ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

শুঁটকি তৈরির মহাযজ্ঞ নাজিরারটেক মহালে

ফারহানা আক্তার তানিয়া | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
শুঁটকি তৈরির মহাযজ্ঞ নাজিরারটেক মহালে

ভোজনরসিকদের কাছে খুবই মজার ও আকর্ষণীয় একটি খাবার শুঁটকি। শুঁটকি দিয়ে যে কত রকমের রান্না করা যায় তার ঠিক নেই।

 

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নভাবে শুঁটকি রান্না করে খাওয়ার প্রচলন আছে। এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় খাবার শুঁটকি।

কক্সবাজারে শুঁটকি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মহাল নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল। কক্সবাজার শহরের পশ্চিম সাগরের তীরে এই শুঁটকি পল্লী। নতুন চরে প্রায় শত একরের বিশাল এলাকাজুড়ে শত শত বাঁশের মাচায় নানান জাতের মাছ শুকানো হয়।

বিশাল সমুদ্র উপকূলে বিশাল জায়গা নিয়ে এরকম একটা শুঁটকিপল্লী হতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। সমুদ্র দর্শনের পাশাপাশি শুঁটকি তৈরির এই মহাযজ্ঞ দেখলে ভ্রমণ তালিকায় যুক্ত হবে এক নতুন অভিজ্ঞতা।

ভোর রাত থেকেই এখানে শুরু হয় কর্মতৎপরতা। গভীর সমুদ্র থেকে আসতে থাকে মাছভর্তি ট্রলার। এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার সব পরিবারের একটাই কাজ শুঁটকি উৎপাদন। পরিবারের সব সদস্যই কোন না কোনভাবে এই কাজে সহযোগিতা করে। বিশেষ করে নারীরা শুঁটকি উৎপাদনের প্রতিটা পর্যায়ে সরাসরি কাজ করেন।

শুঁটকি মহালের আশপাশে ঘুরে বেড়ালেই দেখা যায়, নারীরা কিভাবে একের পর এক শুঁটকি বেছে বেছে তা রোদে শুকানোর উপযোগী করছে। কাজের ফাঁকে চলে হালকা খুনসুটিও। এটাই তাদের জীবন।  

পুরো এলাকার বাতাসে ভাসে শুঁটকির গন্ধ। শহরের মানুষের কাছে কিছুটা বিরক্তিকর লাগলেও এই গন্ধই তাদের জীবনের একটি অংশ। শুঁটকি মহালের শত শত মাচায় কত রকমের মাছ যে ঝুলে আছে, তার ঠিক নেই। চেনা-অচেনা নানান রকম মাছের দেখা মিলবে এখানে। এসব শুঁটকির মধ্যে সামুদ্রিক রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, চিংড়িসহ অনেক প্রজাতির মাছ  রয়েছে।

ছোট-বড় বিভিন্ন আড়তে শুঁটকি বিক্রি হয় এখানে। বাজার দরের চাইতে কিছুটা কম দামেই শুঁটকি পাওয়া যায়। শুঁটকি বিক্রির জন্য একসময় কক্সবাজারের বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার পাশে ফুটপাতে দোকান ছিল। এখন শুঁটকি বিক্রিতে এসেছে আভিজাত্য।  

কক্সবাজারের বার্মিজ মার্কেট, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী বিচ মার্কেট, কলাতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা যায় বড় বড় শুঁটকির দোকান। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসব দোকান থেকে শুঁটকি সংগ্রহ করেন।

বলা হয়, কক্সবাজারে শুঁটকিকে ঘিরে প্রতি বছর দুইশ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। শুঁটকি এখন একটি পর্যটন পণ্য।  পর্যটকরা বেড়াতে এলে বার্মিজ পণ্য, আচার এসব নিয়ে যেতো। কিন্তু এখন অনেকে কিছুটা হলেও শুঁটকি নিয়ে যায়। পাশাপাশি প্রবাসীরাও এখানকার  শুঁটকি বেশ পছন্দ করেন। তাই বিদেশেও কক্সবাজারের শুঁটকির চাহিদা বাড়ছে, রফতানিও হচ্ছে।

যদিও কক্সবাজার ভ্রমণে সমুদ্রবিলাসটাই সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু, তবুও সময় করে একটু কষ্ট হলেও ওই শুঁটকি পল্লী দেখে আসা যায়।

লেখিকা: শিক্ষার্থী-চট্টগ্রাম নাছিরাবাদ মহিলা কলেজ।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।