আমি শুধু ভিডিও করতাম তা নয়, আমি তার প্রতিটি বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ স্যার, তখন তিনি মন্ত্রী ছিলেন না।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এসেছিলেন হাজী সংগ্রহের ব্যাপারে মিটিং করতে। এই অনুষ্ঠানে সর্বশেষ দেখা। এরপর করোনায় সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে আর দেখা হয়নি। কিন্তু গত ১৩ তারিখ রাত পেরিয়ে ১৪ তারিখ রাত ১২টা ৫ মিনিটে ফোন আসে, ফোনটা ছিল সহকর্মী ফারজানার। বললো, মন্ত্রী মহোদয় আর নেই, ১০ মিনিট আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সেদিন রাতে আর ঘুমোতে পারিনি। ঘুম আসে নাই। এমন কপাল করোনার জন্য শেষ দেখা হলো না। যে মন্ত্রী মহোদয় ইসলামের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার এমন আকস্মিক মৃত্যু এখনো মেনে নিতে পারছি না। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের আচরণে মনে হতো, তিনি একজন সাধারণ মানুষ। অথচ এই গুণী ব্যক্তিত্ব উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেছেন, যা না বললে নিজেকে অপরাধী মনে হবে।
মরহুম আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ এর নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিক। তিনি আমৃত্যু জাতির পিতার আর্দশকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশসেবা করার লক্ষ্যে চাকরির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তার নেতৃত্বে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মরহুম আলহাজ শেখ মো. আব্দুল্লাহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি গোপালগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচিত সাংসদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলেম ওলেমা, পীর মাশায়েখদের সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কাওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত হাজার হাজার ছাত্র/ছাত্রীর শিক্ষাগত সনদের সরকারি স্বীকৃতির বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পবিত্র মসজিদুল হারাম শরিফ ও মসজিদে নববী শরিফের ইমামগণ বাংলাদেশ সফর করেন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পরই তিনি মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন দপ্তরসমূহের সকল কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রদান ও তা বাস্তায়ন করেন। তিনি হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার একান্ত চেষ্টায় রাজকীয় সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি, সৌদি আরবেব হাজীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং হজযাত্রীদের সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
লেখক: চিত্রগ্রাহক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন