গত ৯ জানুয়ারি ইন্টার-সার্ভিস কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইসিএসজি) প্রকাশিত প্রতিবেদনের সর্বশেষ জরিপ মতে, হোস্ট কমিউনিটি তথা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ হাজার ৮২৭।
পৃথক একটি ডাটাসেটে মিলেছে ছড়িয়ে পড়া এ রোহিঙ্গারা কোন কোন এলাকায় বর্তমানে অবস্থান করছে।
সংখ্যার বিচারে টেকনাফ উপজেলার পরিস্থিতি বেশি উদ্বেগজনক। হ্নিলা ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের ১২৮ পরিবার (সদস্য ), সাবরাংয়ে ৪৯৭ পরিবার (সদস্য ১৯৩৬), টেকনাফ পৌরসভায় ১২২ পরিবার (সদস্য ৫৪৯), হোয়াইকংয়ে ১১৬ পরিবার (সদস্য ৫১৪), টেকনাফ ইউনিয়নে ১৭০ পরিবার (সদস্য ৬৯০) ও বাহারছড়ায় ১৫ পরিবার (সদস্য ৬৫) স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলিতভাবে বসবাস করছে। উপজেলার একটিমাত্র ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি নেই, তা হচ্ছে সেন্ট মার্টিনস।
উখিয়া উপজেলার হিসাবে দেখা যায়, পাঁচ ইউনিয়নের সবক’টিতেই রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি রয়েছে।
হলদিয়া পালংয়ে রোহিঙ্গাদের ৩৬ পরিবার (সদস্য ১৫৮), জালিয়া পালংয়ে ২২৬ পরিবার (সদস্য ৯৮২ ), পালং খালিতে ১১৫ পরিবার (সদস্য ৫১৩), রাজা পালংয়ে ১৬১ পরিবার (সদস্য ৬৯৭ ) ও রত্না পালংয়ে ২৭ পরিবার (সদস্য ১৩৬) বাংলাদেশি পরিবারগুলোর সঙ্গেই অবস্থান করছে।
রিফিউজি-রিলিফ রিপ্যাটরিয়েশন কমিশন (আরআরআরসি) ও ইউএনএইচসিআর তাদের জরিপ ‘লোকেশন অব রোহিঙ্গা রিফিউজি ইন কক্সবাজার’-এ উপরের এ উপাত্ত দিয়ে বলেছে, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত তথ্য তাদের প্রতিবেদনে এসেছে।
ক্যাম্পে লাখ লাখ রোহিঙ্গা, বাইরেও হাজার হাজার- স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের উত্তর বেরিয়ে এসেছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কর্মরত এনজিওগুলোর পরিচালিত জরিপে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সার্বিক ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য গঠিত ইন্টার-সার্ভিস কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইসিএসজি) চলতি সপ্তাহেই প্রকাশ করেছে মাল্টি-সেক্টরাল নিডস অ্যাসেসমেন্ট ইন হোস্ট কমিউনিটিজ- প্রিলিমিনারি ফাইন্ডিংস শিরোনামের একটি বিশদ প্রকাশনা। রোহিঙ্গাদের এ অনিবার্য উপস্থিতি কক্সাবাজারের ব্যাপক সংখ্যক বাসিন্দার নিরাপত্তা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের কী কী প্রয়োজন এসব চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। জরিপ চালিয়ে তারা বোঝার চেষ্টা করেছে রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের মনোভাবও। রোহিঙ্গারা যেহেতু একা আসেনি, বাংলাদেশের মানুষের জন্য তারা নিয়ে এসেছে নানা সমস্যাও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই যে তাদের সর্বান্তকরণে মেনে নেয়নি তা যথার্থভাবেই ধরা পড়েছে প্রতিবেদনে।
জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশিদের একজনও বলেনি তারা রোহিঙ্গাদের খুব বেশি পছন্দ করে। উখিয়ার ২০ শতাংশ বাসিন্দা বলেছে, রোহিঙ্গাদের কারণে তারা খুবই অসুখী। টেকনাফে এ হার ১৪ শতাংশ।
রোহিঙ্গাদের কারণে অসুখী- এ জবাব দিয়েছে উখিয়া ও টেকনাফ দুই উপজেলারই ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা। রোহিঙ্গাদের পেয়ে সুখী- এ উত্তর দিয়েছে উখিয়ার ১২ ও টেকনাফের ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা। সুখী বা অসুখী কোনোটাই নয়- এমন উত্তরদাতা এসেছে উখিয়ায় ৩৮ এবং টেকনাফে ৪০ শতাংশ।
গত বছর ভয়াল ডিপথেরিয়া যখন ছড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গা শিবিরে, তখন বাদ যায়নি আশপাশের বাংলাদেশিরাও।
গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত বুলেটিন মতে, স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যে ২০২ ডিপথেরিয়া কেইস-পেশেন্ট পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ৩০ জনের মধ্যে নিশ্চিতভাবে পিসিআর পাওয়া যায়। ৬৩ জনের ক্ষেত্রে বলা হয় মোটামুটিভাবে নিশ্চিত যে তাদের ডিপথেরিয়া হয়েছে। ১০৯ জনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়। ডিপথেরিয়ায় বেশ কিছু রোহিঙ্গার মৃত্যু ঘটলেও স্থানীয় কোনো রোগীর এতে প্রাণহানি হয়নি বলে জানানো হয় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনটিতে।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে ত্রাণ সংস্থাগুলোর শেষ হিসাবটি এ রকম। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মোট রোহিঙ্গা এসেছে ৯ লাখ ৯ হাজার ২০৭। কুতুপালং ও বালুখালি বর্ধিত ক্যাম্পে রয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৬ জন। অন্যান্য ক্যাম্পে রয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩৪ জন রোহিঙ্গা। এর বাইরে ৬ হাজার ৮২৭ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, তাদের ভাষায় হোস্ট কমিউনিটি তথা কক্সবাজারের স্থানীয় বাংলাদেশি সমাজের সঙ্গে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৯
আরবি/এইচএ/