ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

সেই দুঃসহ স্মৃতি আর চাই না

ড. মো. রওশন আলম, যুক্তরাষ্ট্র থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১২
সেই দুঃসহ স্মৃতি আর চাই না

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রায় একচল্লিশটি বছর অতিবাহিত হতে চলল। এর মধ্যে দেশে বেশ ক’টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এসবের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সময়ে ১৯৭৩ সালে একটি, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেনাশাসকদের অধীনে তিনটি (১৯৭৯, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮) এবং ১৯৯১ থেকে আজ পর্যন্ত ২১ বছরে ইনটেরিম গভর্নমেন্ট বা অন্তবর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মোট চারটি (১৯৯১, ১৯৯৬ জুন, ২০০১ ও ২০০৮) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২১ বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চার চারটি নির্বাচনের যে পটভূমি, প্রেক্ষাপট ও ঘটনাপ্রবাহ-- নিচের লেখার মাধ্যমে সংক্ষেপে ও স্তরে স্তরে তার উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি মাত্র।
১৯৯০–১৯৯৬ : বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ, অসহযোগ আন্দোলন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার
প্রথমেই ১৯৯০ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটগুলোর উপরে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। এই সময়ে আমরা দেখেছি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের আগমন ও একটি শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচন, তারপর দেখেছি অসহযোগ আন্দোলন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন। আমরা জানি যে, ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর এক জোরালো গণআন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারের পতন হয় । ঐদিনই সকল দলের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। ৯ ডিসেম্বর তিনি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন এবং বঙ্গভবনে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান। ১৫ই ডিসেম্বর প্রথম উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি সভায় মিলিত হন। সেই উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মানুষকে উপহার দেন একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। যদিও আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা এই নির্বাচনকে সূক্ষ্ম কারচুপির নির্বাচন হিসাবে অভিহিত করেন। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মোট ভোটের ৩০.৮১% অর্জন করে এবং জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪০টি আসনে জয় পায়।
অপরদিকে আওয়ামীলীগ ৩০.০৮% ভোট পেয়ে ৮৮টি আসনে জয় পায়। জাতীয় পার্টি ৩৫টি (১১.৯২% ভোট) এবং জামায়াতে ইসলামী ১৮টি (১.২২% ভোট) আসন পায়। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ছিল ৩০টি। সেই নির্বাচনের পর জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং সংসদীয় পদ্ধতির শাসন চালু হয়। খালেদা জিয়া হলেন সেই সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। পরে সে ক্ষমতারও পালাবদল হল অনেক আন্দোলন শেষে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে  শেখ হাসিনার সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে।
অসহযোগ আন্দোলন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার
১৯৯৪ সালে সংসদের একটি আসনের উপনির্বাচনকে (মাগুরা) কেন্দ্র করে সরকারের প্রতি বিরোধীদলের অবিশ্বাস ঘনীভূত হয়ে চরম বৈরিতার জন্ম দেয়। সরকারি দল বিএনপি প্রতারণা বা জাল ভোটের মাধ্যমে তাঁদের প্রার্থীকে বিজয়ী করে বলে তীব্র অভিযোগ ওঠে। তারপর আওয়ামীলীগসহ সকল বিরোধীদল একসঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ বয়কট করতে থাকে এবং ঘনঘন হরতালেরও ডাক দেয়। খালেদা জিয়ার সরকারের পদত্যাগের জন্য ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। বিরোধীদলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জোরালো দাবি তোলে তারা। সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক অবিশ্বাস ও দূরত্ব বাড়তে লাগলো। যদিও সেই সময় সরকার ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য একাধিক মাধ্যমে মীমাংসার জন্য প্রচুর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল এবং সেসব উদ্যোগ কোনো উন্নতির আলো না ছড়িয়ে যথাক্রমে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এমত অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বিরোধীদলগুলো একসঙ্গে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। তারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল, মিটিং, ও অবরোধ অব্যাহত রাখে। এসময় সরকার ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে ব্যবধান উত্তর মেরু-দক্ষিণ মেরুর দূরত্বের মতো বাড়তেই থাকল। রাজনৈতিক অঙ্গন চরম উত্তপ্ত হতে লাগল। হরতাল ও অবরোধের কারণে মানুষের জ্বালাও প্রতিদিন ক্রমান্বয়ে বাড়তে লাগল। ঢাকা যেন এক আন্দোলনের মহানগরীতে পরিণত হল। এরই একপর্যায়ে যুক্ত হল অসহযোগ আন্দোলন। তৈরি হল জনতার মঞ্চ। জনশ্রুতি আছে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জনতার এই মঞ্চের উদ্ভাবক ছিলেন তৎকালীন ঢাকার মেয়র প্রয়াত মো. হানিফ। তিনি ও আওয়ামীলীগ এই মঞ্চটিকে সরকার পতনের প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করল। সেই মঞ্চে সাধারণ মানুষ, ছাত্র, সচিব, সরকারি কর্মকর্তাসহ নানা পেশার লোক যোগ দিতে থাকলেন আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এরশাদের জাতীয় পার্টি বায়তুল মোকাররম ও গুলিস্তানে আলাদা আলাদা করে মিটিং ও মিছিল অব্যাহত রাখলেন। বিএনপি সরকার একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলো। সেই সময় আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, ও জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক মৌলিক সব আদর্শ ভুলে সরকার পতনের দাবিতে যেন একাকার হয়ে গেল।
আওয়ামীলীগের অনেক বড় নেতা এবং এরশাদ ও মতিউর রহমান নিজামীকে একসঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সরকার পতনের দাবিতে শরিক হতে দেখা গেল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের দাবিতে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, স্বৈরাচার---সব যেন একত্রে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিন।
মূল কথায় ফিরে আসি। সেসময় সেই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল একটাই, বিএনপি সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ, ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কিন্তু খালেদা জিয়া বিরোধীদলগুলোর কোনো কথাই কানে নিলেন না। উল্টো তিনি বলতে লাগলেন পাগল ও শিশু ছাড়া কোনো নিরপেক্ষ মানুষ নেই। সুতরাং বিরোধীদলগুলোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। যেন কাটা ঘায়ে লবণ ও লেবুর রস ঢালার মত অবস্থা। এরপর বিরোধীদলগুলোর আন্দোলন যেন একেবারে তুঙ্গে উঠতে লাগল, প্রেসক্লাব থেকে বায়তুল মোকাররম পর্যন্ত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য থাকতো, কোথাও তিল ধারণের জায়গা থাকতো না, সবাই সবার বন্ধুর মতো, কেউ কারো শত্রু নয়। দমন-পীড়ন ছাড়া জনগণের উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। অসহযোগ আন্দোলনকারীদের যেন একটিই দাবি ছিল তখন এবং তা হল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। আর সে দাবি হাসিল না করে ঘরে ফেরা যেন দায়। কিন্তু হায়! জনগণ কি চায়, খালেদা জিয়ার তাতে কী আসে যায়!  খালেদা জিয়াকে সে সময় জেদ যেন আরো আঁকড়ে ধরেছিল। তিনি জনগণের কথায় কোনো কর্ণপাত না করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের ডাক দিলেন। আওয়ামীলীগসহ সকল বিরোধীদল ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই নির্বাচন যথারীতি বয়কটও করলেন। বিএনপি এককভাবে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩০০টি আসনের সবক’টিতে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদে উপবিষ্ঠ হলেন।
খালেদা জিয়া হলেন সেই সংসদের আবারো প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাতে কি? কে কার কথা শোনে? না সরকার বিরোধীদলগুলোর, না বিরোধীদলগুলো সরকারের। ততদিনে বিরোধীদলগুলোর আন্দোলনের বিষবাস্পে ঢাকার আকাশ উত্তপ্ত হয়ে উঠল। এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে, খালেদা জিয়া ও তাঁর সদ্য নির্বাচিত সরকারের পক্ষে সেই তাপীয় আকাশকে শীতল করা প্রায় অসম্ভবপর হয়ে পড়ল। পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। অবশেষে খালেদা জিয়া তাঁর জেদ থেকে সরে আসতে বাধ্য হলেন এবং অনন্যোপায় হয়ে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে সদ্য নির্বাচিত সাংসদদের নিয়ে সংবিধানের একটি সংশোধনী আনলেন। সংশোধনী অনুযায়ী, তাতে একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হল। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
১৯৯৬ – ২০০১ : বিচারপতি হাবিবুর রহমান, জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার
অসহযোগ আন্দোলনের ফলে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন হল তাঁর প্রধান ছিলেন তৎকালীন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান। তিনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কালবিলম্ব না করে জুন মাসের ১২ তারিখে যথারীতি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন একটি নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন। মানুষ সে নির্বাচনে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছিল। তারপর নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেল যে,  বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জাতীয়সংসদের মোট ৩০০টি আসনের মধ্যে সর্বমোট ১৫১টি (প্রথমে ১৪৬টি) এবং মোট ভোটের ৩৭.৪% পেয়েছিল। বিএনপি ১১৬টি (মোট ভোটের ৩৩.৬%), জাতীয় পার্টি ৩২টি (১৬.৪%), জামায়াতে ইসলামী ৩টি (৮.৬%), ইসলামী ঐক্যজোট ১টি (১.১%), জাসদ (রব) ১টি (০.২%) এবং স্বতন্ত্র ১টি (১.১%) আসনে জয়লাভ করেছিল। দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা এটিকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল। যদিও বিএনপি প্রধান বেগম খালেদাজিয়া এই নির্বাচনে পুকুরচুরি হয়েছে বলে সংজ্ঞায়িত করেছিল। পুকুরচুরি? এটা আবার কি? নির্বাচনে পরাজয় হলে একটা কিছু বলতে হয় এটা সেরকমই কিছু একটা। যেমন শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর “সূক্ষ্ণ কারচুপি” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এখন তো আর “সূক্ষ্ণ কারচুপি” শব্দটি খালেদা জিয়ার জন্য এভেইলেবল না, তাই তিনি এর বিপরীত শব্দটি খুঁজে পুকুরচুরি ব্যবহার করেছিলেন।
 সে যাই হোক, নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃতে আওয়ামীলীগ জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার গঠনের ঘোষণা দিলেন এবং সেই সরকারে এরশাদের জাতীয় পার্টির একজনকে (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) ও জাসদের আ স ম রবকে মন্ত্রিপরিষদে অন্তর্ভূক্ত করলেন। এরশাদ যদিও আওয়ামীলীগের জাতীয় ঐক্যমত্যের সেই সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল মাত্র কিন্তু কখনো কোয়ালিশনে অংশগ্রহণ করেননি এবং প্রায় এক বছর পর ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের প্রতি সেই সমর্থনও তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এরই মধ্যে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সংসদে যোগ দেওয়া ও না-দেওয়ার মধ্যে সময় পাড় করতে থাকলেন। গঠনমূলক কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে না গিয়ে হরতাল ও সাধারণ ধর্মঘট দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে থাকলেন। সেই সময় বিরোধীদলগুলো সরকারকে বড় ধরণের কোনো বেকায়দায় ফেলতে না পারায় আওয়ামীলীগের তথাকথিত জাতীয় ঐক্যমতের সরকার নির্বিঘ্নে পাঁচটি বছর অতিবাহিত করলেন। তবে শেষ সময়ে এসে এই