ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

শব্দ-সন্ত্রাসে তটস্থ জনজীবন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৮
শব্দ-সন্ত্রাসে তটস্থ জনজীবন! শিল্পীর চোখে শব্দ-সন্ত্রাস। ছবি-সংগৃহীত

আমি যে এলাকায় বসবাস করি, সেখানে একটি হাসপাতাল আছে। হাসপাতাল সংলগ্ন একটি মাঠও আছে। নিয়মিত খেলাধুলার পাশাপাশি প্রায়ই মাঠে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয়। 

গতকাল রবিবার (১২ মার্চ) অনেক রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠানের তীব্র আওয়াজ পাচ্ছিলাম। ঘরের ভেতরে শব্দ আসছে বটে, তবে কথাগুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছিল না।

বারান্দায় গিয়ে কান পেতে শব্দগুলো শুনে অদ্ভুত ব্যাপার টের পেলাম। শব্দের উৎপত্তিস্থল লক্ষ্য করে আরও দেখি, হাসপাতালের উত্তর পাশের একটি মাঠে চলছে হৈ হুল্লোড় ও গানবাজনা। আশ্চর্যের বিষয়, অদূরের আরেকটি মাঠে সমান তালে চলছে ওয়াজ। তৎপরতার বিচারে দুটোই 'রীতিমত কান ফাটানো' শক্তি প্রদর্শন করছে।

স্বাভাবিকভাবেই বিরক্ত হলাম। আমার মতো অনেকেই শব্দ-সন্ত্রাসে বিপর্যস্ত হচ্ছেন। আমি ভাবলাম, কেউ গিয়ে এদেরকে নিষেধ করছে না কেন? বাধা দিয়ে থামাচ্ছে না কেন?

তখনই মনে পড়ল, পাশের বাড়ির ছাদের উচ্চৈঃস্বরের গান-বাজনার প্রতিবাদ করায় পুরান ঢাকায় একজনকে মেরেই ফেলেছিল শব্দ-সন্ত্রাসীরা। অতএব, কে যাবে প্রতিবাদ করতে!

আবাসিক এলাকার সাধারণ মানুষের কথা না হয় বাদই দিচ্ছি। কিন্তু পাশেই যে একটি হাসপাতাল আছে, সে খেয়ালটুকু করারও প্রয়োজনীয়তা বোধ করলো না উদ্যোক্তারা? 

আমার জানা মতে, এই হাসপাতালটিতে যেসকল রোগী ভর্তি হন, তাদের বেশির ভাগেরই অবস্থা ক্রিটিক্যাল। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিবিড় বিশ্রাম তাদের আরোগ্যের প্রধান শর্ত। চিকিৎসাধীন মানুষের কানের কাছে স্বাভাবিক মাত্রার শব্দ সৃষ্টি করাও যে গুরুতর অপরাধ, তা এই আদিম ও বীভৎস শব্দ-সন্ত্রাসীদের কে বোঝাবে? 

চরম শব্দ-সন্ত্রাসের সমস্যাটি বাংলাদেশে মোটেও নতুন নয়। অথচ একে প্রতিহত করতে সরকার বা সমাজের কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে একবারও এগিয়ে আসতে দেখা গেলো না! 

বরং এইসব শব্দ-সন্ত্রাসমুলক অনুষ্ঠানের পেছনে মদদদাতা হিসাবে সরকারি-বেসরকারি হোমড়া-চোমড়াদেরই দেখা যায়। ফলে দিনে দিনে শব্দ-সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হচ্ছে। বাড়তে বাড়তে আইন, নৈতিকতা ও শিষ্টতার সকল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এদের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্য।

লক্ষ্য করে দেখা গেছে, শুধু আমার নিজের বসবাসের শহরেই নয়, বাংলাদেশের সর্বত্রই বিভিন্ন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক দিবসে এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শোকাবহ বা আনন্দঘন অনুষ্ঠানে কিংবা ধর্মীয় উপলক্ষে উচ্চ আওয়াজে মাইক বাজিয়ে মাঠে নামা হচ্ছে। দিবস বা অনুষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্য ও শালীনতার দিকে কোনও মনোযোগই দেওয়া হচ্ছে না। শব্দ ও উচ্ছৃঙ্খলায় কদর্য করা হচ্ছে মহৎ উদ্যোগ,  উৎসব ও আয়োজন।

ফলস্বরূপ, আকৃষ্ট হওয়ার বদলে এইসব অনুষ্ঠান ও আয়োজনের ভয়াবহতার তোড়ে সাধারণ লোকজন আতঙ্কে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তদুপরি হররোজই মানুষ নানা ধরনের শব্দ-সন্ত্রাসের উৎপাত ও উৎপীড়নে অতিষ্ঠ হচ্ছে। শব্দ-সন্ত্রাসের ভয়ে ঘরে-বাইরে মানুষ এখন দস্তুর মতো তটস্থ।  

শব্দ-সন্ত্রাসে জর্জরিত হয়ে জনগণ বধির হয়ে গেলেই তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়লেও নড়তে পারে। তার আগে তারা শব্দ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কিছু করবে বলে মনে হয় না।

কিন্তু অত্যাচারিত জনগণ শব্দ-কানা ও বধির হয়ে যাওয়ার পর শব্দ-সন্ত্রাস থামিয়ে আর কি কোনও লাভ হবে? 

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৮

এমপি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।