ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

উদ্যোক্তা ও টেকসই উন্নয়ন

জিয়াউর রহমান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২১
উদ্যোক্তা ও টেকসই উন্নয়ন

উদ্যোক্তা হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে নিজেই কোনো কাজের জন্য উদ্যোগ নিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন করে থাকেন। অর্থাৎ যে নিজে থেকেই কোনো ধারনা বা পরিকল্পনা নিয়ে ব্যবসা বা কোম্পানি, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, সৃষ্টিশীল কোনো কর্ম করার চেষ্টা করেন তাকেই উদ্যোক্তা বলা হয়।

আবার উদ্যোগী হয়ে যে কোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করলেই উদ্যোক্তা হওয়া যায়। উদ্যোক্তারা সব সময়ই ঝুঁকি নিয়ে উদ্যোগ নিয়ে থাকেন এবং নিজের জ্ঞান ও  দক্ষতাবলে সফলতার সাথে নতুন কিছুর জন্ম দেন।

অনেকে মনে করেন উদ্যোক্তাগণ জন্মগতভাবেই উদ্যোক্তা। অর্থাৎ জন্মগতভাবেই তিনি বহু ব্যক্তিগত গুণের অধিকারী হন যা তাকে উদ্যোক্তা হিসাবে খ্যাতি লাভ করতে সহায়তা করে। বর্তমান সময়ে অবশ্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ও মনোবলের মাধ্যমে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব।  

একজন সফল উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত গুণ-
•    আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য্য
•    সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি ও কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা
•    নেতৃত্বদানের যোগ্যতা
•    কৃতিত্ব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতা
•    কঠোর পরিশ্রম
•    ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা
•    ব্যর্থতাকে সফলতার অংশ ভাবা
•    নতুনত্ব ধারনা নিয়ে কাজ করা
•    সংগঠক হিসাবে কাজ করা
•    মানবিক কর্ম সৃষ্টি
•    দূরদর্শিতা
•    সংস্কারক

কোনো কারণে প্রথমবার ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে দ্বিতীয়বার নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করা। কাজে সাফল্য অর্জনে তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাদের চরিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। প্রকৃত উদ্যোক্তারা নিজেদের ভুল অকপটে স্বীকার করে এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং নিজের কর্মক্ষেত্রে সেই শিক্ষারর প্রয়োগ উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ। সফল উদ্যোক্তাতারা তাদের কাজের সাফল্যে পরিতৃপ্তি ও অসীম আনন্দ পায়। ফরাসি অর্থনীতিবিদ জ্যান-ব্যাপটিস্ট ১৮০০ সালে প্রথম উদ্যোক্তা বা Entrepreneur শব্দের অন্যতম প্রবর্তক। জ্যান-ব্যাপটিস্ট এর মতে, উদ্যোক্তা হচ্ছে এমন একজন যিনি সংগঠক হিসাবে কাজ করে। একজনের জমি, আরেকজনের শ্রম, অন্যজনের টাকা, সম্মিলিতভাবে কাজে লাগিয়ে সম্ভাবনাময় নতুনত্ব খুঁজে বের করে।  

বড় বড় উদ্যোক্তা যারা পৃথিবীতে সফল হয়েছেন তাদের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই, মানুষের সমস্যাকে নিজের সমস্যা হিসাবে দেখেছেন। তাদের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে মানুষের উপকারের কথা চিন্তা করেছেন, কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়। সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে কত মানুষ উপকৃত হয় তা নিয়ে ভেবেছেন। এভাবে উদ্যোক্তারা অন্যের প্রয়োজন মেটাতে এগিয়ে এসেছেন। যেমন ফেসবুকের প্রতিষ্টাতা মার্ক জুকারবার্গ তার পুরনো সহপাঠীদের মধ্যে যারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে যোগাযোগ ও লেখা-পড়া করতে পারছিলেন না। আবার অনেক সহপাঠিই তাদের নিকট আত্মীয় তাদের কাছে আসতে ও দেখা করতে পারতো না। এসব বিষয় তিনি লক্ষ্য করলেন এবং দূর থেকে তাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সহজে যোগাযোগ করা যায় তা নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তী ফেসবুকের মত একটি সামাজিক যোগাযোগ সাইটের সৃষ্টি হয়।

আমার মতে উদ্যোক্তা মোট তিন প্রকার। যথা:
১. ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা
২. সামাজিক উদ্যোক্তা
৩. সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা
    
যখন কোনো ব্যক্তি ব্যবসার মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানে অন্যের কর্মস্থান সৃষ্টি করে তখন তাকে আমরা ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা বলে থাকি। পৃথিবীর সকল সফল ব্যবসায়ী এক একজন সফল উদ্যোক্তা। ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বেকার সমস্যার সমাধান ও দেশে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একটি দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন, বিনিয়োগ, বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন, প্রযুক্তি বিনিময় ইত্যাদি অনেকাংশে নির্ভর করে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তার ওপর।

সামাজিক উদ্যোক্তা সমাজের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন- এনজিও, ফাউন্ডেশন, মিশন, ট্রাস্ট, সংগঠন ইত্যাদি সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজ সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে এবং নিজের সৃষ্টি প্রতিষ্ঠান অন্যের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মানবিক সেবা তৈরিতে এই সামাজিক উদ্যোক্তাদের দ্বারা সৃষ্ঠ প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জনগণের প্রকৃত সেবা তৈরি পাশাপাশি সামাজিক সমস্যা সমাধান ও সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

সামাজিক ব্যবসাও সামাজিক উদ্যোক্তার হাত ধরে হয়ে থাকে। সামাজিক উদ্যেক্তারা সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সমাজের চিন্থিত মানবিক সমস্যাগুলো সমাধান করে জনগণের জন্য কল্যাণকর ব্যতিক্রমধর্মী মানবিক ও সামাজিক সেবা সৃষ্টি করে জনগণকে সামাজিক সমস্যাগুলোকে চিরতরে মুক্তি দিতে পারে।  

সামাজিক ব্যবসা একটি শক্তিশালী মানবকর্ম। সামাজিক উদ্যোক্তারা সমাজের দর্পণ স্বরূপ। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ যখন নিজের কর্ম নিয়ে ব্যস্ত তখন সেই একই সমাজের নিবেদিত একটি নিঃস্বার্থ, পরোপকারী শ্রেণী সামাজিক উদ্যোক্তা হিসাবে আবির্ভাব হয়, যাদের প্রধান লক্ষ্য বিশ্বকে একটি শান্তিময় স্থান হিসাবে তৈরি এবং সামাজিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজি সৃষ্টি করে জনগণকে প্রকৃত সেবা দেওয়া।

অনেকগুলো সামাজিক উদ্যোগের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উদ্যোগ হলো সামাজিক ব্যবসা। সামাজিক ব্যবসার পুঁজি কখনও শেষ হয় না এবং এটি সমাজের জন্য একটি স্থায়ী ও কার্যকরী ব্যবস্থা। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মানবিক সেবাগুলোর ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরে একই রকম সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। সামাজিক ব্যবসাকে মানবিক ব্যবসাও বলতে পারি কারণ এর মাধ্যমে অর্জিত লাভ বা অর্থ মানবকল্যাণে ব্যয় হয়। বিশ্বের মানবিক সেবাসমূহ যেমন দারিদ্র বিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী ও শিশুর জীবন মান উন্নয়ন ইত্যাদির ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তাছাড়া পিছিয়ে পড়া সমাজের সদস্য বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করার ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একটি বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়ার ক্ষেত্রে সামাজিক উদ্যোক্তাদের সৃষ্ট সামাজিক ব্যবসা কার্যকর অবদান রাখতে পারে। রাষ্ট্রীয় পুঁজি, ব্যক্তি পুঁজি সৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিক পুঁজি অবশ্যই সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সামাজিক পুঁজি অর্থাৎ সমাজের মানুষের সেবা সৃষ্টিকারী সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজি।

প্রতিটি মানুষের মাঝে সৃষ্টিশীলতা রয়েছে তবে সৃষ্টিশীল উদ্যেক্তা সৃষ্টিকর্তার বিশেষ সৃষ্টি। কারণ প্রতিটি মানুষ তার সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে মানবকল্যাণের জন্য নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, বিশেষ এক শ্রেণীর সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা যেটা সৃষ্টি করতে পারেন। একজন মানুষ যখন তার কাজের ক্ষেত্রে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে, অথবা কোন বিষয়ে নতুন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ভেবে বের করতে পারে তাকে আমরা সৃষ্টিশীল মানুষ বলতে পারি। আর যে সকল সৃষ্টিশীল মানুষ কোনো কিছু সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে তাকে সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা বলি। সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা সৃষ্টিশীল মানুষ। বিশ্বে নতুন কিছুর সৃষ্টি করে বিশ্ব পরিবর্তন ও মানুষের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন আনে। সৃষ্টিশীল মানুষ ছাড়া বিশ্ব অচল। বিশ্ব সভ্যতা সৃষ্টি বা আধুনিক বিশ্ব তাদের হাতেই সৃষ্টি হয়েছে। আজ সমাজে সৃষ্টিশীল মানুাষ হিসাবে যারা পরিচিত তারা হলেন বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকসহ সকল সৃষ্টিশীল ব্যক্তি, যাদের বিশেষজ্ঞানে আবিষ্কৃত হয়েছে মানুষের জন্য কল্যাণকর বিভিন্ন সৃষ্টি।

যে কোনো মানবিক কাজ সৃষ্টি, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য যে উদ্যোক্তাই সামাজিক উদ্যোক্তা হিসাবে বিবেচিত হয় মানুষের কল্যাণে। সমাজের কল্যাণে যে কোনো মানবিক বা মহৎ উদ্যোক্ত সামাজিক উদ্যোগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর মানবিক মানুষ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সামাজিক উদ্যোক্তা হিসাবে বিবেচিত হবে।  

উদ্যোক্তা হলো সৃষ্টিকর্তার বিশেষ সৃষ্টি। বিশ্বের সকল বিখ্যাত মানুষ উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভূক্ত। উদ্যোক্তা রাষ্টীয় বা সামাজিকভাবে সৃষ্টি করা যায় না, তবে উদ্যোক্তাদের তার সৃষ্টিশীল কাজের জন্য রাষ্ট্র বা সমাজ সহায়তা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। উদ্যোক্তাদের মনের শক্তি ও বিশ্বাস এতটা উঁচুতে যে কোনো শক্তি তাদের উদ্যোগ নষ্ট করতে পারে না, ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করে সাহসিকতার সাথে, কোনো কিছুর পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তারা এগিয়ে যেতে পারে। তাদের প্রধান হাতিয়ার তাদের স্বপ্ন আর বিশ্বাস। তারা বিশ্বাস করতে ভালোবাসে, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করতে ভালোবাসে। তাদের ব্যর্থতা তাদের মনোবলকে আরো দৃঢ় করে, ব্যর্থতা তাদেরকে ভুল পথ থেকে সরিয়ে সঠিক পথের সন্ধান দেয়। উদ্যোক্তাতাদের মৌলিক স্বপ্নে ও বিশ্বাসে শুধু নতুন কোন সৃষ্টি, নতুন কোনো সৃষ্টি যা দেশ ও দশের কল্যাণে কাজে লাগে। আর নতুন কিছু করা বা সৃষ্টির জন্য তারা খুব একাকী, অসুখী। তাদের সুখের মূল উৎস সৃষ্টি। মানব কল্যাণে সৃষ্টি ছাড়া তা অসহায়, পাগলের মত অসহায়। এই সৃষ্টিশীল পাগলশ্রেণীর মানুষের জন্য বিশ্ব চলমান। তারা ছাড়া মানবজাতি অসহায়, বিশ্ব অসহায়। তাদের সেবা ও মনন বিশ্ববাসীকে একটি পরিপূর্ণ শান্তিময় বিশ্বের স্বপ্ন দেখায়।  

বিশ্বের মহামারির সময়ে আমরা দেখলাম সারা বিশ্বের মানুষ করোনা টিকার জন্য সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা অর্থ্যাৎ বিজ্ঞানীদের দিকে চেয়ে আছে। করোনার কারণে বিশ্ব হয়ে গিয়েছিল অচল। সেই বিশ্বকে সচল করার জন্য করোনার ভ্যাকসিন দরকার। বিশ্বের কিছু সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করলো। দেশে দেশে টিকা দেওয়া শুরু হলো। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা তৈরি হলো, বিশ্ব সচল হলো। বিশ্ববাসী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা ছাড়া বিশ্ববাসী কতটা অসহায়। একইসাথে সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব পৃথিবীর অনুধাবন করলো। তাই সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তাদের বাদ বাদ দিয়ে বা তাদের অবদানকে খাটো করে সমগ্র বিশ্বের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।  

একদম শূণ্য থেকে কিছু সৃষ্টি করা মানে সৃষ্টিশীলতা নয়। এটা মানুষের পক্ষে সম্ভবও নয়। কোনো বিশেষ তথ্য, জ্ঞান ও উপাদানকে কাজে লাগিয়ে নতুন কোনো আইডিয়া, তত্ত্ব, সমাধান বা বস্তু সৃষ্টি করাই মূলত সৃষ্টিশীলতা।  

একজন মানুষ ভালো গান গাইলেই কিন্তু তাকে সৃষ্টিশীল বলা যাবে না। হয়তো তার গলা ভালো, অনুশীলনের মাধ্যমে সে গানের প্রতিভাকে ধারালো করেছে। কিন্তু সে যদি নিজের মত করে ভিন্ন আঙ্গিকে সুর ভাবতে না পারে, নতুন কোনো সুর সৃষ্টি করতে না পারে, শেখানো বুলির বাইরে নিজস্বতা প্রকাশ করতে না পারে তাকে সৃষ্টিশীল বলা যাবে না।

হেলিকপ্টারের ধারণা প্রথম আসে ফড়িং থেকে। প্লেনের ধারনা আসে পাখি থেকে। ট্যাংকের ধারনা এসেছিল গুবরে পোকা থেকে। এরকম সব কালজয়ী আবিষ্কার আর সৃষ্টির মূল অনুপ্রেরণা ছিল বাস্তব জীবন আর প্রকৃতি।  

বিজ্ঞানী নিউটনের আপেলের গল্প সবারই জানা। গাছ থেকে আপেল পড়া অনেকে পর্যবেক্ষণ করেছে কিন্তু নিউটনের মত করে আগে কেউ ভাবেনি, একমাত্র নিউটন এটার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে এবং একটি বাস্তবসম্মত ব্যাখা দাঁড় করিয়েছে। কারণ তিনি সৃষ্টিশীলভাবে ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করেছেন এবং ব্যাখা খুঁজে বের করার জন্য ভিন্নভাবে চিন্তা করেছেন।  

যে উন্নয়নের টেকসই ও স্থায়িত্ব আছে তাই টেকসই উন্নয়ন। আগামী প্রজন্মের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য পরিবেশের ক্ষতি না করে যে কোনো উন্নয়ন বা পরিবর্তিত কাজই টেকসই উন্নয়ন। সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ এসডিজি “২০৩০ এজেন্ডা” ঘোষণা করেছে। এতে মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ও ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

বিশ্বকে যদি শান্তিময় করতে চাই, দারিদ্রমুক্ত করতে চাই, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই, বৈষম্য দূর করতে চাই, শিল্প সাহিত্যের বিকাশ ঘটাতে চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই বিশ্ব তৈরি করতে চাই, এসডিজি বাস্তাবায়ন করতে চাই তাহলে এই তিন শ্রেণীর উদ্যোক্তার বিকল্প অন্যকিছু নেই। এই তিন শ্রেণীর উদ্যোক্তা যে কোনো রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরম্নত্বপূর্ণ। একটিকে বাদ দিয়ে টেকসই অগ্রগতি সম্ভব নয়।

তাই উদ্যোক্তাদের বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন ও চালিকাশক্তি হিসাবে বিবেচনা করে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে এবং একইসাথে ছোট-বড় সকল শ্রেণীর উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদেরকে সফল হওয়ার সুযোগ দিয়ে প্রত্যেক রাষ্ট্রকে আর্থিক, সাংগঠনিক, প্রাতিষ্ঠানিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নে শক্তিশালীরূপে গড়ে তুলতে হবে।  


ই-মেইলঃ [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।