ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ডেটলাইন ১২ মার্চ : কী হবে, কী হবে না?

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১২
ডেটলাইন ১২ মার্চ : কী হবে, কী হবে না?

১২ মার্চ নিয়ে এখন নানামাত্রিক উত্তেজনা দেশে! বিএনপি জোট এদিন ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি দিয়েছে। চারদলীয়দের এদিন ১৬ দলীয় জোট হবার কথা! এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ এর মাঝে ৭ মার্চের গণমিছিল করেছে।

১৪ মার্চ তাদেরও একটি সমাবেশ হবার কথা। বিএনপির নানা হুঁশিয়ারি, প্রশাসনিক নানা ব্যবস্থার ভিতর এর মাঝে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ সমাবেশ বাতিলের দাবি তুলেছেন! এতে করে চলতি উত্তেজনায় ঘৃতাহুতির সৃষ্টি হবে। একটি হরতাল পরিস্থিতির দিকে এগুবে দেশ। এসব ছাড়া বিএনপির কর্মসূচি নির্বিঘ্নে করতে দিলে কী হতো? হয়তো কিছুই হতোনা। কারণ, বিএনপি এমন কোন লড়াকু-বিপ্লবী দল না। আর রাজনীতিতে এমন দিন তারিখ দিয়ে কিছু হয় না। দিন তারিখ ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায় না! অন্তত মওদুদ আহমদদের মতো চরিত্রের নেতাদের নিয়ে তা সম্ভব না।

অথবা ১২ মার্চ অনেক ঘটনা ঘটতে পারে বা পারতো! এত মানুষের শহর রাজধানী ঢাকা শহর। যে মানুষ এখানে আছেন তারাই গায়ে গায়ে হেঁটে চলেন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোনো একটা দল মিছিল করলেই যে যানজট, জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়, এর রেশ কাটতে অনেক সময় লেগে যায়। এরসঙ্গে ঢাকার বাইরের লোকজন নিয়ে এসে এটিকে আরও স্থবির করে সম্ভব। ৩০-৪০ হাজার পুলিশ-র্যাব নিয়েও সৃষ্টি হতে পারে হরতাল জাতীয় অবরুদ্ধ এক পরিস্থিতির। এটা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৭ সালের ১০ নবেম্বর ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির সময় আমরা দেখেছি। ঢাকামুখী গাড়ি-ফেরি সব বন্ধ করে দিয়ে স্বৈরাচার নিজেই এক অবরুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। ১৯৮৭’র তুলনায় ঢাকার জনসংখ্যা এখন দ্বিগুণ।
 
আবার হালে যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে বিপদের ঝুঁকি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবির, সামরিক অভ্যুত্থানের স্বপ্নওয়ালাদের সংগঠন নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর সহ জঙ্গিরা কিন্তু কোনো একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। গত সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরে দু’বার আমরা তেমন চেষ্টা দেখেছি। ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনায় যদি বিএনপি জড়িত না থাকে তাহলে তা করলো কে? অভ্যুত্থানওয়ালারা? বিএনপির কর্মসূচির সুযোগে ভিন্ন কেউ সুযোগ নেবেনা, এর গ্যারান্টি কে দেবে? বিরোধীদলে থাকলে যেকোনো ঘটনার দায় সরকারকে দেওয়া বা সরকারে থাকলে যেকোনো ঘটনার দায় বিরোধীদলকে দেওয়া খুব সহজ। কিন্তু পাবলিক যে জিম্মি হয় এর দায় কেউ না। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আজকাল যত গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়, সম্পদের ক্ষতি হয়, এসবে কখনো আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের গাড়ি-বাড়ি আক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন কখনো শোনা যায়নি। পাবলিকের যে রুটিরুজির সমস্যা হয়, তাও তাদের হয় না। কারণ, তারা যে ক্ষমতায় আছেন অথবা ছিলেন! বাংলাদেশের রাজনীতি-জনগণ এভাবে এই দু’দলের মর্জি-মতির কাছে জিম্মি হয়ে আছে। জনগণ আবার এই দু’দলের বাইরেও যায় না। দু’দলের নেতাকর্মী সমর্থকদেরও যার যার দলের সবকিছুকে অতিশয় ‘উত্তম, ‘মোলায়েম’ মনে হয়!