সরকার ট্রান্সফার ও ওএসডি সহ প্রশাসনিক রদবদলের কিছু কাজ করছিল বলে পত্রপত্রিকায় অভিযোগ ওঠে এবং সেই রদবদলের অপকৌশলগুলো পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করবে বলে অভিযোগ উঠেছিলো। আর যে কারণে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের জন্য মনোনীত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান নিরপেক্ষতার তাগিদে প্রথমেই কয়েকজন সচিবসহ প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক রদবদল করেছিলেন। বিয়ের প্রথম রাতেই বিড়াল মারার মতো অবস্থা। আওয়ামীলীগ বেশ হচকচিত হয়ে উঠেছিল বিচারপতি লতিফুর রহমানের প্রথম দিনের সেই কর্মকাণ্ডে ।
২০০১–২০০৭: বিচারপতি লতিফুর রহমান, জোট সরকার, ১/১১
২০০১ সালের অক্টোবর মাসের ১লা তারিখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধানে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। সেই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভূমিধস পরাজয় আর বিএনপির নিরঙ্কুশ জয় ছিল চোখে লাগার মতো। বিএনপি মোট ৩০০টি আসনের মধ্যে ৪১.৪% ভোট পেয়ে ১৯৩টি এবং আওয়ামীলীগ ৪০.০২% ভোট পেয়ে মাত্র ৬২টি আসন পেলো। সেই নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি মোট ১৪টি (৭.২২%), জামায়াতে ইসলামী ১৭টি (৪.২৮%) এবং জাতীয় পার্টির বিচ্যুত অংশ ও অন্যান্য ছোট ছোট দলগুলো মিলে মোট ১৫টি (৬.৪৭%) আসন পেলো। আওয়ামীলীগ কিছুতেই এই পরাজয় মেনে নিতে পারছিলো না। তাঁরা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংসহ নানা অভিযোগ এনে বিচারপতি লতিফুর রহমানের সেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো। ফলাফল অনুসারে বিএনপি-জামায়াত মিলে ২০০১ সালে জোট সরকার গঠন করল। প্রথা অনুযায়ী খালেদা জিয়া হলেন সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী। জামায়াতের দুজন সদস্য সেই সরকারের আমলে হলেন কেবিনেট মন্ত্রী। আহা! দেশের মানুষকে কি না এক মন্ত্রিপরিষদ উপহার দিলেন খালেদা জিয়া। যেন সুস্থ হার্টে ক্যান্সারের অনুপ্রবেশ। মানুষ অবাক হয়ে দেখতে থাকল কিভাবে বাংলার মাটিতে নিজামী-মুজাহিদরা তাঁদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা হাঁকিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ালেন। শুধু তাই নয়, এই জোট সরকার যত সময় অতিবাহিত করতে লাগল তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লাও তত দুর্বিষহ ভারী হতে থাকল।
অভিযোগ আছে জোট সরকারের শাসন আমলের প্রথমের দিকে প্রকারান্তরে তাঁদের মস্তান ও দলীয় ক্যাডাররা সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রচণ্ড হেনস্থা করেছিল। সেই সঙ্গে শুরুতেই জোট সরকার ব্যাপক হারে প্রশাসন রদবদলের কাজটিও সেরে ফেলেছিল। তাছাড়া দুর্নীতি, হাওয়াভবন, স্বজনপ্রীতি, বাংলাভাই সহ নানা কু-কীর্তি এ সরকারের আমলে মানুষ তাঁদের খালি চোখে দেখতে পেত। ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথা না হয় বাদই দিলাম। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২০০৪ সালের ২১শে অগাস্ট জনসভায় গ্রেনেড হামলা হল ও আইভী রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে পড়ল। এটা ছিল এক সভ্য সমাজে বীভৎস দৃশ্য। সেই ঘটনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ লুৎফুজ্জামান বাবর প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করতে গিয়ে জজমিয়া সহ কত না নাটকের অবতারণা করেছিলেন! আহা রে,  মিঃ বাবর-আপনি এখন জেলে এবং সেই মামলারই রাজসাক্ষী। এসব ছাড়াও মানুষ ২০০৫ সালে সারাদেশে একসঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে হলিউড মুভির দৃশ্যের মতো সুইসাইড অ্যাটাকের দৃশ্যও অবলোকন করল। ‌‌ ‘‘আমরা হব তালেবান বাংলা হবে আফগান’’- এ ধরণের স্লোগান দিতেও শোনা গেল এক ধরনের উগ্রপন্থীর মুখে। ইসলামের নামে দেশে একধরনের উগ্রপন্থার চর্চা দেখা গেল। জোট সরকারের সময়ের এ ঘটনাগুলোকে মানুষ এখনো হজম করতে পারেনি। পারবেই বা  কী করে? এ তো সেদিনের টাটকা ঘটনা। হয়তো ভুলে যেতে কিছু সময় লাগবে? কিন্তু আসলে ভুলতে পারবে কি মানুষ সেগুলো?
