ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

শেখ হাসিনার আমন্ত্রণেই ঢাকা আসবেন বাইডেন

পীর হাবিবুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
শেখ হাসিনার আমন্ত্রণেই ঢাকা আসবেন বাইডেন পীর হাবিবুর রহমান

ভারতে সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস জোট যখন লোকসভার নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি জোটের কাছে ইতিহাসের করুণ পরাজয়বরণ করল এখানে শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী একটি অংশ উল্লসিত হলো। যেন বিজয় তাদের ঘটেছে।

ক্ষমতায় আসা কেবল সময়ের ব্যাপার। আনন্দে সে কি আটখানাভাব নিয়ে একেকজনের কথাবার্তা এমন ছিল যে এবার শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির কূটনৈতিক সম্পর্ক শীতলতা থেকে সম্পর্কের অবসান হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তার উল্টো ঘটনা। গান্ধী পরিবারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঐতিহাসিক হৃদ্যতার সম্পর্ক যেমন অক্ষুণ্ন থাকল, তেমনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর শেখ হাসিনার বন্ধুত্ব কূটনৈতিক সম্পর্ককে উজ্জ্বল করে তুলল।

ঝলমলে বন্ধু দুই নেতার আসা-যাওয়া, চুক্তি এমনকি সবাইকে নিয়ে মনমোহন সরকার যে সীমান্ত চুক্তি শেষ করে যেতে পারেননি সেই বড় সমস্যাটি সমাধান করে দিলেন মোদী। প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যেন শেখ হাসিনার বোন হয়েছিলেন। পশ্চিম বাংলার মমতা তো দিদি বলে দৌড়ে আসেনই। রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রয়াত প্রণব মুখার্জি তো ছিলেনই। অমিত শাহের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ নাটক বিরোধীদের রাজনীতিতে ভাঁড়ে পরিণত করল। নিন্দুকেরা দ্রুত গালমন্দে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেন। আবার প্রণব মুখার্জির বৈঠক, নির্বাচনী ট্রেন বর্জন ও প্রতিরোধের নামে মিসই করলেন না, নিজেরাই নিজেদের কোমর ভেঙে ঘরে ও জেলে ঢুকে ওয়াকওভার দিলেন। তার পরের ইতিহাস সবার জানা। এখন গণআন্দোলন, সভা-সমাবেশের ক্ষমতা হারিয়ে নেতৃত্বহীন বিবৃতির বিভ্রান্তির স্রোতে তীরহারা।

যাক, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দুনিয়ার প্রতাপশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমেরিকার নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটের ৭৮ বছর বয়সী জো বাইডেন ক্যাসিনো বাজিকর থেকে রিপাবলিকানদের দ্বিতীয় দফা প্রার্থী হওয়া মাফিয়া রাজনীতিক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে পৃথিবীতে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। জীবনের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাজিক ঘটনা কোনো কিছুই হোয়াইট হাউস দখলের অভিযান থেকে তাকে ব্যর্থ করতে পারেনি। বয়সে ছোটরা প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়ার পর, দলীয় মনোনয়নে পরাজিত হওয়ার অতীতও তাকে দমাতে পারেনি। আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ বাইডেন এবার ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়নই জিতে নেননি, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তার রানিংমেট হিসেবে এশিয়ান বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসকে নিয়ে জয়ী হয়েছেন। সন্তান স্নেহে দেখা কমলাও একজন প্রখর মেধাবী সিনেটর যিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। বাইডেনও ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

