ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

থ্যাংকস মাই লর্ড, থ্যাংকস মনজিল

অশোক চৌধুরী, হেড অব নিউজ, বৈশাখী টেলিভিশন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১২
থ্যাংকস মাই লর্ড, থ্যাংকস মনজিল

সাধারণত: আমি যা ভাবি তার উল্টোটাই হয়। এবারও তেমনটাই মনে হচ্ছে।

আমার অনেকগুলো ধারণাই এখন পাল্টে যাচ্ছে। পরিবর্তিত ধারণাকে অনেকে বলছেন ভালো, আবার অনেকে বলছেন অশুভ। আমার প্রিয় সহকর্মী টুনটুনি (মেহেরুন রুনি) ও তাঁর স্বামী সাগর সরওয়ারের নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়েই আবার বলছি। খুনের খবর শুনে ওদের পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় গিয়ে আমার প্রথম মনে হয়েছে- এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। কিন্তু এখন সংবাদ মাধ্যমে গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য বলছে, “চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডটি নাকি ঘটেছে হঠাৎ করেই। একদল চোর চুরি করতে গিয়ে বাধার মুখোমুখি হয়ে তাদের খুন করে ফেলেছে। কিন্তু সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পর দেশের সেরা ক্রাইম রিপোর্টার যারাই এই বাসায় গেছে, তাদের কেউই পুলিশের এই জোরালো দাবিকে সমর্থন করছে না। যাই হোক, পুলিশের কথাই যদি সত্যি হয়, তাহলে আমার ধারণা যে ভুল তা একশ ভাগ প্রমাণিত। তবে একটা বিষয়ে আমি একটু স্বস্তি পাচ্ছি এই জন্যই যে, আমাদের সহকর্মী সাংবাদিকরা নানা রসালো কাহিনী ফেঁদে রুনি সাগরকে কলংকিত করার জন্য তাদের কলমে যে সমস্ত ঘটনা কিছুদিন ধরে তুলে ধরেছিলেন, তা অসত্য প্রমাণিত হলো। রুনি-সাগর হত্যাকাণ্ডের পর সাংবাদিকদের নানা ঢংয়ের লেখালেখি দেখে আমি আশংকা করেছিলাম, কোন যাচাই না করে আমাদের লেখা কল্পকাহিনীর কারণে  গোয়েন্দারা বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে এবং হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা চলে যেতে পারে আড়ালে। এখন দেশের চৌকস গোয়েন্দাদের কথা শুনে তাই মনে হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত: কিছুদিন আগে এই সংবাদ মাধ্যমের জন্য একটি লেখায় আমি রুনি-সাগরের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আদালতের হৃদয় স্পর্শ করতে না পারার বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। অভিমানে সমালোচনা করতে ছাড়িনি উচ্চ আদালতের মানবাধিকার আইনজীবীদেরও। ঐ লেখায় আদালত ও মানবাধিকার আইনজীবীদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আবেদন আর কতবার পত্রিকায় ছাপালে আপনাদের নজরে আসবে। বেশ কয়েক বছর আদালতের রিপোর্টিং করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আদালত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ব্যাপক আস্থা অর্জন করেছে। যদিওবা এ নিয়ে ভিন্নমত আছে দেশের অনেক রাজনীতিকের। আদালত যে অনেকের আস্থার জায়গা এটাই মোটেও মানতে চান না তারা। যাক সে কথা।

রুনি-সাগর হত্যাকান্ডের ১৭ দিন পর ২৮শে ফেব্র“য়ারি আদালত জানালো তাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠার কথা। এখানেও আমার ভাবনা পরাজিত। রুনি-সাগরের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের কান্না আহাজারি আদালতের হৃদয় ছুঁয়েছে। আমি যতদূর জেনেছি, হাইকোর্টের একজন বিচারপতির অনুরোধে মানবাধিকার আইনজীবী মনজিল মোরশেদ এই রিট পিটিশন দায়ের করেন। তবে আবেদনটা দেখে মনে হয়েছে, বিজ্ঞ আইনজীবী পুলিশের পক্ষেই এই রিট করেছেন এবং তাঁর ধারণা পুলিশের চেয়ে সাংবাদিকদের ব্যর্থতা বেশি। তিনি আবেদনে দুটি বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিয়েছেন: তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ হত্যাকান্ড নিয়ে জজ মিয়া খোঁজা হচ্ছে শীর্ষক কোনো ধরনের সংবাদ পরিবেশন থেকে সাংবাদিকদের বিরত রাখা এবং তদন্ত চলাকালে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া সংবাদ মাধ্যমের সামনে পুলিশ যাতে কোনও কথা না বলে সে বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা জারি। খুবই ভালো দুটি বিষয়। দেশের মানুষও তাই চায়। কিন্তু ১৭ দিন পর্যন্ত এ মামলায় পুলিশের যে বহুবিধ ব্যর্থতা আছে, সে ব্যাপারে ভুলক্রমেও তিনি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি। এই মানবাধিকার আইনজীবী মনে হয় ভুলেই গিয়েছেন সাংবাদিকদের ওপর এই ধরনের হস্তক্ষেপ কেউই মানবে না। সাংবাদিকদের অনুরোধ জানানো যেতো, কিন্তু আদালতকে দিয়ে সাংবাদিকদের শেকল পরানোর যে চেষ্টা তিনি করেছেন তা মোটেও কল্যাণ বয়ে আনবে না। আদালত সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ নির্ণয় ও হত্যাকারীদের কেন গ্রেফতার করা করা হবে না, জানতে চেয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। তবে আদালত নিজ উদ্যোগে তদন্তে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি যদি তুলে আনতেন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতেন তাহলে তা স্বস্তির হতো আরো, যা এই আদালত ইতোপূর্বে অনেক মামলাতেই করেছেন। আদালত কঠোর সমালোচনা করেছেন রাজনৈতিক বক্তব্যের। আমরা আরো খুশি হতাম যদি ঐ সমালোচনা আরো ভারসাম্যপূর্ণ হতো। কারণ, সাগর-রুনি হত্যাকান্ড নিয়ে রাজনীতির কোনও পক্ষই কম যায়নি।
 
তারপরও আদালতকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আইনজীবীদের ভাষায় বলতে চাই, থ্যাংকস মাই লর্ড। থ্যাংকস মনজিল মোর্শেদ আপনাকেও। যে চিন্তাতেই হোক আদালত স্বত:প্রণোদিত হওয়ার আগে আপনি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের এই মামলাটি আদালতে এনেছেন। এখন আদালত অনেক কিছু না বললেও ভবিষ্যতে তদন্তকারীদের ব্যর্থতার বিষয়গুলো নিয়ে মাই লর্ড যে গর্জে উঠবেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ এই আদালতের চরিত্র যে বাংলাদেশের কম বেশি সব মানুষেরই জানা!

বাংলাদেশ সময় ১৫৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।