স্যার একজন কর্মবীর মানুষ ছিলেন। তিনি সর্বদা লক্ষ্যে স্থির ও অবিচল থাকতেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। স্যার আমার সাথে প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক স্মৃতিচারণ করতেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। কর্মজীবন তিনি বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন দীর্ঘ সময়। আমি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাকে বিবিএসের কল্যাণে অনেক ভালো পরামর্শ দিতেন। আমার ভুলত্রুটিগুলো স্পষ্ট করে ধরিয়ে দিতেন।
তিনি অফিসার্স ক্লাব ঢাকার একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সক্রিয় সদস্য ছিলেন। জেআইসিএর অতি পরিচিত একজন নেতা ছিলেন। অফিসার্স ক্লাবে তিনি আমাকে প্রায়ই নিয়ে যেতেন। অনেক সময় যেতে চাইতাম না। স্যার বলতেন, আরে ভাই চলতো। আমার গাড়ি নিয়ে আবার চলে আসবে। বহু সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেছেন তিনি।
স্যার বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আমাকে ফোন করতেন। আমি কোনদিন আগে ফোন দেওয়ার সুযোগ পাইনি। যেখানে অনেক সদস্যকে ফোন দিতে দিতে ক্লান্তি চলে আসে। স্যার ফোন দিয়ে বলতেন, ছোট ভাই কোন আয়োজন আছে? আমি কয়টার সময় থাকবো? স্যার আমাদের সাথে হাজার হাজার স্মৃতি রেখে গেছেন। স্যার, ক্ষমা করবেন আমাদের। আপনার অনেক সুপরামর্শ ও নির্দেশনা প্রতিপালন করার সক্ষমতা যে ছিল না আমাদের! আপনার মনে অনেক কষ্ট রয়েই গেলো।
কোন সিনিয়র নিজ থেকে আমাকে এতো আন্তরিকভাবে ভালো পরামর্শ দেবে? কে আমাকে অফিসার্স ক্লাবে নিয়ে যাবে? কে আমাকে বিভিন্ন দিবসে ফোন করবে? কে আমাকে ছোট ভাই বলে সম্বোধন করে এতো কাছে টানবে? আজ সব কিছুই স্মৃতি হয়ে গেলো! কিন্তু, আপনাকে ভোলা কি এতো সহজ স্যার?
বিবিএস অত্যন্ত আন্তরিক, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন অভিভাবককে হারালো। আর আমরা হারালাম অফুরন্ত ভালোবাসা। কীর্তিমানের মৃত্যু নাই! ভালো থাকবেন স্যার। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসীব করুন। আমিন।
(করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার মারা গেছেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কম্পিউটার উইংয়ের পরিচালক (যুগ্মসচিব) জাফর আহম্মদ খান। )
লেখক: বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক