করোনা ভাইরাস একটি হুমকি হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে বিল গেটস তার মতামত প্রদান করেন বলেন যে, তিনি এবং তার সহকর্মীরা চান না ‘এতো বেশি সংখ্যক মানুষ আরোগ্যলাভ করুক’, যারা প্রাকৃতিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করছে। এর বদলে তারা আশা করছেন যেন সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিন এবং অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়।
আপত্তিকরভাবে, গেটস এও সুপারিশ করেন যে, লোকজনের থাকুক একটি ডিজিটাল আইডি, যেটি তার ভ্যাক্সিনেশন স্ট্যাটাস নির্দেশ করবে এবং এই ‘ডিজিটাল সংক্রমণ মুক্ততার প্রমাণবিহীন’ লোকজনকে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। এই ধরনের একটি উদ্যোগের মানে, টিকা (ভ্যাক্সিন) উৎপাদনকারীদের জন্য বিশাল অংকের মুনাফা।
২৪ মার্চে বিল গেটস ক্রিস এন্ডারসনের কাছে ৫০ মিনিটের (নিচে) একটি অত্যন্ত খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এন্ডারসন হলেন ‘টেড’ (ঞঊউ) নামক একটা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক, যারা ‘টেড টক’ নামে একটা টক শো অনুষ্ঠান পরিচালনা করে।
গেটসের সাক্ষাৎকারটি কোভিড-১৯-এর ওপর ‘টেড কানেক্ট’ নামের একটি নতুন ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব, যা উক্ত টক শো সিরিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত।
https://www.youtube.com/watch?time_continue=155&v=Xe8fIjxicoo&feature=emb_logo
টেড কানেক্টস: ‘সম্প্রদায় এবং প্রত্যাশা’ শীর্ষক টক শোটি হলো খোলামেলা এবং সরাসরি দৈনন্দিন আলাপচারিতার একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান, যেখানে সেইসব বিশেষজ্ঞদের উপস্থাপন করা হয়, যাদের দৃষ্টিভঙ্গী এই অনিশ্চিত সময়ে আমাদেরকে দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে ধৈর্য্য ধরে বিজ্ঞতার সাথে ভূমিকা রাখতে এবং কাজ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
এন্ডারসন গৃহীত বিল গেটসের ভিডিও সাক্ষাৎকারের ৩ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের মধ্যে-ততক্ষণে দর্শক-শ্রোতার সংখ্যা অতি দ্রুত তিন মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে-২৮ ফেব্রুয়ারিতে নিউ ইংল্যান্ডের একটি চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশিত বিল গেটসের ‘পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
সেখানে এন্ডারসন প্রশ্ন করেন, ‘আপনি লিখেছেন যে, এটি হতে পারে প্রতি একশ বছরে ঘটা এমন একটি মহামারি যাকে মানুষ ভয় পাচ্ছে, এটিকে কি আপনি এখনো তেমনটিই ভাবছেন?’
গেটস জবাবে বলেন, ‘যাহোক, এমনটি বলা দুঃখজনক, কিন্তু আমাদের একটি শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত ভাইরাস থাকতে পারতো, যার পরিণতিতে মৃত্যুহার এর চেয়েও বেশি হতে পারতো। যদি এটি হতো গুটিবসন্তের মতো, যা শতকরা ৩০ ভাগ মানুষের মৃত্যুর কারণ। তাই এটি ভয়ঙ্কর। ’ ‘কিন্তু বাস্তবে যাদের কোভিড-১৯ রোগ হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বেঁচে যেতে সক্ষম। সুতরাং সে ক্ষেত্রে এটি পুরোপুরি সংক্রামক-মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) যতটা ছিল, তার চেয়েও বেশি সংক্রামক। কিন্তু এটি ততটা প্রাণনাশক নয়, যতটা সেগুলো ছিল। তবুও এটিকে দূর করার উদ্দেশ্যে আমরা ভেঙে পড়ার যে অবস্থা দেখছি তা আসলেই পুরোপুরি নজিরবিহীন। ’
সাক্ষাৎকারের পরবর্তী অংশে বৈশ্বিক অর্থনীতির যে ভয়ানক পরিণতি হবে গেটস তা পুনরাবৃত্তি করেন।
সাক্ষাৎকারের ২৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের সময় গেটস বলতে শুরু করেন, ‘এই ব্যাপারে আমাদের একটি স্পষ্ট বার্তা থাকা দরকার। ’
‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, পরিণতিতে এর অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত নাটকীয়। আমি বুঝাতে চাচ্ছি যে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে এমনতরো ঘটনা আমাদের জীবদ্দশায় আর কখনও ঘটেনি। কিন্তু... অর্থনীতিকে ফিরিয়ে আনা, মানুষকে জীবনে ফিরিয়ে আনার চেয়ে অনেক প্রতিবর্তনসাধ্য। তাই আমরা যন্ত্রণাটাকে নিচ্ছি অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে, এক মারাত্মক যন্ত্রণা, মৃত্যু ও পীড়াজনিত যন্ত্রণাকে লাঘব করার উদ্দেশ্যে। ’
যাহোক, এটি সরাসরি প্রত্যেকটি অসুখের জন্য স্ক্রিনিং, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসাজনিত খরচ এবং উপকারের ভারসাম্যের বিরুদ্ধে যায়, যেমনটি বছরের পর বছর সফলভাবে প্রচারণার মাধ্যমে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বিজ্ঞতার সাথে বাছাইকরণ প্রচারণা, যা প্রত্যেক রোগী এবং পুরো সমাজকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেবে।
১ এপ্রিলে অফগার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ‘অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে কোভিড-১৯-এর চেয়েও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। ’
‘সমস্ত বিবেচনায় এই প্রতিক্রিয়ার প্রভাবটা হবে বৃহৎ, সুদূরপ্রসারী এবং দীর্ঘস্থায়ী’, কেভিন রায়ান ঐ প্রবন্ধে এমনটিই লেখেন। রায়ান অনুমান করেন যে, ‘লকডাউন’ এবং ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া ও অন্যসব কঠোর পদক্ষেপের পরিণতিতে কুড়ি লক্ষেরও বেশি মানুষ হয়তো মৃত্যুবরণ করবে।
কোটি কোটি মানুষ হয়তো আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি, চিকিৎসার অভাবে, দারিদ্র্য ও খাদ্যঘাটতি এবং সবকিছুর ওপরে অন্যসব ধারণাযোগ্য সামাজিক, চিকিৎসাজনিত এবং কোভিড-১৯-এর প্রতি সাড়া দিতে গিয়ে সৃষ্ট জনস্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে মারা যেতে পারে।
গেটস এবং এন্ডারসন ওইসব কোন পরিণতির দিকেই নজর দেননি। এর বদলে তারা নজর দিয়েছেন কোভিড-১৯-এর জন্য দ্রুতগতিতে বেড়ে যাওয়া পরীক্ষা ও চিকিৎসাজনিত হস্তক্ষেপের দিকে।
সাক্ষাৎকারের ৩০ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের সময় গেটস বলেন যে, তিনি একটি বৃহৎ দল নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছেন অ্যান্টি-ভাইরাল পরীক্ষা, ভ্যাক্সিন, অন্যান্য ভেষজের জন্য এবং সেগুলোকে দ্রুত বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে।
গেটস ফাউন্ডেশন এবং ওয়েলকাম ট্রাস্ট, মাস্টার কার্ড এবং আরও অনেকের সমর্থন নিয়ে আক্রান্তদের প্রয়োজন অনুসারে ভেষজ চিকিৎসা ত্বরান্বিত করার তালিকা করেছে। আপনার রয়েছে এগিয়ে আসার এবং বলার মতো শত শত লোক, ‘এটা চেষ্টা করুন বা ওটা’। তাই আমরা সবসময়ই ডায়াগনোস্টিক ল্যাবের দিকে তাকিয়ে থাকি এবং বুঝি সারা পৃথিবীর মানুষের ওপর দ্রুত পরীক্ষা চালানোর জন্য কোন্ বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।
ত্বরান্বিতকরণের উপাদানগুলো প্রায় ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বীজ অর্থায়নে (seed funding) চালু করা হয়।
এর তিনদিন পরে গেটস মাইক্রোসফট ছেড়ে দেন। এর খুব বেশি আগে নয়, জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে গেটসের সংগঠন ‘দি কোয়ালিশন ফর প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন’ (সিইপিআই) ঘোষণা করলো যে, তারা কোভিড-১৯-এর ভ্যাক্সিন উন্নত করতে তিনটি প্রোগ্রামে অর্থায়ন করবে। এগুলো হলো মার্স এবং লাভা ফেভারের বিরুদ্ধে ডিএনএ-ভ্যাক্সিন কেন্ডিডেট উন্নত করা, ‘মলিউকুলার ক্ল্যাম্প প্ল্যাটফর্ম’ উন্নত করা, যা টার্গেটেড প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে এবং দ্রুত বহুমুখী ভাইরালের বিরুদ্ধে দ্রুত ভ্যাক্সিন উৎপাদন সক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং কোভিডের বিরুদ্ধে একটি এমআরএনএ (সজঘঅ) ভ্যাক্সিন তৈরি এবং ফেজ-১ পর্যবেক্ষণ করা।
‘প্রোগ্রামগুলো দ্রুতই সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে সিইপিএল এবং নতুন অংশীদারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা সমর্থিত প্ল্যাটফর্ম খুঁজে নেবে। লক্ষ্য হলো, যত দ্রুত সম্ভব এনকভ-২০১৯-এর (nCoV-2019) ভ্যাক্সিন পরীক্ষাপ্রার্থীদের ক্লিনিকাল পরীক্ষার স্তরে এগিয়ে নেওয়া। ’
তারপর ভিডিও সাক্ষৎকারের ৩২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের সময় এন্ডারসন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আক্রান্তদের চিকিৎসা করার জন্য কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে আরোগ্যপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির রক্তের সিরাম ব্যবহার করা হবে কিনা। ’ এন্ডারসন বললেন, ‘আমি শুনেছি আপনি উল্লেখ করেছেন যে, যেসব লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আরোগ্যলাভ করেছে, তাদের রক্তের সিরাম ব্যবহার করে চিকিৎসা করার একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই আমি অনুমান করছি তারা হয়তো অ্যান্টিবডি বহন করছেন’; ‘এ ব্যাপারে কিছু বলুন এবং কিভাবে তা কাজ করতে পারে ও সেটাকে ত্বরান্বিত করতে কী ভূমিকা রাখতে পারে। ’
[লক্ষ্য করুন যে, যারা এই সংক্রমণ থেকে মারাত্মক রোগে ভুগে কোয়ারেন্টিনে আছেন তাদের বাদ দিয়ে অন্য সব মানুষকে কোভিড-১৯-এর কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং এর ফলে আরোগ্যলাভ ও জীবনব্যাপী প্রতিরোধমূলক ক্ষমতা অর্জন সম্পর্কে এন্ডারসন গেটসকে এ সম্পর্কে কোন প্রশ্নই করেননি। প্রায় নিরানব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে (কোভিড-১৯-এর) সাধারণ মানুষের সংক্রমণ হয় মৃদু এবং তাদের আরোগ্য লাভ করতে চিকিৎসার প্রয়োজনই পড়ে না। ]
এটি সবসময়ই আলোচিত হয়েছে যেমন, ‘কীভাবে আপনি এটিকে দূর করতে পারেন?’ গেটস জবাব দিলেন, ‘তাই, যেসব লোকজন আরোগ্য লাভ করেছে, মনে হয় তাদের রক্তে সক্রিয় অ্যান্টিবডি রয়েছে। সুতরাং, আপনি শ্বেতকণিকা মানে প্রতিরোধমূলক কণিকাগুলো বের করে আনতে পারেন এবং সেগুলো সংক্রমিত রোগীর দেহে সঞ্চারিত করতে পারেন। ’
যাহোক গেটস চালিয়ে গেলেন, ‘আমরা যে ওষুধটা বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করতে পারি তার তুলনায় এটি ভীষণ জটিল। আপনি জানেন এটা বের করে আনা এবং প্রতিস্থাপন করার খরচের পরিমাণও অত্যধিক। ’ আর সেজন্যই তিনি এবং তার সহকর্মীরা সেই সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন।
এর কয়েক সেকেন্ড পরেই ৩৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের সময় গেটস আরেকটি বোমা ফাটালেন।
‘আমরা চাই না এতগুলো আরোগ্যপ্রাপ্ত মানুষ। [...] সুস্পষ্ট করে বললে, আমরা চেষ্টা করছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধের মাধ্যমে মোট জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ মানুষ সংক্রমিত না হোক। আমরা আজ তার চেয়ে অনেক নিচেই আছি। কিন্তু সূচক অনুসারে আপনি হয়তো দেখতে পারতেন কোভিড-১৯-এ সংক্রমিতের সংখ্যাটি তিন মিলিয়ন অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ ছাড়িয়ে গেছে এবং তার ভেতরে বিপুল সংখ্যক আরোগ্যলাভ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সেটি এড়াতে সমর্থ হবো অর্থনৈতিক ক্ষতির বিনিময়ে। ’
এটি মনে হচ্ছে যে, জনগণকে ভাইরাসটির কাছে উন্মোচিত করা এবং যা তাদেরকে দেবে কোভিড-১৯-এর স্বাভাবিক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধমূলক সবচেয়ে উন্নত অ্যান্টিবডি, তার বদলে গেটস এবং তার সহযোগীরা অপেক্ষাকৃত বেশি পছন্দ করছেন কোটি কোটি টেস্টিং কিট এবং এর সমান্তরালে কোটি কোটি অ্যান্টিভাইরাল ভ্যাক্সিন তৈরি ও বিক্রি করার ব্যাপক ব্যয়সাপেক্ষ একটি নতুন পদ্ধতি বাজারজাত করতে।
যখন এই ভাইরাসটি কয়েক মাস পরে আবার ফিরে আসবে এবং বেশির ভাগ মানুষ অরক্ষিত এবং এর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে, তখন কোটি কোটি টেস্টিং কিট ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম অবাধে বিক্রি করা যাবে।
ঠিক এর পরপরই ৩৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের সময় গেটস কিভাবে বিষয়টি চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকবে সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
‘এভাবেই আমরা পাবো এমন একেকজন মানুষ যারা ভাইরাস থেকে স্বাভাবিকভাবে আরোগ্যপ্রাপ্ত এবং যারা ভ্যাক্সিনগৃহীত, ডব্লিউএইচও কর্তৃক স্বীকৃত সনদপ্রাপ্ত। কারণ আপনি চান না এমন সব লোকজন পৃথিবী জুড়ে ঘুরে বেড়াক, যেখানে আপনার জানা আছে এমন কিছু দেশের কথা, যারা রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আপনি পুরোপুরিভাবে চান না লোকজনের সেইসব দেশে যাওয়া এবং সেখান থেকে ফিরে এসে যত্রতত্র চলাফেরা করার সক্ষমতাকে নাকচ করে দিতে। তাই তার জন্য প্রয়োজন পড়বে ডিজিটাল ইমিউন প্রুফ যা পৃথিবীকে অবাধ করে দিতে সুযোগ করে দিবে। ’
[৩১ মার্চ বিকেলের কোন একসময় সাক্ষাৎকারের এই উদ্ধৃতাংশটি অফিসিয়াল টেড ভিডিও থেকে এই শেষ বাক্যটি মুছে দেওয়া হয়। সৌভাগ্যবশত সাক্ষাৎকারের পুরো ভিডিওটি অন্যত্র সংরক্ষিত ছিল। ]
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, দি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এবং জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের একটি বিভাগ সমন্বিত সৌজন্যে নভেল করোনা ভাইরাসজনিত মহামারির মহড়া, ‘ইভেন্ট-২০১’-এর একটি অংশ হিসেবে এক ভোটাভুটিতে দেখানো হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষ কোভিড-১৯-এর জন্য ভ্যাক্সিন গ্রহণ করতে প্রস্তুত, যদিও এটি হবে পরীক্ষামূলক। এটি হবে বিস্ময়করভাবে ভীষণ আকর্ষণীয়।
ভ্যাক্সিন থেকে হবে বড় ব্যবসা। উদাহরণস্বরূপ এই ২৩ ফেব্রুয়ারির সিএনবিসির প্রবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ভ্যাক্সিনের বাজার ২০ বছর আগের তুলনায় ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে বার্ষিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি এবং তাতে ১ ডলার বিনিয়োগ করলে পৃথিবীর সবচেয়ে কম আয়ের দেশগুলো থেকেও ৪৪ ডলার ফেরত পাওয়া যাচ্ছে।
লক্ষণীয় যে, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, যার রয়েছে ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ। ২০১৭ সালের পলিটিকোর একটি প্রবন্ধ অনুসারে ২০০০ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কে দিয়েছে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। (যখন একই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ এই সংস্থাকে প্রদত্ত অনুদানের পরিমাণ ২০০৮-২০০৯ পরবর্তী মন্দার কারণে হ্রাস করেছে এবং এখন তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক বাজেটের এক-চতুর্থাংশ মাত্র)। ডব্লিউএইচও এখন সারা বিশ্বের ৫০টি গ্রুপের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে, যার দাবিদার হিসেবে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিন তৈরির কাজ করছে।
পলিটিকোর প্রবন্ধে জেনেভাভিত্তিক একটি এনজিওর প্রতিনিধিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, গেটসকে শুধু ডব্লিউএইচওতেই নয়, এমনকি জি-২০তেও একটি দেশের প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইতোমধ্যে, পৃথিবী জুড়ে কর্মকর্তারা প্রত্যেকের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সেলফ আইসোলেশন অথবা লকডাউন কার্যক্রমে তাদের স্ব স্ব ভূমিকা পালন করছে।
