ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

একটি বিনীত অনুরোধ

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১১
একটি বিনীত অনুরোধ

বিদেশে থাকলে যে দেশের প্রতি কতোটা প্রবল, কতোটা তীব্র আকর্ষণ আর মমত্ববোধ তৈরি হয় তা ভাষায় বোঝানো কঠিন। রক্তের ভেতর মাতৃভূমির নাড়ির টান পাগল করে তোলে।

তাই দেশের যে কোনো ভালো খবর শোনলে উত্তেজনায় মনটা আনন্দে ভরে যায়, ভাললোলাগার আবেগে-উদ্বেগে ভিজে যায় চোখ। আর কোনো খারাপ খবর পেলে বিষন্ন বেদনায় অস্থির বুকটা ভারি হয়ে উঠে।

বাবা সিসিইউতে। তাই ২০০৯-এ ছুটে গেলাম দেশে। সেই সময় শাহবাগে এক বিপ্লবী কবি কথায় কথায় আক্রমণ করে বললেন- আমরা রাজপথে আন্দোলন করেছি, জেলজুলুম সহ্য করেছি। আর এখন বসন্তের কোকিলের মতো বিদেশ থেকে এসে সরকারি সুবিধেটা নেয়ার জন্য...!

আমি তো অবাক! কি বলবো? খালেদা জিয়ার আমলে তো আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, বায়তুল মোকাররমের খতিব ওবায়দুল হক-মুফতি আমিনীসহ জঙ্গীবাদী মোল্লারা আমার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছে, ইনকিলাব-সংগ্রাম-খবরপত্র আমাকে দাউদ-তাসলিমা বানিয়েছে। ক’য় বছরে কি সবাই এ সব ভুলে গেছে?

ক’দিন পর প্রধানমন্ত্রীর ইফতারি দাওয়াত। গণভবনে ঢুকতেই তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সাথে দেখা। তিনি আমার দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়। হাতে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে পরদিন বাসায় যেতে বললেন। গেলাম মিন্টো রোডের ৬ নং হেয়ার রোডে। তিনি দেশে ফিরে কোথাও কাজে জয়েন্ করার জন্য অফার দিলেন। তাঁকে ধন্যবাদ দিলাম। সাথে সাথে মনে পড়লো সেই তখন বিপ্লবী কবির কথা। বিদেশ থেকে বসন্তের কোকিল হয়ে এসেছি...। কাক-কোকিলের কথা থাক। যে কারণে আজ ‘একটি বিনীত অনুরোধ’ করছি, সেই প্রসঙ্গেই আসি।

নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেনকে প্রাণ দিতে হলো সন্ত্রাসীর গুলিতে! এভাবে আর কতো জীবন যাবে? আলতাফ-বাবর-সাহারারা তো জাতীকে সান্ত্বনা দিয়েই যাচ্ছেন- সন্ত্রাসী যেই হোক, তাকে শাস্তি পেতেই হবে। এ প্রসঙ্গে আর কিছু বলার নেই।

বলতে চাই, তাঁর করুণ মৃত্যুর ক্ষোভে মানুষেরা আন্তঃনগর এগারো সিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুড়িয়ে দেয়! জ্বলে ওঠা নরসিংদীর ক্রোধের দাউ দাউ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল বগিগুলো।  ক্ষুব্ধ জনতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে।  ‘নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ড অভিযোগের তীর মন্ত্রী ও তাঁর ভাইয়ের দিকে’ বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে।

অপর দিকে সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকনকে। খুবই আতঙ্কে আছি, হয়তো এর জের ধরে আরো গাড়িবাড়ি জ্বলবে, পুড়ে ছাই হবে গরীব দেশের সম্পদ।  

ঢাকার একটি দৈনিক থেকে জানা যায়:

১. নির্মম এই হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী উত্তেজনায় সম্পদহানির পরিমাণ কোটি কোটি টাকার। একমাত্র রেলওয়েরই ক্ষতি হয়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। ২. নরসিংদী রেলস্টেশনের সিগন্যাল সিস্টেম ভস্মীভূত হয়ে এখন অকার্যকর। খোদ রেলস্টেশনের চারদিকে ধ্বংসের নানা চিহ্ন। সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে স্টেশনটি...।  ৩. এছাড়া ট্রেনটি পুড়িয়ে দেয়ায় আগাম বিক্রি করা তিন হাজার টিকিট যাত্রীদের ফেরত দেয়া হয়েছে। ৪. চারটি ট্রিপ বন্ধ থাকায় ২০ হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং ঈদের আগেও এই বিড়ম্বনা শেষ হবে না।

এই ধরণের ক্ষতিকর আন্দোলনে বা হরতালে ভাঙচুরের দৃশ্য দেখে বিদেশে বসে কী যে কষ্ট পাই, পেয়ে লিখিঃ‘যখন আমরা আবাদি জমির বিরুদ্ধে আন্দোলন নামলাম/ ভাঙচুর করলাম বাংলাদেশ, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিলাম বাংলাদেশ/ তখন ভাসমান মেঘ মুখ ফিরিয়ে ফিরে গেলো মেঘালয়ে’।

কবিতা লিখেও মনে শান্তি পাই না!

প্রতিটি হরতালে কতো কোটি কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ নষ্ট হয়। আমাদের মতো একটি দরিদ্র দেশের এই ক্ষয়ক্ষতি কী আমরা কোনোভাবে পোষাতে পারি? কি অপরাধ এই সব জাতীয় সম্পদের? একটি দুঃখজনক মৃত্যুর সাথে একটি ট্রেন পুড়িয়ে দেয়ার সম্পর্ক কোথায়? বিশ্বে এই ধরনের নেতিবাচক এবং আত্মঘাতী ঘটনা খুবই বিরল। একটি গাড়ি কী সন্ত্রাসী, একটি ট্রেন কী অপরাধী, একটি বিল্ডিং কী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ?

তাহলে আমরা কেন ক্ষোভের বশীভুত হয়ে গাড়ি ভাঙচুর করি? আমরা কেন পুড়ে ছাই করি- কোটি কোটি টাকার ট্রেন? কেন ধ্বংস করি- জনগণের অমূল্য সম্পদ! এতে ক্ষতি ছাড়া কী লাভ? যে দেশে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সে দেশে এ ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে? দেশের, জনগণের সম্পদ কী আমাদের শত্রু?

তাই, আমার একটি বিনীত অনুরোধ- গাড়ি ভাঙ্গবেন না, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করবেন না গরীব দেশের ট্রেন। এসব আমাদের সম্পদ; শত্রুর না।

[email protected]

বাংলাদেশ সময় ২২৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।