রোহিঙ্গা সমস্যার সূত্রপাত
রোহিঙ্গা সমস্যা শুরু হয় ১৩৫ বছর পূর্বে ১৮৮৫ সালে, যখন সাম্রাজ্যবাদী বার্মা স্বাধীন আরাকান দখল করে নেয়। ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত রাখাইন ছিল একটি স্বাধীন রাজ্য, তখন এর নাম ছিল আরাকান।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নীতি
মিয়ানমার সরকার একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করে। নৃশংসতার মাত্রা দেখে স্বাভাবিকভাবেই অনুমিত হয় যে, রোহিঙ্গারা যেন আর কোনোদিন রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে সাহস না পায়, তেমন একটি ভীতি সঞ্চারের জন্যই এই নৃশংসতা চালায়। বস্তুতঃ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার এমন কার্যকলাপ থেকে এ কথাই প্রতিভাত হয় যে- রোহিঙ্গারা যেন কস্মিনকালেও রাখাইন রাজ্যে ফেরত যেতে সাহস না পায়, তেমন একটি পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই বাস্তুচ্যুত করে বাংলাদেশে বিতাড়ন করে। সর্বশেষ গণহত্যার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা নীতি বেশ স্পষ্ট হয়েছে। গত দু’বছরে নানা দেশ, উপমহাদেশীয় সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতি সামরিক জান্তার প্রতিক্রিয়া থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নীতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায়ের চাপ, বাংলাদেশের অনুরোধ ও রোহিঙ্গাদের আকুতি কোনো কিছুতেই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের নৈতিক বা রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন দৃষ্ট হচ্ছে না। স্পষ্টতই মিয়ানমার সরকারের ভাবটি এখন এমন যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত না নিলেই বা কী?
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া ও সমাধানের পথ
যে কোনো আন্তর্জাতিক ঘটনা তৈরি ও সমাধানে সবসময়ই বিশ্বের পরাশক্তিসমূহের একটি ভূমিকা থাকে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক শিবিরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স এবং অন্য শিবিরে চীন ও রাশিয়া। প্রথম শিবিরের দেশগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমস্যাটির সমাধানে আগ্রহী হলেও দ্বিতীয় শিবিরের দেশ দু’টি সমস্যাটির আন্তর্জাতিকায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সর্বশেষ নৃশংসতার পর রোহিঙ্গা সমস্যাটি বিভিন্ন আন্তঃরাষ্ট্রীয়, উপমহাদেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত হয়ে আসছে। বিষয়টি এক সময় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু সে সময় রাশিয়া ও চীনের বিরোধিতায় সমস্যাটির আন্তর্জাতিকায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। তখন এ দু’টি দেশের তৎপরতায় বিষয়টি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সমস্যা হিসেবে পরিণত হয়। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যাটি তখন থেকে একটু ভিন্নমাত্রিকতা লাভ করে। এর মধ্যে কোনো কোনো দেশ রোহিঙ্গা সমস্যাটি সমাধানে নিজেদের মতো করে নানারূপ তৎপরতা প্রদর্শন করছে। এ সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর অবস্থান নিয়েছে। উল্লখ্য যে, সম্প্রতি এশিয়া প্যাসিফিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান ব্র্যাডলি শেরম্যানের বক্তব্য থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। কংগ্রেসম্যান শেরম্যান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে আলাদা করে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু জাপান অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে একটু ভিন্নতর উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে নীরবে কিন্তু ধীরে সুস্থে কাজ করে চলেছে।
রোহিঙ্গা সমস্যায় জাপানের দায়বদ্ধতা এবং সমাধানে তৎপরতা
জাপান দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে প্রথম থেকে এই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তৎপর রয়েছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে জাপানের তৎপরতা সরাসরি দৃষ্ট হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কীভাবে কী কাজ করছে তা বাংলাদেশের জনগণের কাছে তেমন একটা দৃষ্ট হচ্ছে না। কারণ আমাদের দেশের মানুষ মূলত ইংরেজি মাধ্যমে সম্প্রচারিত পাশ্চাত্য বা পাশ্চাত্য আধিপত্যাধীন গণমাধ্যম থেকে অথবা তা থেকে বাংলায় অনূদিত খবরাখবর পেতে অভ্যস্ত। কাজেই এ দেশের মানুষের কোনো আন্তর্জাতিক বিষয়ে যে ধারণা জন্মায় তা হয় একদেশদর্শী। সে হিসেবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাপানের উদ্যোগ ও ভূমিকা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের যে ধারণা জন্মেছে তা একদেশদর্শী। কিন্তু পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমের বাইরে জাপানের গণমাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা ও তা সমাধানে টোকিও সরকারের উদ্যোগ ও ভূমিকা সম্পর্কিত খবর প্রচারিত ও আলোচিত হয়ে আসছে। তবে এগুলো জাপানি ভাষায় সম্প্রচারিত হয় বলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এর বাণী পৌঁছায় না। জাপানের গণমাধ্যম পর্যালোচনা করলে রোহিঙ্গা সমস্যা ও তা সমাধানে জাপানের জনগণ ও সরকারের উদ্যোগ ও ভূমিকা সম্পর্কে অন্য একটি দিক ফুটে ওঠে, যা নিচে তুলে ধরা হলো:
