ক] আমাদের বাংলা নববর্ষে অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ঐতিহ্যবাহী হালখাতার প্রচলন আছে। কিন্তু ইংরেজি নববর্ষে তা না থাকলেও পেছনে ফেলে আসা পুরনো বছরটিকে টা-টা দিয়ে নতুন বছরটিকে স্বাগত জানায় উৎসব মুখরিত মহা ধুমধামের মাধ্যমে।
খ] এদিকে বিপুল উৎসাহ আর আতশবাজির মাধ্যমে কানাডাবাসীও ২০১১কে বিদায় দিয়ে ২০১২ ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানালো। মধ্যরাতে উৎসবে মুখরিত পরিবেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দিনটিকে বরণ করে নেয়। এ উপলক্ষ্যে কন্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন এবং এন্ড্রো কিশোর মন্ট্রিয়ল ও টরন্টোতে সঙ্গীত পরিবেশন করে উৎসবে নতুন মাত্রা যুক্ত করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আত্ম-সালতামামিতে ভাবছি- কি পেলাম, কি হারালাম? নিজস্ব খেরো খাতায় হিসাব মেলে না। অঙ্কে আমি সারা জীবনই কাঁচা। কখনো টাকা ঠিক মতো গুণতে পারি না। ১০০ টাকা তিন বার গুণলে চার রকমের রেজাল্ট পাই।
তাই জীবনের হিসেবও একই রকম। তবু ২০১১-এর কথা ভাবছি বার বার। বছরটিতে কাছের মানুষগুলো অনেক দূরে চলে গেলেন। যেমন- কবির চৌধুরী, রশীদ করীম, মিশুক মুনীর, তারেক মাসুদ, মল্লিকা সেনগুপ্ত। বছরটিতে চাকরি হারালাম। আর হলাম দ্বৈত নাগরিক। নতুন করে যুক্ত হলাম দৈনিক ইত্তেফাকের সাথে। প্রাণ ভরে লিখে তৃপ্তি পেলাম বেঙ্গলি টাইমস আর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে। সারা বছর কাজ করলাম ‘কানাডায় যাবেন, কেনো যাবেন’ বইটি নিয়ে। আর বছরের শুরুটা হলো- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে। এবং কৈশোরের বন্ধু চম্পক বিহারী রাউথ ওরফে লেবুর টরন্টোর বাইরে ওশোয়ার বাসায় সারা দিন কাটলো সপরিবারে আড্ডায়-আনন্দে!
আমার মতো প্রতিটি প্রবাসীই এভাবে সালতামামি ২০১১ করে গত বছরের আত্মসমালোচনা করতে পারেন। কারণ, দ্বৈতস্বত্বায় কানাডিয়ান-বাংলাদেশিরা দ্বৈত নাগরিক হিসাবে সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারেন।
গ] কানাডা এখন নানা কারণেই বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কিত। যেমন- বঙ্গবন্ধু হত্যার সাজাপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরীর অবস্থান। তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন চার চার বার প্রত্যাখান হয়। কিন্তু আইনগত জটিলতায় কানাডা তাকে ফিরিয়ে দিতে নারাজ। বাংলাদেশ নূরকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করে। ‘আদম-মন্ত্রী’ খন্দকার মোশারাফ হোসেন ছেলের বাড়ি ঘুরে গিয়ে মিথ্যাচার করে বললো- ‘কানাডা কৃষিশ্রমিক নেবে’। সেই সুযোগে দেশে এক শ্রেণীর আদম ব্যবসায়ী ‘বাণিজ্য’ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতিত রুমানা মঞ্জুর ভ্যাঙ্কুভারে আশ্রয় পান। কিন্তু তার স্বামী জেলহাজতে মৃত্যুর পর এখন রুমানা বিতর্কিত হয়ে উঠছেন। টরন্টোর প্রতারক মঞ্জুর মুরশেদ খানের দুই মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করে কানাডা থেকে পালিয়ে যায়। খবরে প্রকাশ, জেল হত্যার অন্যতম আসামি মেজর খায়রুজ্জামানের মন্ট্রিয়লে আগমন নাকি প্রবাসীদের মধ্যে আলোচিত হয়।
এসব ঘটনা ছাড়াও টেংরাটিলা তেল উত্তোলনে দুর্নীতির কারণে নাইকো কোম্পানিকে জরিমানা আর পদ্মাসেতু নির্মাণে নাভানা কোম্পানি কর্তৃক ঘুষ প্রদানের খবর দু’দেশেইর জন্যই বিব্রতকর। এই দু’টি কানাডিয়ান কোম্পানির পর সর্বশেষ আলোচনায় আসে কানাডার আরেক কোম্পানি ভিজ্যুয়াল ডিফেন্স। দেশের প্রধান বিমানবন্দর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের দায়িত্ব পেয়েছিলো বহুল বিতর্কিত ভিজুয়াল ডিফেন্স ইনকরপোরেশন। পরে বাধ্য হয়ে পিছু হটে-বিতর্কিত কোম্পানি ভিজ্যুয়াল ডিফেন্স।
আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ডারবান জলবায়ু সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে কিয়োটো প্রটোকলে থেকে বেরিয়ে গেলো কানাডা। অপর দিকে, বিজয়ের ৪০ বছর উপলক্ষে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য কানাডার প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোকে বিশেষ সন্মাননা দেওয়া হয়। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে কানাডায় এসে একমাত্র কন্যা ও নাতি-নাতনির সান্নিধ্যে সময় কাটান।
এভাবেই বিগত বছরে ভালোমন্দে কানাডা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় বাংলাদেশের কাছে। দেখা যাক, আগামী দিনগুলোতে কানাডা-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আর বন্ধুত্ব কোন দিকে গড়ায়।
বাংলাদেশ সময় ১৪২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১২