দেশের উচ্চ আদালতে মামলা করা একটি যুদ্ধের মত বিষয় মনে হতে পারে যদি আপনি স্বল্প শিক্ষিত হোন বা ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা না থাকে আপনার।
দেশের অধ:স্থন আদালত গুলোতে বাংলায় মামলা পরিচালনা করা হয় সবার বোঝার জন্য।
অদ্ভুত নিয়ম! যার কারণে উচ্চ আদালতে আইনজীবী ছাড়া আপনি এক পা নড়তে পারবেন না। এবং তার ফলাফল দুর্নীতি, আপনার আর্থিক ক্ষতি, না জেনে জিম্মি হয়ে থাকা।
উচ্চআদালত থেকে রেডিও-টিভিতে বাংলা ভাষার বিকৃত উপস্থাপনা বন্ধের জন্য বলা হয়েছে। নি:সন্দেহে এটি একটি ভাল সিদ্ধান্ত।
কিন্তু বিচার বিভাগের সর্বস্তরে এখনো বাংলার চর্চা হচ্ছে না। যদিও বলা হচ্ছে, কিছু কিছু আইনি শব্দ ইংরেজিতে প্রচলিত যার বাংলা করা যায় না। তারপরেও সাধারণ কিছু ইংরেজি শব্দের বাংলাও করা হচ্ছে না কেন?
হাইকোর্ট ১৬ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছে, “আমরা আদেশ জারি করছি যে, বাংলা ভাষার পবিত্রতা রক্ষা করতে সর্বোতভাবে চেষ্টা করতে হবে। এই ভাষার প্রতি আর কোনো আঘাত যাতে না আসে সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।
হাইকোর্ট আদেশে আরো বলা হয়েছে, “যারা ভিউয়ার, লিসেনার বলে, তাদেরকে এই আদালতে এসে প্রমাণ করতে হবে- এই শব্দের যথাযথ বাংলা নেই।
কিন্তু সংবিধানে সুপ্রীম কোর্ট শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছ। অর্থা সুপ্রীম কোর্ট-এর ‘যাথাযথ বাংলা হিসাবে সর্বোচ্চ আদালত ব্যবহার করা হয় না। ইংরেজি ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত শব্দবন্ধে আদালত শব্দটা ফার্সি অরিজেনের, তাই কি এটি যথাযথ বাংলা নয়? হাইকোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে, উচ্চ আদালত নয়। কিন্তু, অন্যক্ষেত্রে আবার ‘অধঃস্তন আদালত ব্যবহার করা হয়েছে, ইংরেজি নয়।
সংবিধানের ১৫৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাটা প্রাধান্য পাবে। `` অর্থাৎ বাংলাকে সর্বোচ্চ মযার্দা দেয়া হয়েছে।
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইছে। প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার’ অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উচ্চ আদালতে কেন বিচার প্রার্থীরা বাংলায় বিচার চাইতে পারবে না?
আদালতের ভাষা সবার জন্য সহজবোধ্য করার জন্য কেন আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না?
ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৬০ বছর পরও উচ্চতর আদালতে বাংলা ভাষায় বিচারকার্য ও রায় লেখা চালু হয়নি। তবে গত কয়েক বছর কিছু বিচারকের বাংলায় রায় লেখার প্রবনতা দেখা গিয়েছে। উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় দেয়ার প্রচলন রয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদের সময় (বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৮৮৭) বাংলা ভাষায় বিচার কার্যক্রম ও রায় দেয়ার বিষয়ে আইন হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এক রায়ে বলা হয়েছিল, ইংরেজি ভাষাতেও রায় লেখা যাবে। এখনো বাংলায় রায় দেয়াসহ বিচারিক কার্যক্রম দেয়ার জন্য আইন হতে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগে কোন কোন বিচারক ভাষার মাসকে বিবেচনায় রেখে ২/১টি রায় বাংলা ভাষায় দিলেও আদালতে ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে বাংলার প্রচলন নেই।
উচ্চতর আদালতে বাংলা ভাষার প্রয়োগ কেন নেই, কেন করা হচ্ছে না, এর সুনির্দিষ্ট জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলা ভাষা ব্যবহারে আইনগত কোন বাধা থাকলে পুর্বে বাংলায় দেয়া রায় গুলো কি আইন বিরুদ্ধো?
কোন সীমাবদ্ধতা না থাকলে বাংলাদেশ বিচার বিভাগের উভয় বিভাগের নিয়োজিত বিচারপতিরা বাংলা ভাষী হওয়া সত্তেও বাংলায় রায় দেয়াটাকে তাদের মানসিকতা বলা হচ্ছে কেন? বাংলা ভাষার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করলে উভয় পক্ষের বিচার প্রার্থীদের বক্তব্য প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরা সহজ হবে।
বলা হয়ে থাকে, রায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বর্পুণ আইনি শব্দ বিদেশি হওয়ার কারণে ইংরেজিতে রায় দেয়া হয়। যেশব্দগুলোর বাংলায় রুপান্তর করা যায় তা কেন এখন পর্যন্ত বাংলায় বলা হচ্ছে না। আইনগুলো ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলায় রুপান্তর করার কাজ শুরু করলে বিচার অঙ্গনে বাংলা প্রচলন সহজ হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চ আদালতে তাদের নাগরিকদের বোঝার জন্য তাদের নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করা হয়। যেমন ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ আদালতে বিচার কাজ চলে তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায়। কিন্তু এর বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
অন্যদিকে সংবিধানের, বহু জায়গায় বাংলা শব্দের ভুল বানান পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। যেমন : প্রস্তাবনায় `খ্রীষ্টাব্দ` ও `আশী` শব্দ দু`টি। অথচ এদের প্রকৃত বানান হলো: `খ্রিস্টাব্দ`, `আশি`।
বাংলা ভাষা আজ আর্ন্তজাতিক ভাষা। ইংরেজির কাছে বাঁধা পরে থাকবে কেন এটি? সর্বস্তরে বাংলার সবোর্চ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে অগ্রহী ভুমিকা রাখতে হবে বিচার বিভাগকে।
লেখক: মতিউর রহমান ফয়সাল
ই-মেইল:[email protected]