তাঁর উপর যুক্ত হল জোট সরকারের শেষ সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের হীন দৃশ্যগুলি। কে হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান এবং সেই প্রধান ব্যক্তিকে নিজেদের অনুকূলে পাবার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের অবসর গ্রহনের বয়স বাড়ান হল। সে এক বিরাট নাটকের অবতারণা হল। উল্লেখযোগ্য ছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আজিজের পদত্যাগ করা বা না করার প্রেক্ষাপট, প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদের সংবিধান উপেক্ষা করে সশরীরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে উপবিষ্ট হওয়া ও তাঁর উপদেসটাদের মধ্যে কারো কারো হঠাৎ করে পদত্যাগ করা ও তাঁদের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া ও সুদূর টানেলের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো উপদেসটার আশার আলো দেখার সন্ধান পাওয়া, গুলশানের এক বাড়িতে রাতের অন্ধকারে সাবেক জ্বালানি উপদেসটার নেতৃতে কিছু সচিবের একত্রে গোপন বৈঠক ছিল অভিনব, অশান্তি বিস্তৃত ঢাকাতে নির্বাচনের কালো মেঘের প্রাক্কালে লুকোচুরি খেলার অংশ হিসাবে জাতীয় পার্টির এরশাদকে নিয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দলের দরকষাকষি ও টানাটানি, এবং মানুষ হত্যা করে সেই মৃত মানুষের উপর লাফালাফি ও আনন্দ উল্লাসের মতো হীন দৃশ্যগুলো সে সময় মানুষকে চরম ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত করে তুলেছিল। এ সময় ঢাকা যেন হতে চলেছিল এক ভয়াবহ অচল নগরী। মানুষ মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। সে কি যেন এক অবস্থা। গৃহযুদ্ধ গৃহযুদ্ধ ভাব। মনে করতেই গা শিহরে উঠে। মানুষ যেন শান্তির দুয়ারের দিকে তাকিয়ে ছিল। এমন সময় কূটনৈতিক পাড়াতে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের তৎপরটা আকস্মিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। সামরিক শাসন আসবে আসবে ভাব এ রকম চিন্তাসহ নানারকম জল্পনা কল্পনা মানুষের মনে আবির্ভূত হতে লাগল। সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে শেষপর্যন্ত বিশিষ্ট ব্যাংকার ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের অধীনে গঠিত হল একটি বহুল কাঙ্ক্ষিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সে সরকারের পিছনের শিরদাঁড়া হয়ে শক্ত ডাণ্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ। আপামর সাধারণ মানুষ সে সময় অবশ্য এই সেনাপরিবেষ্টিত সরকারকে ব্যাপকভাবে সমর্থন দিয়েছিল। সৃষ্টি হয়েছিল ১/১১। আর এই ১/১১ এর সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অগণতান্ত্রিকতা ও রাজনীতিকদের মধ্যে চরম বিশ্বাসহীনতা, হীনমন্যতা, ও অদূরদর্শিতার কারণেই।
২০০৭ -২০০৯ : ফখরুদ্দীন আহমেদ, ভোটার আইডি-ভোটার লিস্ট ও মাইনাস টু
 ১/১১ সৃষ্টি হলে মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। ফখরুদ্দীন আহমেদের ১/১১ এ সৃষ্ট এই সরকার মানুষকে প্রথমেই বেশ চমকও দেখিয়েছিল। তাঁরা সদ্য বিদায়ী জোট ও তাঁর আগের জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকারের দুর্নীতিবাজ এমপি ও মন্ত্রীদের একে একে ধরে জেলে ঢোকালো, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করল, কারো কারো সাজাও হল। দুর্নীতিবাজ কেউ কেউ পালিয়ে থাকল। হাওয়া ভবনের উদ্ভাবক তারেক রহমানকে ও তাঁর ছোট ভাই কোকোকে ধরে ফেলল। তাঁদের দুর্নীতির ফিরিস্তি একের পর এক বের হতে লাগল। দুজনকেই বেশ উত্তম মধ্যম দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হল। মাইনাস টু ফর্মুলার অংশ হিসাবে শেখ হাসিনাকে আমেরিকাতে পাঠানো হল। খালেদা জিয়াকে সৌদি আরবে পাঠাতে পাঠাতে আর পাঠাতে পারল না। বিএনপি ও আওয়ামীলীগের দিগ্বিদিকভাবে বিচলিত কিছু রাজনীতিককে দিয়ে রাজনৈতিক সংস্কারের নামে নূতন দল গঠনের চেষ্টা করা হলো। সম্মানিত নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে দিয়ে তাৎক্ষনিক রাজনৈতিক গ্যাপ পূরনেরও চেষ্টা করা হয়েছিল। রাজনৈতিক পরিশোধনের নামে সময় যত বেশি গড়াতে থাকল, এই সরকার তত বেশি গ্রহণযোগ্যতা হারাতে লাগল। তদুপরি সারাদেশে খাদ্য ও বিদ্যুতের ব্যাপক সংকট দেখা দিল। সরকারের ভিত যেন আর নড়বড়ে হতে লাগল।
এরই মধ্যে অবশ্য ফখরুদ্দীন আহমেদের সরকার অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ সম্পন্ন্ করেছিল: ভোটার আইডি ও ভোটার লিস্ট। পূর্বের জোট সরকারের করা প্রশ্নবিদ্ধ ভোটার লিস্ট থেকে ১১ মিলিয়ন মিথ্যা ভোটারকে বাদ দিয়েছিল এবং একটি পরিচ্ছন্ন্ ভোটার লিস্ট উপহার দিয়েছিল। তারপর ফখরুদ্দীন আহমেদ তড়িঘড়ি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারিখ নির্ধারণ করলেন। সে তারিখ দু’একবার পেছানও হয়েছিল। এরই মাঝে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ৬ই নভেম্বর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরলেন। তারপর নূতন ভোটার আইডি ও ভোটার লিস্ট ব্যাবহার করে ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর সম্পন্ন হল একটি বহুল কাঙ্ক্ষিত, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচন। শেখ হাসিনার নেতৃতে মহাজোট বিপুলভাবে জয়লাভ করল। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় ঐক্যজোটের ভরাডুবি হল। ৩০০টি আসনের মধ্যে মহাজোট পেলো ২৬৩টি (মোট ভোটের ৫৭.১%), আর চারদলীয় ঐক্যজোট মাত্র ৩৩টি (৩৭.৯%) এবং অন্যান্যরা পেল মাত্র ৪টি (৪.৯%)। মানুষের মধ্যে এও বলতে শোনা গেল এ যেন স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের মধ্যে লড়াই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ বিএনপির ও হাওয়া ভবনের সেই দুঃশাসনের বিরুদ্ধেই যেন জবাব দিয়েছিল।
২০০৯ – ২০১২ : মহাজোট সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অবসান
শেখ হাসিনার নেতৃতে মহাজোট মহাউল্লাসে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করল। এরই মধ্যে এ সরকার তিন বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত করেছে। এখনো প্রায় দুবছর বাকি। কিছু সাফল্যের পাশাপাশি নানা সমালোচনায় জর্জরিত এ সরকার। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ফিরিস্তি ক্ষমতায় থাকতে কতোটুকু আমরা জানতে পারি। সময়ে সব উত্তর মানুষ ঠিকই জেনে যায়। ছাত্রলীগের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। যারা ক্ষমতায় থাকে, তাদেরই ছাত্র সংগঠন অন্যায় করার এই ফ্রি লাইসেন্স পেয়ে যায়। শুধু ক্ষমতা এ হাত থেকে ঐ হাত বদলায়, কিন্তু মানুষের দুর্বিষহ যন্ত্রণার কোনো অবসান হয় না। গ্যাস, বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানির অভাব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জনসংখ্যার ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি উৎপাটন, বেকার সমস্যা, সন্ত্রাস, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, যোগাযোগ দুরাবস্থা সহ কত যে সমস্যা দেশে তাঁর কোনো ইয়ত্তা নেই। নাগরিক এই সুবিধাগুলো যেন শুধু চাইবার জন্য পাবার জন্য নয়। আমরা শুধু এতদিন আশার কথাই শুনে গেলাম, কিন্তু কতোটুকু পেলাম। এ সব সুবিধা যারা দেবে তাঁরা তো শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই সর্বদা মহাব্যস্ত থাকে। সাধারণ জনগণ কি পেল আর না পেল তা ভেবে দেখার সময় কতোটুকু আছে তাঁদের হাতে? রাজনৈতিক দলগুলো কে কার সঙ্গে জোট বাঁধবে পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা পাকাপাকি করার জন্য এ যেন তাঁদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোক সে স্বৈরাচার বা রাজাকার তাতে কি? ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সবই যেন বৈধ। ক্ষমতার এই হানাহানি ও পালাবদলে গত বিশ বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসাবেযুক্ত হয়েছে। একবার এ চায় তো ও আর চায় না। আর ক্ষমতায় থাকাকালে এ ব্যবস্থার প্রয়োজন শেষ মনে হয় আর ক্ষমতা হারালেই এর ভীষণ দরকার হয়। ঘুরে ফিরে আবারো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। কারণ আওয়ামীলীগ (মহাজোট) এখন ক্ষমতায়, তাঁদের আর এটার কোনোই দরকার নাই। তাঁরা সংসদে তাঁদের মেজরিটির অহংকারে এই ব্যবস্থাটিকে সংবিধান থেকে চিরতরে মুছেই ফেলেছে। তাঁরা মনে করে যে, তাঁদের প্রতি বাংলাদেশের ১০০% লোকের আস্থা ফিরে এসেছে যে, তাঁদের অধীনে যে নির্বাচন হবে মানুষ তা মেনে নেবে।
হায়রেঃ আস্থা! যারা দুজন মানুষ এক টেবিলে বসে মুখ দেখা দেখি করেন না, বা কোনো ডিসিশন নিতে পারেন না, সেখানে সারা দেশের মানুষ তাঁদের প্রতি কি করে আস্থা রাখে? অন্যদিকে বিএনপি প্রধান খালেদাজিয়া এখন ক্ষমতার বাহিরে, তাঁর এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটির খুব বেশি দরকার পড়েছে। অথচ যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি পাগল ও শিশু ছাড়া কাউকে নিরপেক্ষ দেখতে পাননি। তিনি ও বিএনপি এই ব্যবস্থাটিকে আবারো সংবিধানে অন্তর্ভূক্তির জন্য মাঠে নেমেছেন। কি ঘটবে বা কি হতে চলেছে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। তবে অতীত বা পিছনের দিকে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, এ সমস্যা অচিরেই মিটবে না। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে অতীতে অনেক অঘটন ঘটেছে। রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দলগুলো সাধারণ জনগণকে ঢাল হিসাবে সামনে রেখে তাঁদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য হিংস্রতা, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন, হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধের মাধ্যমে দেশকে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিতে কুণ্ঠিতবোধ করেন নি। বার বার সাধারণ মানুষ যেন তাঁদের অদূরদর্শী রাজনীতিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। গত ২১ বছরে তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিষয়টিকে পর্যন্ত সুরাহা করতে পারেনি। তাঁরা মিলেমিশে একত্রে বসে একসঙ্গে আজো পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এই ব্যবস্থাটির আদৌ প্রয়োজন আছে কি না। ক্ষমতায় যে আসে সে-ই যেন হয়ে যায় মহারথী রাজা মহাশয়। সংসদে মেজরিটির অহমিকায় ক্ষমতার আসনে বসে হুঙ্কার দিতে থাকে যে, তাঁরা যা ইচ্ছে তা বলতে পারে, করতেও পারে এবং করে তা দেখিয়ে দেয়। চিরতরে মসনদে বসে থাকার পাঁয়তারায় মত্ত হয়। পিছনের দিকে ফিরে তাকালে আরও দেখতে পাই যে, সুক্ষ্ণ কারচুপি, পুকুর চুরি, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, অসহযোগ আন্দোলন, জনতার মঞ্চ, ইয়াজউদ্দিন, আজিজ, মাইনাস টু, ১/১১ ইত্যাদি শব্দগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের খুব একটা সুখস্মৃতি জড়িয়ে নেই। এবং সেই দুঃসহ স্মৃতির বেড়াজালে ভবিষ্যতে আমরা আর নিজেদের আবদ্ধ করতেও চাই না। আমরা রাজনীতিকদের কাছ থেকে শান্তির কথা শুনতে চাই। শুধুই শান্তির কথা। হতাশা ও অনিশ্চয়তায় আর পিষ্ট হতে চাই না। দেখতে চাই একটা সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন। বাংলাদেশের ৩২ কোটি হাত যেন সেই দেশ গড়ার স্বপ্নে অংশ নিতে পারে। দেশ যেন অর্থনৈতিক মুক্তির আলোকে আলোকিত হয়।

ড. মো: রওশন আলম, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী।
e-mail: [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।