ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

২১ আগস্ট আর ২৭ জানুয়ারি একসূত্রে গাঁথা: রেজা কিবরিয়া

অপূর্ব শর্মা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১২
২১ আগস্ট  আর ২৭ জানুয়ারি একসূত্রে গাঁথা: রেজা কিবরিয়া

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আর কালক্ষেপণ না করার দাবি জানিয়েছেন তার পুত্র ড.রেজা কিবরিয়া। বাংলানিউজের সাথে কথোপকথনে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন নানা কথা।

ক্ষোভও প্রকাশ পেয়েছে তার বক্তব্যে। ড.রেজা কিবরিয়া বলেছেন, দীর্ঘ ৭ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ না হওয়া দুঃখজনক। ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ২৭ জানুয়ারি কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করেন তিনি।

ড.রেজা কিবরিয়া বলেন, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। তবে, ঘটনা যারা ঘটিয়েছে কেবল তাদের বিচার চাই না। বিচার চাই, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা এবং প্রশ্রয়দাতাদের। তিনি বলেন, শুধু হামলাকারীদের বিচার হলে দেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কালচার বন্ধ হবে না। এর সাথে জড়িত প্রত্যেককে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে প্রচলিত আইনে সাজা দিতে হবে। তাহলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। , অন্যথায় যাদের টাকা আছে, যাদের ক্ষমতা আছে তারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে রেজা কিবরিয়া বলেন, আব্বার শত্র“রা মফস্বলের নয়। এদের অনেক ক্ষমতা। এদের অনেক প্রভাব। প্রত্যেক সরকারেই এদের প্রভাব বিদ্যমান থাকে। এইসব প্রভাবশালীর কারণেই তদন্ত শেষ করা যায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরা কারা, এমন প্রশ্নের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, মুফতি হান্নানের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি পর্যালোচনা করে সুষ্ঠু তদন্ত করলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। সে যাদের নাম বলেছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে। তিনি বলেন, আমরা কারো নাম বলে তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতে চাই না।     

ড. রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইমদাদুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানিয়ে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে এই লোকটার কাছে অনেক তথ্য আছে। আমরা বারংবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানালেও সেটা আমলে নেওয়া হয়নি। এবার আশা করছি, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি সাবেক স্পীকার জমির উদ্দিন সরকারকেও এব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও স্পিকারের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তার সাথে যোগাযোগ করে আমরা একটি হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম, আব্বাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের অনুমান, আমরা যেন তার সাথে যোগাযোগ করতে না পারি সে ব্যাপারটি আগে থেকেই নিশ্চিত করে রাখা হয়েছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্নের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড.রেজা কিবরিয়া।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে এক সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রীশাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন প্রান হারান। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্কোরক আইনে দুটি মামলা করেন। গত বছরের ২০ জুন হবিগঞ্জ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। এতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু কিবরিয়ার পরিবারের পক্ষে হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আলমগীর ভুঁইয়া বাবুল এই সম্পূরক অভিযোগপত্রের ওপর ২৮ জুন হবিগঞ্জের আদালতে নারাজি আবেদন দাখিল করতে চাইলে আদালত সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তা দাখিল করার কথা বলেন। গত ২৫ অক্টোবর ধার্য তারিখে নারাজি দরখাস্ত গ্রহণের পর আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ৫ জানুয়ারি মামলাটি অধিকতর তদন্তেন নির্দেশ দেন আদালত।   এতে সিআইডির একজন সিনিয়ার কর্মকর্তা নিয়োগদানের কথা বলা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের পরই নতুন করে শুরু হবে তদন্ত কার্যক্রম।

বাংলাদেশ সময় ২২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।