ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষার চেষ্টা শেখ হাসিনার!

বাবুন দাস, অতিথি লেখক (কলকাতা থেকে) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১২
দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষার চেষ্টা শেখ হাসিনার!

কলকাতা: তিস্তার জল বণ্টন চুক্তির বিরোধিতা, ফারাক্কা দিয়ে বেশি জল পাচ্ছে বাংলাদেশে বলে দাবি, সর্বশেষ বেনাপোল সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ডে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দু’দেশের অমর একুশের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পর বলতে ইচ্ছা করছে, ‘দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষার চেষ্টা করেছিলেন শেখ হাসিনা। ’

পশ্চিমবঙ্গের মানুষ গত ৯ মাসে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন পরিবর্তন নামক সোনার পাথরবাটিকে।

ঋণের দায়ে শত কৃষকের আত্মহত্যা, সরকারি হাসপাতালে ৭৫টি শিশুর মৃত্যু, কলকাতার প্রধান সড়কে নারী ধর্ষণের ঘটনা, এই সব কিছুই যেন সব এলোমেলো করে দিচ্ছে।

মনে পড়েছে ৯ মাস আগের ঘটনা, বিপুল জয়ের খবর আসছে, ভেঙে পড়ছে দীর্ঘ দিনের বাম শাসন পশ্চিমবঙ্গে। তার অবশ্য অনেক আগেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে সাধারণ মানুষসহ ঢাকার রাজনৈতিক মহল এর মধ্যে দু’একটি বামদল বাদে সবাই আপনার মতো মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে সখ্যতা গড়তে উঠে পড়ে লাগেন। ভুলে যান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে এখন পর্যন্ত আপনাদের বিশ্বস্ত বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের বামেদের।

সেদিন মমতার মতোও আপনারাও বলতে শুরু করেন, এবার পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তন দরকার। ভুলে যান সেই মানুষটির কথা যিনি বলছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ যদি এক গ্লাস পানি বেশি খায়, খাক না। তাতে যদি বাংলাদেশে মৌলবাদ আর জঙ্গিদের ঠেকানো যায়।

সেদিন প্রতিবেশী দুটি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের নায্যতার কথা ভেবে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জননেতা জ্যোতি বসু। আর তাকে যিনি জীবিত থাকাকালীন বিভিন্ন কুৎসা শুধু নয় ব্যক্তি আক্রমণ করতে পিছপা হননি সেই মমতাকে আপনজন ভাবতে আপনার একবার কুণ্ঠাবোধ হয়নি।

তাই সেদিন নির্বাচনের ফলপ্রকাশ চলাকালীন এক নারী সাংবাদিক হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে বসে আপনার আগাম শুভেচ্ছা বার্তাও পৌঁছে দেন তাকে। শুধু তাই নয়, প্রথা ভেঙে আপনিও তাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান।

মমতা সেদিন সাংবাদিকেদের বলেন, হাসিনাদি  আমাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, আমি বলেছি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।

এইসব ভেবেই আপনি তাকে বাংলাদেশে সফরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তিনি এলেন না। আপনার বিশেষ দূতরা মহাকরণে গিয়েও তার মনের বরফ গলাতে পারলেন না। তার এই কাজের জন্য অপমানিত হলেন ড. মনমোহন সিং। অপমানিত বোধ করলাম আমরা সাধারণ ভারতীয়রা।

এখানেই শেষ নয়, এরপরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি কলকাতায় গিয়ে দেখা করেও তার মন জয় করতে পারলেন না। তিনবিঘা করিডোরে আপনি গেলেন, কিন্তু প্রটোকল মেনে তার যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি গেলেন না। সাধারণ মানুষ হিসাবে যতটুকু বুঝি এটা কূটনৈতিক শিষ্টাচার নয়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হিসাবে এটা আমাদের লজ্জা।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সর্ম্পক অত্যন্ত নিবিড়। তখনকার পাকিস্তানি শাসকদের কারণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ কম থাকলেও মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ থেমে থাকেনি। মানুষের সঙ্গে মানুষের সেই যোগাযোগাকেই তো আপনি কানেকটিভিটি হিসাবে দেখছেন। ৪৭-এর দেশভাগ থেকে শুরু করে ৭১-এ বাংলাদেশের জন্ম এবং এরপরেও বেশ কিছুকাল ধরে বাংলাদেশর মানুষের একটি স্থাবর সর্ম্পক পশ্চিমবঙ্গের সাথে গড়ে ওঠে। আজও কলকাতাসহ উত্তরে কোচবিহার থেকে শুরু করে দক্ষিণে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত লাখো মানুষকে পাওয়া যাবে যাদের বাংলাদেশে সাথে আত্মিক সর্ম্পক রয়েছে। কয়েকযুগ ধরে এরা হয়তো বাংলাদেশে আসেন না কিন্তু তাদের হৃদয়ের প্রায় পুরোটা জুড়েই থাকে বাংলাদেশের নাম।

সত্তরের দশক থেকেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারে মুখ্যমন্ত্রী, এমপি, বিধায়ক এমনকি সাধারণ কর্মী পর্যন্ত এমন অনেকেই ছিলেন যারা হয় নিজেরা অথবা তাদের পূর্বপুরুষ তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে যাওয়া। কাকতালীয়ভাবে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারে উচ্চ ও মাঝারি পর্যায়ের নীতি নির্ধারকের কারোই পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গের উত্তরাধিকার বহন করেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এ ধরনের একজন মানুষ।

জাতিগত উত্তরাধিকার থাক বা না থাক, পাশাপাশি দুটি দেশের মধ্যে সুসর্ম্পক বজায় রাখা যেকোনো মানুষের বিশেষত রাজনীতিবিদদের অবশ্য কর্তব্য। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। যিনি পূর্ববঙ্গের উত্তরাধিকার বহন না করা সত্তেও বাংলাদেশ ও বাঙালি জন্য একজন অন্তঃপ্রাণ রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে প্রণববাবুর ব্যক্তিগত অনেক উদ্যোগ মমতা ব্যানার্জির কারণে আজ ভেস্তে যাচ্ছে, যা কলকাতার মানুষের মুখে মুখে ফিরছে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কূটনীতির মমতা অধ্যায়টিকে শেখ হাসিনার নতুন করে ভাবতে হবে বলেই মনে হচ্ছে। মমতার সঙ্গে সর্ম্পক উন্নয়নের চেষ্টা করে আপনার আর কোনো লাভ হবে না এটা নিশ্চিত। নয়াদিল্লিতে থাকা কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে কূটনৈতিক প্রাজ্ঞতা দিয়ে দুই দেশের বিবদমান সমস্যাগুলো সমাধানই এখন আপনার সরকারের মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।   এবিষয়ে মমতা ও তার দল তৃণমূলকে পাশে না পেলেও পশ্চিমবঙ্গের একটি বড় অংশের মানুষকে পাশে পাবেন, এটা নিশ্চিত। যার প্রমাণ গত চার দশক ধরে আমরা দেখিয়ে এসেছি বার বার, ইতিহাস তার সাক্ষী।

লেখক: বাংলানিউজের পাঠক, কলকাতা, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।