১২ মার্চের কর্মসূচি, ভবিষ্য‍ৎ  রাজনীতিকে আমি দেখছি অন্যভাবে। জোট সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিএনপি শুধু দলের সংখ্যা না, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধেও লোকবল বাড়াচ্ছে। আওয়ামী মহাজোটের এরশাদও দিনে দিনে এ জায়গা থেকে পিছলে যাচ্ছেন। এরমাঝে টাকার বিনিময়ে যুদ্ধাপরাধীদের টিভি চ্যানেলে যোগ দিয়েছেন এরশাদ ঘনিষ্ঠ কাদের সিদ্দিকী। এরশাদের গৃহপালিত বিরোধীদলের নেতা আ স ম আব্দুর রবকে তিনি সেখানে নিয়ে গেছেন। মুখে সরাসরি না বললেও ধীরে ধীরে এই বিচার প্রক্রিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। আপাতত এর বিরুদ্ধে নিত্য লিখছেন তার মেয়ের জামাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চলতি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমও আশানুরূপ গতিশীল নয়। প্রসিকিউশনের দুর্বলতা-ব্যর্থতার  বিষয়গুলো এখন মোটামুটি ওপেন সিক্রেট। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা ‘এ বিচার হবেই হবে’ প্রতিদিন বললেও কী করে হবে তা জোরের সঙ্গে বলতে পারছেন না।

এখন দেখা যাক, বিএনপি কিভাবে কাদেরকে নিয়ে এই বিচারের বিরুদ্ধে লোক-দল বাড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতৃ্ত্বাধীন একটি ১৪ দলীয় জোট আছে। ১৪ দলের সবদলের নাম আওয়ামী লীগের কোনো সাধারণ নেতাকর্মীকে বললে গুনে ঠিকমতো বলতে পারবেন না। অনেক দলের ঢাকার বাইরে কোনো সক্রিয় কমিটি আছে কীনা সন্দেহ আছে। তবে ছোটবড় এর সবগুলো দলই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। এদলগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ত্যাগী নেতাকর্মী আছেন। আওয়ামী লীগের যেহেতু একটি ১৪ দল আছে, বিএনপি সংখ্যা দু’টি বাড়িয়ে ১৬ দল করতেই পারে। তবে এদলগুলো মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারদের পাঁচমিশালি! অন্তত তিনটি দল বিএনপির সাবেক নেতাকর্মীদের নিয়ে গড়া। বিএনপি থেকে অভিমান করে বেরিয়ে গিয়ে আলাদা রাজনৈতিক দোকান খুলে সুবিধা করতে না পারায় খালেদার জোটে আসার মূল লক্ষ্যটি আগামী নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসাবে যদি এমপি জেতা যায়!

এমনিতে বিএনপি দলীয় জোটের দ্বিতীয় প্রধান দলটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামী। মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে এ দলের প্রায় প্রধান সব নেতার এখন বিচার চলছে। এ দলটির প্রধান নেতাদের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জেলে ও সাবেক জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী আবদুল আলীম বার্ধক্যজনিত কারণে জামিনে আছেন। এই বিচার নিয়ে শুরু থেকে ভীষণ বিরোধী-সোচ্চার বিএনপি। এতে সাধারণের মাঝে প্রচণ্ড বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে এখন এ ব্যাপারে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। সে কারণে গোলাম আযমের গ্রেফতারের পরও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। নানাভাবে কোণঠাসা জামায়াত-শিবিরও এখন পুরোপুরি বিএনপির কর্মসূচি নির্ভর। বিএনপি কর্মসূচি দিলে তারা আত্মগোপন অবস্থা থেকে বেরোয়। কর্মসূচির পর আবার আত্মগোপনে চলে যায়। বিএনপি-জামায়াতের পর তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ঐক্যজোট মূলত মাদ্রাসাভিত্তিক নেতাকর্মীদের সংগঠন। মাদ্রাসার আয়ে এদের বেশিরভাগ নেতাকর্মী চলেন। এরা আবার ঘোর ফতোয়াবাদী ও কৌশলগত কারণে খালেদা জিয়ার নেতৃ্ত্বে থাকলেও ঘোরতরভাবে নারী নেতৃ্ত্ব, নারীর ক্ষমতায়ন বিরোধী। ইসলামী ঐক্যজোটের অনেক নেতা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগকে এরা ইসলামী নেতাদের বিচার হিসাবে দেখেন।

চারদলীয় অপর দল বিজেপি এরশাদ ছুট জাতীয় পার্টির একটি অপভ্রংশ। এর প্রতিষ্ঠাতা নাজিউর রহমান এরশাদের দুর্নীতির টাকা-পয়সার খাজাঞ্চি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। এরশাদ চারদলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেলে বিএনপি তখন নাজিউরকে দিয়ে একখণ্ড জাতীয় পার্টি গঠন করিয়ে চারদলীয় জোটের নাম টিকিয়ে রাখে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের শর্তের কারণে দলটির নাম হয় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। এরশাদ থেকে সরে গিয়ে আলাদা রাজনৈতিক দল করাতে অর্থনৈতিক-সম্পদের দিক থেকেও নাজিউর লাভবান হন। বেচারা এরশাদ গচ্ছিত দুর্নীতির টাকা-সম্পদ মুখ ফুটে দাবি করে ফেরত চাইতেও পারেননি। আবার এইদলসহ বিএনপি গেলবার ক্ষমতায় গেলেও নাজিউর রহমানকে মন্ত্রিত্ব দেয়নি। উল্টো বিএনপি নেতারা আড়ালে আবডালে বলার চেষ্টা করেছেন, নানান দুর্নীতি আর খুনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নাজিউর যে গ্রেফতারবিহীন মুক্ত আছেন সেটি কম কিসের! শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়াতেও তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো। উল্লেখ্য, নাজিউরের স্ত্রী রেবা রহমান শেখ সেলিমের বোন। ভোলার জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল হক বাবুলের হত্যার নেপথ্যের কুশীলব হিসাবে নাজিউর নানান সন্দেহে চিহ্নিত। প্রচার আছে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়াতে বাবুল হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত-বিচার হয়নি। নাজিউর মারা যাবার পর তার ছেলে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ উত্তরাধিকার সূত্রে বিজেপির চেয়ারম্যান ও গত নির্বাচনে ভোলার সদর আসনের এমপি হন। আওয়ামী লীগের এক পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে দলের এমপি রনি’র বিষয়ে বলতে গিয়ে স্বয়ং শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধীদলের এমপি হওয়া সত্ত্বেও পার্থ এখন ভালো ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন!

এসব নিয়ে খালেদার চারদলীয় জোট এবং শেখ হাসিনার ভাগ্নে বিজেপির পার্থসহ এ জোটের মূল রাজনৈতিক কর্মসূচি এখন যে কোনো মূল্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো। এদের সঙ্গে এই বিচার বিরোধী জোটে সামিল হচ্ছেন বিকল্পধারার অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এলডিপির কর্নেল(অব.) অলি আহমেদ, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, পিএনপির শেখ শওকত হোসেন নিলু প্রমুখ।

এদের মধ্যে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বিএনপি আমলে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইম্পিচমেন্টের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর মাঠে নামার চেষ্টা করলে বিএনপির ক্যাডাররা তাকে মারতে গেলে মহাখালীর রেলক্রসিং ধরে দৌড়ে তিনি আত্মরক্ষা করেন। এরপর বিকল্পধারা নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেও সুবিধা করতে পারেননি। অলি আহমদকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ১/১১’র আগে শেখ হাসিনার নেতৃ্ত্বাধীন মহাজোটেও যোগ দেন। কিন্তু ১/১১’র পর আর মহাজোট আর অলি আহমদের সঙ্গেও তার রাজনৈতিক সংসার টিকেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অলি আহমেদ এমপি হতে পারলেও অধ্যাপক চৌধুরী পারেননি। দু’জনেই এখন ভবিষ্যৎ নির্বাচনে এমপি হবার আশায় যার যার দলের ব্যানারে বিএনপি জোটে ফেরত যাচ্ছেন।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর জামায়াতের আপত্তির কারণে মুক্তিযোদ্ধা অলি আহমদকে মন্ত্রী করা হয়নি। বিশেষ করে তার নির্বাচনী এলাকা সাতকানিয়ায় রাজনীতিতে জামায়াত বিরোধিতার কারণে অলি আওয়ামী লীগের জোট আসেন। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের বিচার দাবি করেন। নিজের পৃথক রাজনৈতিক দোকান জমাতে ব্যর্থ অলি জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতেও তার নিশানা বদলেছেন। উল্টো তার নেতাকর্মীদের মনোরঞ্জনের জন্য ফরিদপুর-গোপালগঞ্জ এলাকার সুন্দরী রমণী কামনা করে এখন সমালোচনা-বিচারের সম্মুখীন। অস্তিত্বের স্বার্থে তার এখন বেশি বেশি খালেদা জিয়ার ছত্রছায়া দরকার।
 
এসব নেতার বাইরে মোহসীন হলের সাত ছাত্র খুনের মামলায় গ্রেফতারকৃত, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়ার মাধ্যমে মুক্তিপ্রাপ্ত শফিউল আলম প্রধানের রাজনীতির কিসিম মোটামুটি রাজনৈতিক ওয়াকিফহালরা জানেন। বিএনপি থেকে বেরিয়ে পিএনপি তথা প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল করা শওকত হোসেন নিলু প্রগতিশীল হতে ব্যর্থ হয়ে মাঝে শফিউল আলম প্রধানসহ দল বিলুপ্ত করে জাতীয় পার্টিতেও গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েও তাদের চেয়ে ঘাগু সব কুতুব দেখে টিকতে পারেননি। আবার যার যার দল পুনরুজ্জীবিত করে ফিরে এসেছেন বিএনপি-জামায়াত, নিষিদ্ধ ফ্রিডম পার্টি ধারার মঞ্চে। কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ১/১১’র আগে ছিলেন টেলিভিশনের টকশো’র জনপ্রিয় মুখ। ১/১১ কে স্বাগত জানিয়ে কিংস পার্টির স্বপ্নদ্রষ্টাদের তিনি ছিলেন অন্যতম। রাজনৈতিক দল গঠন করে সাবেক ‘নিরপেক্ষ’ ভাবখানা হারিয়েছেন। তার রাজনৈতিক দোকানটিও পুরোপুরি ফ্লপ! আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোটের নমিনেশন পাবার আশায় খালেদার নেতৃ্ত্বে যাচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিএনপির ধারায় হিজরত করেছেন জেনারেল ইব্রাহিম।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতের নতুন সুসংবাদটি হচ্ছে এ বিচারের পক্ষের অবস্থান থেকে সরে যেতে শুরু করেছেন জেনারেল এরশাদ। আওয়ামী লীগের নেতৃ্ত্বাধীন জোটে এসে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এসব প্রশ্নে কোনো কোনো আওয়ামী নেতার চাইতেও উচ্চকন্ঠ(!) হয়েছিলেন এরশাদ! কিন্তু মতলবী এরশাদের এসব আওয়াজও এরমাঝে ফিকে হয়ে এসেছে। আসলে এরশাদ কোনো অবস্থাতেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ছিলেন না। কর্নেল তাহেরসহ অনেকে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। আর এরশাদ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর খেদমত করেছেন! মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটিতে দেশে এসেও যুদ্ধের সঙ্গে জড়াননি। এরপর ক্ষমতা দখলের পর পূর্বসূরি জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী যা যা করেছেন, এরসবই নিবিড় অনুসরণ করেছেন জিয়া। ক্ষমতার জীবনে যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনি উভয়পক্ষের পৃষ্ঠপোষক এরশাদ কিসের লোভে মহাজোটে এসেছিলেন, তা সবাই জানে। লোভ কামিয়াব না হওয়াতে নিজের পুরনো পথে চলার হুমকি দিচ্ছেন এরশাদ! এরমাঝে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতেও পিছিয়ে যাওয়া শুরু করেছেন। এ সংক্রান্তের জোটের কোনো কর্মসূচিতেই তারা আর অংশ নিচ্ছেন না। নিজেরাও এ ধরনের কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না। এরশাদের দলের প্রেসিডিয়ামসহ জেলা-উপজেলা সংগঠনে অবশ্য স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীরা আছেন।
 
১২ মার্চ বা তার আগের-পরের রাজনীতিতে অবশ্যই এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত এ বিচার নিয়ে যত কথা হোক, একটি সত্য হচ্ছে এই বিচার যতটা হবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে যদি বিএনপি আসে তাহলে এ বিচার মুখ থুবড়ে পড়বে। পটপট করে বেরিয়ে যাবে সব আটক যুদ্ধাপরাধী। জামায়াতিগুলার ছাড়াও বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চেহারা-সুরতটা তখন কী দাঁড়াবে? এরমাঝে ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি নিজামুল হককে কোর্টে দাঁড়িয়ে হুমকি দিয়েছেন। মোট কথা এ বিচার হওয়া না হওয়া এখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জ।
 
১২ মার্চ নিয়ে শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে? সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে রাজনীতি রাজনীতি দিয়ে মোকাবিবলা করুন। সন্ত্রাসের চেষ্টা হলে বা তা কেউ করলে প্রশাসন দিয়ে মোকাবিলা করুন। কোনোভাবে দলীয় ক্যাডার দিয়ে নয়। দলীয় ক্যাডার ব্যবহারের প্রবণতা-পরণতি কোনোভাবেই ভালো হয় না। কেউ যাতে দেশের মানুষের জীবন-সম্পদকে জিম্মি করতে না পারে। কোনো অপশক্তি যাতে পণ্ড করতে না পারে দেশবাসীর প্রাণের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।

ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময় : ১৮২৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।