এসব কালাকানুন বা কালো আইন যে শুধুমাত্র কালো মানুষদের জন্য তৈরি হয়েছে তা কিন্তু নয়। তারপরও অভিবাসীদের চলমান এই দুর্দিন সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলা করার রূপরেখা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে চলছে পর্যালোচনা।
এই মুহূর্তে ইউরোপে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইতালিতে সম্প্রতি কার্যকর হওয়া নয়া ইমিগ্রেশন আইন। যদিও ইতোমধ্যেই এ আইনের বিরুদ্ধে রাজধানী রোমসহ বিভিন্ন শহরে কঠোরভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
নতুন আইনের প্রণেতা তথা ইতালীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি, যিনি একাধারে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী, তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে নতুন আইনের শতভাগ সুফল দেশের নাগরিকদের উপহার দিতে চান, যাদের ভোটে তারা এখন ক্ষমতায়। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি পরিষ্কারভাবে এটাও বুঝিয়ে দিচ্ছেন, সরকার পরিচালনা শুরুর পর থেকে গত চার মাসে যেভাবে এসেছে ধারাবাহিক সাফল্য।
সীমান্ত সুরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’। ইতালিও তার ব্যতিক্রম নয়।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্তে এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনির নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি ইতালীয় জনগণের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। যেকারণে ২০১৮ সালের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটে যাবার কোনো সম্ভাবনা বা সুযোগ একেবারেই নেই।
যে আইনের কারণে আজ অভিবাসীদের দুর্দিন; সৃষ্টি হয়েছে সংকট। সেটা নিয়ে সরকারের ভাষ্য, এই আইন কিন্তু তৈরি হয়েছে বৃহত্তর সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করতে। বাস্তবতার অলোকে তাই চলমান যেকোনো সংকটের সুরাহা হতে পারে একমাত্র আলোচনার টেবিলে।
আর আলোচনার টেবিলে গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ প্রসারিত করতে চায় ইউরোপে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ৩০টি দেশের সম্মিলিত সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (আয়েবা)।
ইতালি সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধ বা আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের যেকোনো উপায়ে বৈধতা পাবার সুযোগ করে দিতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে আয়েবা।
গত ১৩ অক্টোবর চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে অনুষ্ঠিত সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় বলা হয়েছে, প্রতিটি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখতে ‘অবৈধ ইমিগ্রেশন’ তথা সাগরপথে অনুপ্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে হবে। আয়েবার মূলমন্ত্র ‘ইন্টিগ্রেশন’ থেকে অবৈধ ইমিগ্রেশনকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রাগ মিটিংয়ের প্রধান অতিথি বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাগরপথে অবৈধ ইমিগ্রেশন নিরুৎসাহিত করা না গেলে শুধু ইতালি কেনো, ইউরোপের যেকোনো দেশে অবস্থানরত অবৈধ বা আনডকুমেন্টেড অভিবাসীদের ভাগ্য দিনে দিনে আরও অনিশ্চিত হবে। আর আয়েবা যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) কর্তৃক স্বীকৃত একটি ইউরোপীয় সংগঠন এবং ইমিগ্রেশন চ্যাপ্টারে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিগত দিনে আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধানের রেকর্ড গড়েছে, সেক্ষেত্রে ইতালী ইস্যুতেও সতর্কতার সঙ্গে কৌশলী ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর হবে সংগঠনটি।
রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে যেসব দেশে বৈধতার সুযোগ নেওয়া যায়, সেসব দেশে ইমিগ্রেশন ইস্যুতে দূতাবাসের মতো আয়েবারও রয়েছে বিশেষ সীমাবদ্ধতা। কিন্তু ইতালির প্রেক্ষাপট তা নয়। রোমে আছে ‘মানবিকতার সূতিকাগার’ ভ্যাটিকান সিটি। দেশটিতে অপরাধপ্রবণ জাতি হিসেবে বাংলাদেশিদের কুখ্যাতি নেই, এটিও বেশ আশার কথা।
বাংলাদেশিরা সৎ এবং কর্মঠ, এটা বেশ ভালো জানেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি। ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভালো কাজে লাগিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আয়েবা যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিচ্ছে তার সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা থেকে।
লেখক: প্রধান সমন্বয়ক, বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিট
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৮
টিএ