এবারের নির্বাচনে করোনাকালেও জনগণ ব্যালট বিপ্লব ঘটিয়েছেন ভোটদানে বিপুল উৎসবের আনন্দে। বাইডেনের বিজয়ে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে ফিরে এসেছে। বিনয়ের সংস্কৃতি, আচরণে মেধায় ব্যক্তিত্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট  রাষ্ট্রনায়কের যে আদর্শ ঐতিহ্য ধারণ করেন সেটিই অব্যাহত থাকবে। দাম্ভিক উগ্র একলা চল নীতিতে পথ হাঁটা ট্রাম্পকে পরাজিত করে মার্কিন জনগণ প্রমাণ করেছে তারা আর ক্যাসিনো মোগলদের হোয়াইট হাউসে থাকার অনুমতি দিতে চান না। ট্রাম্প সেই দুর্ভাগা চারজনের একজন যারা দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। আব্রাহাম লিংকনকে বলা হয় আমেরিকার গণতন্ত্রের জনক। আকর্ষণহীন চেহারা, দারিদ্র্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠা, পদে পদে ব্যর্থতা নিয়ে সফল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। রাজনৈতিক জগতের দার্শনিক। তাকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্রের উক্তি আসে না। আব্রাহাম লিংকনের পর নানা হতাশা-বিষাদের গর্ত থেকে বের হয়ে বাইডেন এলেন বিশ্বরাজনীতির নায়কের আসনে। পৃথিবীর যেসব তরুণ থেকে মধ্যবয়সীরা হতাশা-বিষাদ-মানসিক অবসাদে পথ হারান তাদের জন্য লিংকন থেকে বাইডেন তো মহান অনুপ্রেরণাই নন, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচন্ড শক্তি। যিনি যৌবনে সিনেটর হয়েই স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে আত্মহত্যার পথে যেতে চেয়েছিলেন সেই বাইডেন আজ প্রেসিডেন্ট।

যাক, এখন সমালোচকদের প্রশ্ন বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক উষ্ণ না শীতল হবে। ঘরে ভাত না মিললে বিদেশে গিয়ে দুই দেশের কূটনীতিতে নাক গলিয়ে যে আরাম মেলে না সেটা অনেকের অভিজ্ঞতা হয়েছে। যারা নানা সময়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন তাদের টাকাটাও পানিতে গেছে। বাংলাদেশ এখন কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। অর্থনৈতিক বিনিয়োগে প্রতাপশালীদের আগ্রহের জায়গা। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও যে ’৭১ সালের নীতিতে নেই বহু আগেই জলের মতো পরিষ্কার। যেমন পরিষ্কার শেখ হাসিনা মুক্তবাজার অর্থনীতির নেতা।  ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে শেখ হাসিনার ’৯৬ সালেই উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। ওবামার সঙ্গেও ব্যত্যয় ঘটেনি। ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো এ দেশে এসে বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতেও ভোলেননি। বাইডেনের সঙ্গেও শেখ হাসিনার দেখা হয়েছে। শেখ হাসিনাও এখন ’৮০-’৯০ দশকের রাজনীতিবিদ নন। ট্র্যাজিক জীবনের বেদনা বয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের জীবনই তাঁর ইতিহাস। মৃত্যুকে পায়ের সঙ্গে রেখে অমিত সাহসের এমন টানা দীর্ঘ গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও ক্ষমতার রাজনীতি করার কৃতিত্ব বিশ্বরাজনীতিতে আর কারও নেই। প্রজ্ঞা মেধা দূরদর্শিতায় যেমন এগিয়ে তেমন তাঁর শারীরিক ফিটনেস বিস্ময়কর। কাজপাগল হাসিনা ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন। দৃশ্যমান কূটনীতির ঊর্ধ্বেও কূটনীতির যে পর্ব চূড়ান্ত হয় সেটি তিনিই করেন। কেউ যদি মনে করেন মোমেন-শাহরিয়ারের হাতে কূটনীতি তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করবেন। বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সম্পর্ক শপথের পরই ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হবে। আর হাসিনার একটি অনন্য সৌন্দর্যের শক্তি রয়েছে সেটি হলো কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও কাউকে আপন করে নেওয়া। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যখন পাশে দাঁড়ান তখন প্রশ্ন আসে- দুই প্রধানমন্ত্রী নাকি বড় বোনের স্নেহের ছায়ায় এসে শান্তিতে দাঁড়ালেন জাস্টিন ট্রুডো। কূটনৈতিক সম্পর্ক দুই দেশের মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্র স্বার্থের আদান-প্রদান, বিশ্বের সমস্যা সমাধানে ঘটে থাকে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা যেমন তার দেশের স্বার্থ দেখবে তেমনি জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা দেখবেন আমাদের স্বার্থ। এখানে সমঝোতার আন্তরিক কূটনীতির প্রয়োগে তিনি যেমন সফল হবেন তেমনি বাইডেনও সন্তুষ্ট থাকবেন। আর হ্যারিসকে শেখ হাসিনার বোনের মতোনই যে ছবিতে দৃশ্যমান হতে দেখা যাবে সেদিন বেশি দূরে নয়।

মার্চ মাসে জো বাইডেন ফরেন অ্যাফেয়ার নামের জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক জার্নালে লিখেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করবেন। এবং ২০২১ সালে তিনি সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নেতাদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবেন। যেখানে বিস্তর আলোচনা হবে। এ উদ্যোগ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য কেবল মার্কিন প্রেসিডেন্টই নন, বিশ্বনেতাদের সামনে তাঁর রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকার উজ্জ্বল দুয়ার খুলবে। শেখ হাসিনা জলবায়ু ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন। ট্রাম্প এখান থেকে নিজের মুখ ঘুরিয়ে নেন। বাইডেন জলবায়ু ইস্যুতে সোচ্চার হবেন বলেছেন। এখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিশাল বোঝা শেখ হাসিনা যেভাবে নিয়েছেন তাতে তাঁকে মাদার অব হিউম্যানিটি বলেছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। একজন দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে দেশে উন্নয়নের যে চমক দেখিয়েছেন তাতে জো বাইডেন প্রশাসন চমকে যাওয়ার কথা। করোনাকালেও জীবন ও জীবিকা রক্ষায় অর্থনীতি সচলে তাঁর ড্রাইভিং বিস্ময়কর। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ দমনে শেখ হাসিনার সাফল্য ভারতকেই অভিভূত করেনি, মার্কিন প্রশাসনকেও মুগ্ধ করেছিল। জো বাইডেন এ যুদ্ধে বিজয়ী শেখ হাসিনাকে কাছেই টানবেন।

বিশ্বের বৃহত্তম দুটি মুসলিম দেশের একটি বাংলাদেশ আরেকটি ইন্দোনেশিয়া। যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিদ্যমান। আর শেখ হাসিনা একদিকে ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তিযুদ্ধের শক্তি ও ইসলামপন্থি বিশাল অংশকে যেভাবে ভারসাম্যের নীতিতে নিয়ন্ত্রণে রেখে জঙ্গি উৎখাত করেছেন সেটি বাইডেনের মন কাড়বে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইবেন। মিয়ানমারের প্রতি আক্রমণাত্মক হননি। অষ্টম জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে রোহিঙ্গা নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে দুনিয়াকে মাশুল দিতে হবে। এর সমাধানে বাইডেন নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবেন।

বাংলাদেশের সাংবাদিক জগতের জনপ্রিয় নেতা শাবান মাহমুদ সেই কত বছর ধরে আমার আপন ছোট ভাইয়ের মতোন স্নেহ নিয়ে আছে। আদর্শ স্কুলশিক্ষকের সন্তান শাবান মাহমুদ ছাত্রলীগের পোড় খাওয়া কর্মী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল। শেখ হাসিনার প্রতি তার আবেগ-অনুভূতি ও নিঃশর্ত আনুগত্য। এবার অনেক নেতা অনেক নাম দিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাকে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস মিনিস্টার পদে নিয়োগ দিয়েছেন। বহুদিন পর আনন্দ পেলাম। সে সফল হওয়ার, কাজ করার যোগ্যতা রাখে। দিল্লিতেই নয়, পৃথিবীর যেখানে যখন যারা এ পদে গেছেন তারা হয় চাকরি করেছেন, নয় নিজের মতো নিরাপদ জীবন কাটিয়েছেন। তবে এনামুল হক চৌধুরী দিল্লিতে যেভাবে কাজ করেছেন তার প্রশংসা শেষ করার মতোন নয়। বড় জায়গায় গেলে আরও ভালো করবেন। ওয়াশিংটনে ’৭৫-উত্তর দুঃসময়ের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাংবাদিক, ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, স্মার্ট শরীফ সাহাবুদ্দিনকে নিয়োগ দিলে দেশ সুফল পাবে। আবদুল জলিল ভুইয়াকেও একটি দেশে পাঠানো যায়। এরা কমিটেড। কেরানি চরিত্র দিয়ে কাজ হয় না। পুনর্বাসন হয়।

যাক, শাবান মাহমুদ আমাকে প্রশ্ন করেছিল, আপনার কী মনে হয়- বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক কেমন হবে? হাসতে হাসতে বললাম দুজনের উষ্ণ বন্ধুত্ব হবে। আর কমলা হবেন শেখ হাসিনার বোন। এমনকি ’৯৬ শাসনামলে শেখ হাসিনা বিশ্বনন্দিত নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত, সুলেমান ডেমিরেল এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকেও ঢাকায় এনেছিলেন। আমার পর্যবেক্ষণে সম্পর্কের উষ্ণতায় শেখ হাসিনার ডাকে বাইডেনও ঢাকায় আসবেন।

কমলা হ্যারিস হবেন পরিবারের সদস্য। এখানে কূটনীতির পাশে পিতার কাছ থেকে পাওয়া শেখ হাসিনার হৃদয়নীতিও কাজ করবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথমবার দলীয় মনোনয়নের জন্য নামলেন, তখন আমি নিউইয়র্কে। ২০০০ সালে দেখা তার ক্যাসিনো তাজমহলের ঝলমলে রূপ তখন নিভে গেছে। বাণিজ্য শেষ। যাক, তখন সবাই হাসাহাসি করছিলেন। বলছিলেন টাকার জোরে পরিচিতি পায়। পরের বার গিয়ে দেখি তিনি বর্ণবাদের স্লোগানে জায়গা করে লাখো মানুষকে ভক্তই করেননি, তুমুল আলোচনায়। পরে মনোনয়ন নিয়ে হিলারির মতো দক্ষ নেত্রীকে হারিয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন। প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি পৃথিবীর সঙ্গে দেয়াল তুললেন। ব্রাজিল, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার একনায়কের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব করলেন গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। পরাজিত হয়েও রেওয়াজ মানেননি। গণতন্ত্রের রূপ-লাবণ্য-মাধুর্যকে পদদলিত করেছেন। সর্বশেষ প্রতিরক্ষা সচিবকে বরখাস্ত করেছেন। শ্বেতাঙ্গদের জাগিয়ে ভোট জিততে গিয়ে আজ মেজরিটির মধ্যে মাইনরিটিদের হীনমন্যতা তৈরি করেছেন। এত কিছুর পরও আমেরিকানদের বিভক্ত করেছেন সমান সমান। বাইডেনের চ্যালেঞ্জ এখন সবাইকে ঐক্যের জায়গায় নিয়ে আসা। পপুলার ভোট বাইডেন যেখানে সাড়ে ৭ কোটি পান সেখানে ট্রাম্প ৭ কোটি। দুটোই রেকর্ড। ইলেকটোরাল ভোট বাইডেন পান ২৯০ ট্রাম্প পান ২১৪। ট্রাম্পের আচরণে অঙ্গভঙ্গিতে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। বাইডেন যেখানে অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়েছেন ট্রাম্প সেখানে করোনা নিয়ে ব্যাঙ বালকের খেলা খেলে লাশের পাহাড় দেখেছেন। নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। আর বক্তব্য লাগামহীন ছিল। গণমাধ্যমের সঙ্গে আগেই গায়ের জোরে যুদ্ধ করেছেন। ভোটের সময় গণমাধ্যমও মিথ্যাচার প্রচারণা বন্ধ করে প্রতিশোধ নিয়েছে। জনগণ ট্রাম্পের বিতর্কিত বিশৃঙ্খল শাসন থেকে মুক্তি নিয়েছে ব্যালটে। উদারপন্থিদের চাপের মুখেও বাইডেন মধ্যপন্থা নীতি থেকে সরে দাঁড়াননি। স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে কলেজ শিক্ষা ও ধনীদের জন্য বেশি কর আরোপ নীতিতে যাননি। মধ্যপন্থি ও বিক্ষুব্ধ রিপাবলিকানরাও তার কাছে এসেছেন। নির্বাচনের শেষে এসে ট্রাম্প ক্যাম্পের চেয়ে বড় তহবিল গড়েছিলেন বাইডেন। অক্টোবরেই ট্রাম্পের চেয়ে ১৪৪ মিলিয়ন ডলার বেশি ছিল বাইডেনের তহবিলে, যা ব্যবহার করেন টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে। এখানে রিপাবলিকানদের জর্জরিত করা হয়। করানোয় মানুষ বেশি ঘরে থাকায় কাজেও লেগেছে। অভিবাসীরা তো ছিলেনই বাইডেনের দিকে। আসলে ট্রাম্প নিজেই যুদ্ধ করে নিজের পরাজয় ডেকে এনেছেন। প্রমাণ করছেন ব্যবসা ও রাজনীতির পথ এবং হিসাব আলাদা।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।