উদাহরণস্বরূপ, এখানে তুলে ধরা হলো ৩০ মার্চে টরন্টোর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ডাঃ এলিন ডি ভিলা এবং টরোন্টোর মেয়র জন টোরির প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
‘আমরা এখন আছি একটি বিশ্বজনীন মহামারির মধ্যে। আমাদের আশা করা উচিত যে, আরো কিছু লোক অসুস্থ হবে এবং তাদের কেউ কেউ দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করবে। এই কারণে বাসায় অবস্থান করাটা ভাইরাস সংক্রমণ হ্রাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য যেসব প্রথম সারির কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং অপরাপর জরুরি বিভাগের কর্মীরা কাজ করছে, তাদেরকে রক্ষা করার জন্য যাতে তারা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। আমাদের দেখাশুনা করার জন্য সেসব লোকজনের মরার কোন প্রয়োজনই নেই বা মৃত্যুর ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। কারণ অন্যরা সামাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছে না। ’
লক্ষ্য করুন অন্টারিওর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডঃ ডেভিড উইলিয়াম, হ্যালি কাজান, সিনিয়র ম্যানেজার, ক্রিস্টাইন এলিয়টের মিডিয়া কর্মী, সহকারী প্রধানমন্ত্রী ও অন্টারিও’র স্বাস্থ্যবিষয়ক মন্ত্রীর কতটা কাছাকাছি বসে আছেন।
এটি ঘটেছিল ২৭ মার্চ শুক্রবার দিনের কার্যক্রম শুরুর ঠিক আগে ডঃ উইলিয়াম এবং অন্টারিওর স্বাস্থ্যবিষয়ক সহযোগী মেডিকেল অফিসার ডঃ বারবারা ইয়ালফির প্রাত্যহিক প্রেস কনফারেন্সে। তারা বসেছিলেন দুটি সিটে মাত্র দুই ফুট ব্যবধানে। কিছুক্ষণ পরই কাজান নিজ আসন থেকে উঠে ডঃ উইলিয়ামের আরো কাছাকাছি দাঁড়ালেন।
ডঃ উইলিয়াম এবং কাজান একসাথে বসবাস করেন না। বরং ডঃ উইলিয়াম ভালোভাবেই জানেন-ঠিক যেমনটা গেটস জানেন-অন্য মানুষের এতো কাছাকাছি আসার ফলে দুশ্চিন্তা করার মতো সামান্য ব্যাপারই আছে, যদি আপনি অথবা অন্যরা কোভিড-১৯ দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত না হয়ে থাকেন। তিনি নিশ্চয়ই এটাও জানেন যে, যদি আপনি কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হন এবং আপনার স্বাস্থ্য অন্যসব দিক থেকে ভালো থাকে, তবে আপনার মধ্যে কোন উপসর্গ দেখা যাবে না এবং আপনি শিগগিরই সেরে উঠবেন। এ ধরণের উন্মোচন বাস্তবে উপকারী। কারণ, এই প্রক্রিয়ায় আপনি আপনার শরীরে এই রোগের অ্যান্টিবডি বিকশিত করতে সক্ষম হবেন এবং দীর্ঘস্থায়ী এক প্রাকৃতিক প্রতিরোধক তৈরি হবে।
তবুও কোভিড-১৯-এর সংকটকালে অংশগ্রহণ করা অন্যসব প্রেস কনফারেন্সের মতই ২৭ মার্চের কনফারেন্সেও ডঃ উইলিয়াম জনগণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আসন্ন উইকএন্ডের চমৎকার আবহাওয়া উপভোগ করার জন্য সকলকে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, তাতে তারা এমন কাউকে পেরিয়ে যেতে পারেন, যার সাথে দুই মিটার দূরত্ব রক্ষা করা হবে না।
ডঃ উইলিয়াম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রীয় একটি বড় ক্যাডারের অন্যতম, যিনি জবরদস্তিমূলক ও মারাত্মক সামাজিক দূরত্বরক্ষা ও লকডাউনের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বলপ্রয়োগে বন্ধ করার মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতি তছনছ করে দিয়েছেন।
তারা সমাজকে তছনছ করে দিয়েছেন, সকল স্বাধীনতা জব্দ করেছেন এবং সকল কাজ ও যোগাযোগকে নিষিদ্ধ করেছেন, যা মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাস্থ্যবান রাখে। একই সাথে কর্মকর্তারা অন্য সবকিছুর উপরে কোভিড-১৯-কে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এর ফলে চিকিৎসা থেকে শুরু করে রক্ত পরিবহন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও ক্যান্সার সার্জারির মতো ক্ষেত্রগুলোতে কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারকে মারাত্মকভাবে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন।
লেখক: