‘রোগে মরার হলেও একা মরব, সবাইকে তো বাঁচিয়ে মরি’, তা ভেবে হয়তো বের হচ্ছেন। কিন্তু তাতেও কী তাদের বউ-বাচ্চাদের কপালে কিছু জুটছে? হাতে কাজ নেই।
কথায় আছে, ‘যারে মারতে পারব না হাতে, তারে মারব ভাতে। ' কয়েক মাস ধরে করোনা ভাইরাস মূলত এই তাণ্ডবই চালাচ্ছে। যাকে কাছে পাচ্ছে, তাকে রোগ দিয়ে ধরছে, যাকে পাচ্ছে না, দারিদ্র্য সুযোগে অনাহারে মারছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার দুটোই ফলছে। বাইরে গেছেন রোজগারে বা কিছু আনতে, আর এমনি সংক্রমিত হয়েছেন, এমন অনেক লোক আছেন, প্রায়ই তো খবরে পড়ছি।
সময় যে খুব খারাপ যাচ্ছে খেটে খাওয়া কর্মহীন, অসহায়, দরিদ্র এবং আমাদের প্রতিবেশীদের, সেটা হয়তো কথাগুলোয় ভালো করে বোঝানো সম্ভব হয়নি। তাই বলছি, পাড়ায় পাড়ায় হাঁটুন। কান পেতে শুনুন। দেখবেন, শুনবেন, মানুষগুলো কেমন যেন হয়ে গেছে। না পারছে ভিক্ষা করতে। না পারছে ক্ষুধা সইতে। হাহাকার করছে। তবে হ্যাঁ, লজ্জার মাথা খেয়ে তারা কিছু চাইছেন।
আমি তো প্রতিদিনই শুনছি, ঢাকার গলিগুলোতে তারা হাঁটছেন, আর দালান-কোঠা দেখে দেখে চিৎকার করে বলছেন, ‘ও খালাম্মারা, ঘরে কোনো খাবার নেই, কোলের বাচ্চা পর্যন্ত না খেয়ে, কিছু দেন। একটু দয়া করেন। আমরা অসহায়। আয়-রোজগার নেই’। এই তো গতকাল সকালেও তো শুনলাম ঠিক এভাবে।
কতটুকু কষ্টে দিন পার করলে মানুষ এভাবে সাহায্য চাইতে পারেন, সে না হয় যার যার বিবেচনায়। কিন্তু আমি কখনও এমন দেখিনি বয়সে। শুনে কলিজাটা কেমন জানি করে। মনে হয়, যা আছে সব দিয়ে দিই।
অবশ্য সরকার চেষ্টার কমতি রাখছে না। ঘরে ঘরে খাদ্য দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছে। নগদ টাকাও দিচ্ছে। আবার বিত্তশালীদেরও এগিয়ে আসতে বলছে। দেশব্যাপী ১০ টাকা কেজি খোলা বাজারে বিক্রির (ওএমএস) চাল, বিভিন্ন প্রকল্পের ত্রাণ এবং ৫০ লাখ পরিবারে নগদ আড়াই হাজার করে টাকা বিতরণ করছে। কিন্তু! তাহলে প্রশ্ন এ দুরবস্থা কেন।
কঠিন কোনো প্রশ্ন নয় এটা। খবরের কাগজ, অনলাইন নিউজপোর্টাল, টেলিভিশন খুললেই উত্তর পেয়ে যাবেন। কত রকম কৌশল আছে চুরির, সবই দেখাচ্ছেন সেসব জনপ্রতিনিধি, যারা তৃণমূলে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে। অবশ্য সবাই না।
দেশের এই সংকটে অনাহারিদের জন্য কিছু করুন। অসহায় কেউ চাইলে ফিরিয়ে না দিয়ে কিছু হলেও দিন। ভুলে যাবেন না মানুষ মানুষের জন্য।
লেখক: সংবাদকর্মী
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০