্যার কোন বিচার নেই। ওই অশুভ শক্তি অর্জন করতে পারলে না চাইতেও অনেক কিছু পাওয়া যাবে। আমরা যেহেতু শক্তিতে দুর্বল রাষ্ট্র, তাই দেশের স্বার্থ খুজতে হবে আন্তর্জাতিক আইন এবং নীতির মধ্যে থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে। শুধু ‘ভালো মানুষের’ নেতৃত্বে এক ঝাক ‘কমেডিয়ান’ দিয়ে দেশের স্বার্থ উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সময় ১২৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১১