পরাশক্তিগুলোর তুলনায় সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তিতে জাপান তুল্য নয়। তবে অর্থনৈতিক ও প্রাযৌক্তিক শক্তিতে জাপান পরাশক্তির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার- এই দুই পরস্পর প্রতিবেশী দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই জাপান এ দু’টি দেশের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বর্তমানে জাপানের পররাষ্ট্রনৈতিক অবস্থান হলো-এই দুই পরস্পর প্রতিবেশী দেশ যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে পরস্পর সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে উভয় দেশই তা থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তাই জাপান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে দেশ দু’টিকে সহযোগিতায় আগ্রহী। এই দু’টি দেশে জাপানের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে এবং তাতে জাপান উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে কর্মতৎপর রয়েছে। কিন্তু এই দুই দেশেই জাপানের উদ্যোগ হুমকির মুখে রয়েছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশে এই হুমকির ধরন ভিন্ন। মিয়ানমারে এই হুমকি উৎসরিত হচ্ছে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা থেকে। এ দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রনীতি রোহিঙ্গা ছাড়াও কারেন, কাচিন ও চিন ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ ছড়াচ্ছে। এই অসন্তোষ থেকে গৃহযুদ্ধের ঘনঘটা শোনা যাচ্ছে। এ ধরনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বা গৃহযুদ্ধ জাপানের অর্থনৈতিক উদ্যোগকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। আবার বাংলাদেশে এই হুমকি উৎসরিত হচ্ছে এক অদৃশ্য শক্তি থেকে। বাংলাদেশ-জাপানের অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হোক তা কোনো একটি আন্তর্জাতিক মহল পছন্দ করছে না। ঢাকাস্থ হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্ট ও রংপুর (৩ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে এনজিও কুনিও হোশিকে হত্যা) কাণ্ডই হলো তার বড় প্রমাণ। বস্তুত: বাংলাদেশে অবস্থানরত জাপানি উন্নয়ন কর্মীদের অজানা আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না। জাপানিরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে কোনো অনুষ্ঠানই নির্ভীক চিত্তে করতে পারে না। কাজেই বাংলাদেশে জাপানের উদ্যোগ হুমকির মুখে রয়েছে।
তবে জাপানিদের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যাটি সমাধানের যে প্রয়াস দেখা যাচ্ছে, তা শুধু তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য নয়, বরং তাঁদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার জন্য। কারণ রোহিঙ্গা সমস্যাটি বিস্তৃতির এক পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী জাপানের হাত ছিল। বিষয়টি স্পষ্ট করতে ঘটনার সূত্রপাত থেকে আলোচনা করা যাক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালের যুদ্ধাভিযানে জাপান ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছ থেকে আরাকান দখল করে নেয়। ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশ ও জাপান বাহিনী আরাকানে পরস্পর মুখোমুখি সমরে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধে আরাকানের জনগণ বিভক্ত হয়ে পড়ে। রাখাইন জনগোষ্ঠী জাপানকে সমর্থন করে, আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ শক্তিকে সমর্থন করে। সে সময় জাপানি সৈন্যরা তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে রাখাইনদের যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে, অন্যদিকে ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে রোহিঙ্গাদের যুদ্ধকৌশল শিক্ষা দিয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে। যদিও দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব আগে থেকেই বিরাজিত ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এই দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়, যার রেশ এখনো চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জাপানি সৈন্যবাহিনীর উক্ত ভূমিকা জাপানের জনগণের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করেছে।
উক্ত দায়বদ্ধতার নৈতিকতাবোধ থেকে জাপান সমস্যার শুরু থেকে নীরবে কিন্তু ধীরস্থিরভাবে লেগে রয়েছে এবং এর সমাধানের ব্যাপারে সদা তৎপর রয়েছে। গত ৩০ জুলাই জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোওনো কুতুপালং-এ শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের মাধ্যমে জাপানের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে জানান দিয়েছেন।
তাছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানের রাষ্ট্রদূত এ পর্যন্ত ৫০ বার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। জাপানিরা ব্যক্তি পর্যায়, সাংগাঠনিক পর্যায় ও সরকারি পর্যায় ইত্যাদি নানা পর্যায়ে সমস্যাটির একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে তৎপর রয়েছেন। জাপানের জনগণ, নানা সংগঠন ও জাপান সরকার অবিরত নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা দ্রব্য ও সেবা দিয়ে শরণার্থী শিবিরগুলো উজ্জীবিত রেখেছেন। শরণার্থী শিবিরে জাপানিদের এইসব তৎপরতা সহজেই দৃষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সমস্যা, প্রত্যাবাসন সমস্যা ও বাস্তু সমস্যা সমাধানকল্পে জাপান সরকার মিয়ানমার সরকার, আসিয়ান ও জি-৭ ইত্যাদি নানা আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে অবিরত দেনদরবার করে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাপান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান অন্য যে কোনো পরাশক্তির চেয়ে ভিন্নতম। এ বিষয়ে জাপানের নানা গণমাধ্যমে জাপান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান স্পষ্ট হচ্ছে। জাপান সরকারের অবস্থান হলো এই যে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক কায়দায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কূটনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা অধিকতর শ্রেয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার ব্যবস্থায় আইনসভার কাছে যে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে, সেখানেই রোহিঙ্গা সমস্যা ও তা সমাধানের চাবিকাঠি নিবদ্ধ রয়েছে। নতুন সংবিধানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ভার সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত আছে। আর তাই এই নতুন সরকার ব্যবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অং সান সু কির কোনো ক্ষমতা নেই। অং সান সু কি দীর্ঘকাল গণতান্ত্রিক সংগ্রামে ব্যাপৃত অবস্থায় রোহিঙ্গাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতির বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি এখন আর এই সমস্যাটিতে হাত দিতে পারছেন না। তিনি সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকে তার অবস্থান থেকে বিষয়টি সমাধানে তৎপর রয়েছেন। জাতিসংঘের প্রয়াত মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তা গণতান্ত্রকামী সু কির উদ্যোগেই হয়েছে। কাজেই তাকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য দোষারোপ করা অযৌক্তিক এবং সে কারণ দেখিয়ে তার বিভিন্ন সম্মাননা কেড়ে নেওয়ার বিষয়টিও অযৌক্তিক। সারা মিয়ানমারে অং সান সু কিই একমাত্র গণতান্ত্রিক নেত্রী যিনি এই সমস্যা সমাধানে আলোর পথ দেখাতে পারেন।
মিয়ানমার সরকার ও অং সান সু কির সঙ্গে জাপানের গভীর ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক হলো আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক। তাছাড়া মিয়ানমার সরকারের ক্ষমতার উৎস সামরিক জান্তার সঙ্গেও জাপানের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই আস্থা ও বিশ্বাসের এই সম্পর্কটিকে কাজে লাগিয়ে জাপান সমস্যাটি সমাধানে তৎপর রয়েছে এবং এই তৎপরতা সমাধান খুঁজে বের করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
উপসংহার
রোহিঙ্গা সমস্যাটি উৎসরিত হয়েছে আগ্রাসী বর্মী সামরিক জান্তা অনুসৃত রাষ্ট্রনীতি থেকে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না করে জিইয়ে রাখলে অথবা সামরিক শক্তি প্রয়োগে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাধ্য করা হলে সে সমাধানটি টেকসই সমাধান হবে না। কাজেই কূটনৈতিক পথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে, সে সমাধান হবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও টেকসই। আর এই সমস্যাটি জিইয়ে রাখা হলে অথবা সামরিক শক্তি প্রয়োগে সমাধান করা হলে, তা বিশ্ব পরিস্থিতিতে নিদর্শন হিসেবে রয়ে যাবে এবং বিশ্বজুড়ে এই ধরনের নৃশংস ঘটনা ও তার পরম্পরার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। কাজেই কূটনৈতিক পথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যাটির সমঝোতাপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত।
[রোহিঙ্গা সমস্যায় জাপানের অবস্থানের বিষয়টি গত মাসে নিহোন টেলিভিশনের একটি সংবাদ পর্যলোচনা অনুষ্ঠানে উঠে আমে, যারা জাপানি ভাষা বুঝেন তারা বিষয়টি ইউটিউবে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন: https://www.youtube.com/watch?v=ZCavjcNgHZQ]
লেখক
ড. এ বি এম রেজাউল করিম ফকির
অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯
এইচএ/