ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘ছায়ারঞ্জন’ ফরীদি

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১২
‘ছায়ারঞ্জন’ ফরীদি

সব্যসাচী অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিলো না। সামান্য হ্যালো-হাই আর দু’একটা নিবিড় আডডার স্মৃতিও প্রায় পঁচিশ বছরের পুরোনো।

বেঁচে থাকলে তিনি নামে কিংবা চেহারা, কোনটাতেই আমাকে স্মরণ করতে পারতেন না যৌক্তিক কারণেই।

আটাত্তর-ঊন আশিতে কবি সোহেল অমিতাভের ‘প্ররোচনায়’ আমরা এক দঙ্গল তরুণ মঞ্চনাটক নিয়ে মাতি। কিন্তু ‘কৌন বনেগা শের’ কামড়াকামড়িতে বরেণ্য এস এম সোলায়মান ও  গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গ ত্যাগ করে নঈম গওহর, দুলাল জুবাইদ, তপন জ্যোতি, রেহানা পারভীনকে নিয়ে আমাদের ‘জনপদ’ যাত্রা। সোহেল মানুষকে ’সর্বগ্রাসীভাবে’ অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত করতে পারতেন। আমি দলে এসেছিলাম গ্রুপ থিয়েটারের সাথে জড়িত এই ’ভাব ভঙ্গিমার’ জন্যে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়ার খায়-খর্চা মেটানোর তাগিদে আমি দৈনিক দেশ-এ   রয়টারের সংবাদকে বাংলায় অনুবাদ করতাম।

আমাকে নাট্যকার বানানোর সোহেল-দুলাল-তপন দা’র যৌথ জেদে আমি নাটক নিয়ে লেখাপড়া করি, লাইটম্যান সিরাজ ভাই’র সাথে মহিলা সমিতির দোতলায় বসে বিনে পয়সায় বিভিন্ন দলের নাটক দেখি। শত হোক নাটক দেখায় হাতে-কলমের জ্ঞানার্জন হবে! সেই সুবাদেই মহিলা সমিতির বারান্দায় ’শকুন্তলা’র ’অর্ক্’ ফরিদী ভাইয়ের সাথে দেখা। নির্বিকার মুখের জোকস শুনেতো আমি কুপোকাৎ। আমাদের নিখোঁজ বন্ধু সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন জ্যোতির সাথে ফরিদী ভাইর ফ্রিকোয়েন্সি মিলে গিয়েছিলো। বিভিন্ন দলের নাটকের শোর আগে-পরে, মেকাপম্যান বংগজিৎ দা ও লাইটম্যান সিরাজ ভাইয়ের সাথের আড্ডায়, সেট টানাটানিতে দেখা সাক্ষাৎ হতো। তখনো মঞ্চ নাটকে আমার স্টার রইসুল ইসলাম আসাদ আর পীযুষ দা। আফজাল ভাইতো তখনই টিভি-তারকা। বন্ধুদের উৎসাহে ’ফ্লপ’ নাট্যকার হলেও মঞ্চ নাটকের নেশা কাটেনি।

সাপ্তাহিক খবরের কাগজের উদ্বোধনী সংখ্যায় ‘মামু’ সেলিম আল-দীনের ‘কিত্তনখোলা’র প্রথম শো দেখে রিভিউ দেখার দায়িত্ব পেলেন ‘সকাল-সন্ধ্যা’র শাকেরা বু খ্যাত বান্ধবী রীনা সুলতানা। হলে ঢুকে দেখি কি বিশাল সেট! নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ভাই তখন মঞ্চ নাটক পাগল তরুণদের একমাত্র আইডল। বাচ্চু ভাই’র নির্দেশনায় সেলিম আল দীনের রচনার মঞ্চায়ন ! নাট্যকর্মীদের হল উপচে পড়া ভিড়। নাটক যতো এগোয় ততই মুগ্ধতা এসে ভর করে সবার মধ্যে। অসাধারণ অভিনয় সবার। সবাই চরিত্রের সাথে মিলে মিশে একাকার। কিন্তু সব ঔজ্জ্বল্য ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ‘ছায়ারঞ্জন ফরিদী।   কী সংলাপ প্রক্ষেপনে, কী অভিনয়ে ফরিদী ভাই আর ছায়ারঞ্জন হয়ে উঠলো সমার্থক। ‘কবি হয়ে যাবো’ ধরনের বাচাল আবেগে ‘না যশোর চলে যাবো’ সংলাপের সাথে ফরিদী ভাই’র জীবনের বোহিমিয়ান চরিত্র মিলে মিশে গিয়েছিলো। বেলী ফুলের মালা বদলে মিনু আপার সাথে বিয়ে কিংবা হঠাৎ সম্পর্ক ত্যাগের ফরিদী ভাইকে বোহিমিয়ান ছাড়া কি বলা যেতে পারে?  ছায়ারঞ্জনের অভিনয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে পরে অবশ্য আমিই রিভিউটা লেখি-পাক্কা আট কলাম, পূর্ণ পাতা।

ফরিদী ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ কখনোই ছিলো না কিন্তু ছায়ারঞ্জন চরিত্রটি গেঁথে গিয়েছিলো মাথায়। এই একটি চরিত্রের কারণেই ফরিদী ভাইর ভক্ত হয়ে আছি। টিভিতে উনার অনেক নাটক দেখেছি। হলে গিয়ে দু’একটা মারদাংগা ছবি দেখার সৌভাগ্যও হয়েছিলো।

প্রিয় অভিনেতার মৃত্যু একজন ভক্তের কাছে নিদারুণ বেদনার। বেদনার নীল রঙে ডুবে আছি।

ইমেলঃ [email protected]
বাংলাদেশ সময় ১৩২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।