ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

চলে গেলেন আমাদের পর্দাহিরো

ফজলুর রহমান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১২
চলে গেলেন আমাদের পর্দাহিরো

ক্রমশ মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে আমাদের শহর। নিকট অতীতে শহর ছেড়ে চলে গেছেন পণ্ডিত হুমায়ুন আজাদ।

শহরের অন্যরকম আলো কবি শামসুর রাহমান। সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো মিশুক মুনীর, তারেক মাসুদকে। তার আগে অসীম পরপারে পাড়ি দিয়েছেন সুরের মানুষ সঞ্জীব চৌধুরী। আজ বসন্তের প্রথম সকালে বাসন্তী রংয়ের প্লাবন আর কোকিলের গান উপেক্ষা করে চলে গেলেন ‘আমাদের পর্দাহিরো’ হুমায়ুন ফরিদী। একে একে সব মেধাবী, সৃষ্টিশীল মানুষদের প্রস্থান হচ্ছে। বেদনার রং দিগন্ত ছাপিয়ে যাচ্ছে।

অনেক ‘না’র বিপরীতে এখনো এ-শহরকে ভালোবাসি। কণ্ঠ ছেড়ে বলি –‘এটা আমার শহর। ’  আমার ঢাকা এভাবে যদি মেধাবী মানুষ, ভালো মানুষশূন্য হয়ে যায় তাহলে আমরা দাঁড়াবো কোথায়?

বিটিভি থেকে শুরু তাকে দেখা। তখন পাখির মতো ভারহীন শরীর আমাদের নায়কের। ঢাকা থিয়েটারের ‘নাটকবিপ্লবী’দের সঙ্গে মঞ্চে তিনি এক রকম সম্রাট। মুনতাসীর ফ্যান্টাসিতে তার ঢং আর সংলাপ তখন নাটকপাগল মানুষের মুখে মুখে। এরপর মঞ্চ ছাড়িয়ে তিনি সিনেমার বড় পর্দায়। আমি কৈশোর পেরুচ্ছি। পর্দায় ববিতার সঙ্গে তার ‘দহন’ আমাদের ভেতর অন্য এক যন্ত্রণার আগুন ছড়িয়ে দেয়। আমাদের  মঞ্চ আর টেলিভিশনের ধারণা ছাড়িয়ে যাওয়া প্রতিভা সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে ফরিদীর একটি রোমান্টিক নাটকের সংলাপ সেই কিশোর বেলায় বুকের ভেতর গেঁথে গিয়েছিলো। সবুজ ঘাসের ওপর সমর্পিত ফরীদি। দূর থেকে সুবর্ণাকে দেখেই তার সংলাপ-‘উই মাস্ট লাভ ওয়ান-এনাদার, অর ডাই’।

তারপর একটু একটু করে বড় হয়েছি তার নাটক দেখে। বাংলা সাহিত্যের আরেক জাদুকর লেখক হুমায়ূন আহমেদের ঈদের নাটকে আরেক ফরীদি উদ্ভাসিত তখন। বোকা লজিং মাস্টারের চরিত্রে তার অভিনয় আমাদের আডডার  আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। রক্ষণশীল শহুরে মধ্যবিত্তের ড্রয়িং রুমে, খাবার টেবিলে আলোচনায় উঠে আসে ফরীদির নাম। সংশপ্তকের ‘কানকাটা রমজান’ ছিল  এক সময় ব্রাত্যজনের মুখে মুখে উচ্চারিত শব্দ। মঞ্চ, টিভি আর ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র ছাড়িয়ে তিনি এক সময় ব্যস্ত হলেন মূলধারার বাণিজ্যনির্ভর সিনেমার সঙ্গে। এখানেও তার সাফল্য হিমালয়ছোঁয়া। খলনায়ক চরিত্রে নিজস্ব একটা স্টাইল তিনি তৈরি করেন। কেবল ফরীদিকে দেখার জন্যে তখন সিনেমা হলে যেতো অনেক মানুষ। এসবের মধ্যে তার ব্যক্তিজীবনে অনেক ভাংচুর ঘটেছে। কিন্তু ফরীদি তার আসনে ছিলেন অটল। অনেকের মতো তাকে পর্দায় দেখে, পত্রিকায় তার সম্পর্কে পড়ে আর  তার কথা শুনে তাকে অন্যরকম হিরো জেনেছি। আর গত শতকের নয়ের দশকের শুরুতে মোজাম্মেল বাবু সম্পাদিত সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকার জন্যে ইন্টারভিউ করতে গিয়ে প্রথম মুখোমুখি হই তার। অনেক নতুন, চিন্তাশীল কথা তিনি বলেছিলেন সেই সাক্ষাৎকারে। ফ্যান্টাসি ছিল। প্রধানমন্ত্রী হলে কী করতে চান এমন প্রশ্নে বলেছিলেন, আর্মি তুলে দেবেন দেশ থেকে।

নিজের মতো করে চিন্তা করতে, বলতে আর চলতে ভীষণ পছন্দ করতেন তিনি। ষাট বছরের ভীষণ কর্মময় জীবনে হুমায়ুন ফরিদী তা-ই করেছেন। এই মেধাবী মানুষটির জন্যে আমার ‘টুপি খোলা অভিবাদন’।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।