একটি ঐতিহাসিক দিনে পরিণত হলো ৫ জানুয়ারি। কারণ এদিন বাংলাদেশে প্রথম বারের মত সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে(ইভিএম) কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অন্যদিকে গত ২৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকেও বিএনপি সরে দাঁড়ায় নির্বাচনের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে। ফলে দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার কুরবানির শিকার হন। দলমত নির্বিশেষে সচেতন সবাই মনে করেন। নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই শক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার সহজেই বিজয়ী হতেন। সচেতন মহলের প্রশ্ন ইভিএম’র কারণে যদি বিএনপি নির্বাচনে নাই যাবে, তবে কেন নাসিকে প্রার্থী দেওয়া হলো? কেন কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সপ্তাহব্যাপী প্রচার করলেন?
গণমানুষের দাবি বিএনপি যদি রাজনৈতিক কারণে ইভিএম’র বিপরীতে অবস্থান নিয়ে ৭ দিন আগেও অ্যাডভোকেট তৈমুরকে দল থেকে বহিষ্কার করতেন তবেও বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী হিসাবে বিপুল ভোটে তৈমুরই জয়ী হতেন। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের ব্যর্থতায় জনগণ বিএনপিকে ভোট দিতে উন্মুখ হয়েছিল। নাসিকও কুসিকের মতো বিএনপির হতো। নারায়ণগঞ্জবাসীর মতামতের পালে হাওয়া লাগল বৃহস্পতিবার কুমিল্লার নির্বাচনের ফলাফল দেখে।
কারণ মনিরুল ইসলাম সাক্কুর বিরুদ্ধে কুমিল্লা পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন দুর্নীতি, এরশাদ ও বিএনপি সময়ে জমি দখল, খুন ও সন্ত্রাসের ব্যাপক অভিযোগ থাকার পরেও তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা আমাদের স্পষ্ট ধারণা দেয় নাসিক নির্বাচনে তৈমুর কত ভোটে বিজয়ী হতেন!
কারণ এই ভোট সাক্কু কিংবা তৈমুরের ছিল না। ছিল শহীদ জিয়ার আদর্শের ভোট, খালেদা জিয়ার আপোসহীনতার ভোট এবং আওয়ামী লীগের প্রতারণায় সর্বশান্ত আম জনতার ভোট ও বাকশাল বিরোধীভোট।
যদি ধরে নিই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে দলীয় কর্মীদের কুরবানি দিচ্ছে। তারপরও কথা থেকে যায়, বর্তমানে আওয়ামী লীগের শাসন আমলের ৩ বছর শেষে নির্বাচনী পরিবেশ বিএনপির পক্ষে থাকায় দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও প্রত্যেকটি সিটি নির্বাচনে বিএনপির উচিত নেপথ্যে থেকে হলেও প্রার্থী দেয়া। কারণ আওয়ামী লীগের আমলে কিংবা ইভিএম‘র নির্বাচনে নির্বাচিত নাসিক, কুসিক অথবা ডিসিসি কোনও মেয়রকেই অস্বীকার করার উপায় থাকবে না বিএনপির সামনের দিনগুলিতে।
সাক্কুকে লাল সালাম তার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের জন্য। তিনিও যদি তৈমুরের মত দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেন, তবে আজকে তিনি ইতিহাসের অংশ হতে পারতেন না। তৈমুরের কুরবানি দেখেই সাক্কু সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন তার পরিণতি কি হবে? তাই তিনি স্ব-ইচ্ছায় বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ইচ্ছা থাকার পরেও কুমিল্লায় বিএনপির দলীয় সব নেতাকর্মী দলীয় বিধি নিষেধের কারণে প্রকাশ্যে সাক্কুর পক্ষে কাজ করতে না পারলেও তারা ঠিকই আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন এবং সাক্কুর জন্য নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন। ফলে বিএনপিকে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে থাকা জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে সাক্কুকে বিজয়ী করতে পেরেছেন।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের ব্যাপারটা ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। কুমিল্লা বাধা থাকার পরেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা নেপথ্যে থেকে সাক্কুর পক্ষে সত্যিই মন থেকে কাজ করেছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কতিপয় শীর্ষ নেতার আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের কারণে তারাই কেন্দ্রীয় বিএনপিকে নেগেটিভ মেসেজ পাঠিয়ে তৈমুরকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কারণ নারায়ণগঞ্জের সাধারণ জনগণ ও বিএনপি তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করেন বেগম খালেদা জিয়া নাসিক জয়ের জন্যই প্রার্থী দিয়েছিলেন। তিনি যদি নাই চাইতেন তবে তিনি ৭ দিন আগেই প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিতে পারতেন অথবা প্রার্থী দিতেন না। এটাই বিএনপির নেতাকর্মীদের বিশ্বাস।
দেশ স্বাধীন হবার পরে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির মনোনীত কোনও ব্যক্তি চেয়ারম্যান হতে পারেনি। এবারই সবচেয়ে ভাল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তাও ভেস্তে গেল নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কয়েকজন তথাকথিত শীর্ষ নেতার মোনাফেকির কারণে।
আবারও লাল সালাম মনিরুল ইসলাম সাক্কুকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের দৃঢ় বিশ্বাস তিনি দুই এক দিনের মধ্যেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলে ফিরে আসবেন এবং আওয়ামী বাকশালের পতনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
লেখকঃ-
মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ
-১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, নাসিক।
-সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল
-০১৭১৭১৭৮২৪২
E-mail: [email protected]
www.jubodal-bd.com
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১২