কার্যকর ব্যবস্হাপনা ও ব্যবস্হা নিশ্চিত ক’রার পূর্বশর্ত হিসেবে আলোচনায় আসে চেইন অব কমান্ড, অ্যাকাউন্টিবিলিটি । চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়লে কার্যকর ব্যবস্হাপনার ভিত্তিটা একেবারে নড়বড়ে হয়ে পড়ে।
এই মুহূর্তে রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমানের উত্তরসূরী নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। এখন পর্যন্ত বড়সড় কোনো হাংগামার খবর পাওয়া যায়নি। প্রত্যাশা করি কোনো অঘটন ছাড়াই ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষ হবে। ভোটের ফলাফল অহিংস মানসিকতায় মেনে নেবেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা।
প্রশ্ন ভোট নিয়ে নয়। প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা প্রার্থীদের নিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতির পারিবারিক আধিপত্যের ধারবাহিকতায় নিহত লোকমানের পরিবারের সদস্যকে মনোনয়ন দিয়েছে মরহুম লোকমানের রাজনৈতিক বিশ্বাস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। লোকমান পারিবারিক বলয়ের বাইরে যেন নরসিংদীর উন্নয়ন-আকাঙ্ক্ষী কেউ নেই! অতীতেও দেখা গেছে সাংসদ স্বামী-পিতার মৃত্যুর পর মনোনয়নে ধন্য হয়েছেন বিধবা স্ত্রী কিংবা ‘এতিম’ সন্তান। অন্য কোনো দলীয় রাজনৈতিক নেতার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। নরসিংদীও ব্যতিক্রম নয় সেই অর্থে। এক্ষেত্রে লোকমানের পরিবার মনোনয়ন পাবার যোগ্য হতে পারে কেবল এই কারণেই যে, নিহত লোকমানের রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যান্য জেলা পর্যায়ের নেতাদের দিকে হত্যাকারী সন্দেহের আংগুল নির্দেশিত।
লোকমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘রাজনৈতিক ও আইনি’ নাটক কম দেখা হলো না! অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেবার জোর চেষ্টা, জামাই আদরের লোক দেখানো রিমান্ড আর আশংকার জামিন মঞ্জুর সবই হয়েছে। অভিযুক্তদের বদলে খোদ বাদী পরিবারকেই থাকতে হয়েছে উল্টো চাপের মুখে। রাজনীতি এমনই জটিল এক ‘মশল্লা’!
কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধির মৃত্যুতে, স্বাভাবিক ও অপঘাত, দুটোতেই, অবশ্যই পদটি পূরণ করা হয় উপ-নির্বাচনে। নির্বাচিত পৌর মেয়র লোকমানের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও নির্বাচিত উত্তরাধিকার নির্বাচনে সেকারণেই ব্যবস্হা হয়েছে উপ-নির্বাচনের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক বিবেচনায় নিহত লোকমানের ভাই কামরুলকে মনোনয়ন দিয়েছেন দলীয় প্রার্থী হিসেবে। বিরোধী বিএনপি প্রার্থী নির্বাচন যথারীতি বর্জন করে প্রমাণ করেছেন জীবিত লোকমান যতোখানি জনপ্রিয় ছিলেন, নিহত লোকমান বোধকরি তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ করে নরসিংদীর এক মন্ত্রীর প্রকাশ্য পারিবারিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অভিযুক্তদের অন্যতম এবং জেলা আওয়ামী সভাপতি মন্তাজও একজন প্রার্থী।
স্হানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দলীয় মার্কা ব্যবহার ‘নিষিদ্ধ’ বলেই মন্তাজ ’আনারস’মার্কার প্রার্থী। মন্ত্রীর সাহসে ও উৎসাহে মন্তাজ দলীয় নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখান। মন্তাজতো জেলা পর্যায়ের ক্ষুদ্র এক `ফ্রাই’ (পোনামাছ)। কিন্তু মন্ত্রিসভার এক সদস্য প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ করার ধৃষ্টতা কোথায় পান? বিতর্কিত আবুলের মতোই মন্ত্রী রাজুরও কী খুঁটির জোর বেশি! নাকি মন্ত্রীরা আজকাল প্রধানমন্ত্রীকে জমা-খরচ দেবার প্রয়োজন বোধ করেন না?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এখন কি আর চেইন অব কমান্ড নেই? দলীয় সাধারণ সম্পাদককে পাত্তা না-দেওয়াটা এখন আওয়ামী রেওয়াজ। ছাত্র ও যুবলীগ নেতারাতো কেন্দ্রীয় নেতাদের হিসাবেই আনেন না। দলীয় সিদ্ধান্তের ইম্পলিমেন্টেশন হবে কিভাবে?
নাকি নরসিংদীর উপ-নির্বাচন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার আরেকটি রাজনৈতিক এক্সপেরিমেন্ট? সচেতনভাবে খেয়াল না করা এক মনযোগী দৃশ্য! যেই জিতুক, বিজয় আওয়ামী লীগের!
সরকারের কার্যকর ব্যবস্হাপনা এভাবেই ম্রিয়মান হয়। অ্যাকাউন্টিবিলিটি গায়েব হয়। এই প্রক্রিয়ায় একদিন পায়ের তলার মাটিটুকু হারিয়ে যাবে অনায়াসে, নীরবে-নিভৃতে।
ইমেলঃ [email protected]
বাংলাদেশ সময় ১২৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১২