ঢাকা, শুক্রবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৩ মে ২০২৫, ২৫ জিলকদ ১৪৪৬

মুক্তমত

চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ভয় লাগে

এ কে এম রিপন আনসারী, সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১৮, মার্চ ৭, ২০১২
চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ভয় লাগে

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। ৩০ মিনিটের ব্যবধানে ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমার বিস্ফোরণ।

ছোট আকারের হতাহত হলেও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের শক্তির ভয়াবহতা প্রদর্শনের ওই ঘটনা ছিল জাতির জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ সংকেত।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার আঁচ করতে পারেনি এ হামলার পূর্ব সংকেত। ওই সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তবে ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলা নিয়েও তৎকালীন সরকার ও বিরোধী দল পরস্পরকে চিরায়ত দোষারোপ করতে ভুল করেনি।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশেই মামলা ও গ্রেফতার অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এ সকল মামলার মধ্যে অনেক মামলার রায় হয়েছে। রায়ে খালাস পাওয়ার সংখ্যা খুব কম। তবে নিম্ন আদালতে দণ্ডিত আসামি উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন, বলে আমরা জনেছি। ৫ মার্চ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুর থেকে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত সিরিজ বোমা হামলা মামলার ৭ আসামি উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেয়ে মুক্তিলাভ করেছেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পড়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সদর থানার মামলা নং ১৭(৮)২০০৫ এ আসামি ছিল ২১ জন। ঝিনাইদহ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক সা ক ম আনিছুর রহমান  মুক্তিপ্রাপ্ত ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। ২০০৬ সালের ২১ এপ্রিল দণ্ডিতদের ঝিনাইদহ কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে আনা হয়।

মহামান্য হাইকোর্ট ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত ৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে বেকসুর খালাস দেন। ১ মার্চ আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে খালাসের কাগজপত্র কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছে। কারা কর্র্র্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ৫ মার্চ তাদের মুক্তি দেন।

আমরা অবশ্যই মহামান্য আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আশা করি, আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, মুক্তিপ্রাপ্ত ৭ জন যদি জঙ্গি হয়ে না থাকেন তবে ৬ বছরের অধিক সময় তারা বিনা অপরাধে জেল খেটেছেন। আমি স্বাভাবিক ভাবেই জানি, নিম্ন আদালতের রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত না হলে উচ্চ আদালতের রায়ে তা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ অবস্থায় নিম্ন আদালতের রায় সম্পর্কে মন্তব্য করছি না। তবে জনগণের দাবি ওঠা স্বাভাবিক যে, নিম্ন আদালতের বিচারক এমন বড় ভুলটি করেছিলেন। উচ্চ আদালতের রায়ের পর নিম্ন আদালত সম্পর্কে জনগণের এ ধরনের প্রশ্ন আদালত অবমাননা হলে প্রশ্নটি প্রত্যাহার যোগ্য।

জনগণের মতামত পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বিশেষ করে জঙ্গি মামলার ক্ষেত্রে প্রদত্ত রায় জাতির জন্য বেদনাদায়ক ও ভীতিকর যেন না হয়। কারণ, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ইসলামকে কলঙ্কিত করে। এ ধরনের বিপথগামী মুসলমান অবশ্যই ইসলামের জন্যও ভীতির কারণ। ফলে জঙ্গি মামলায় আসামি গ্রেফতার ও বিচার দুটোই স্পর্শকাতর।

মঙ্গলবার সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ১২ মার্চ ঢাকায় বিরোধী দলের সমাবেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেছেন, তিনি এ ধরনের আশঙ্কার পূর্বাভাস পেয়েছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের আশঙ্কা নিঃসন্দেহে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি মামলার ৭ আসামি উচ্চ আদালতের রায়ে খালাস সাপেক্ষে মুক্তিলাভের পরদিন সরকার কর্তৃক সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ ও ৩ জঙ্গি গ্রেফতার নতুন কোনো ইঙ্গিত দিলো কি না জানি না।

তবে আশা করতে পারি, জঙ্গি দমন ও  মুক্তি যেন আশঙ্কার কারণ না হয়। এখানে একটি কথা না বললে নয়, চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ভয় লাগে।

বাংলাদশে সময়: ২১১০ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।