ইতিহাস কালের সাক্ষী। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেছে এমনটি আমাদের জানা নেই।
এনালগ আর ডিজিটাল নয় সব ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নিয়মেই ইতিহাস সংরক্ষিত হয়। এক যুগের মানুষ নতুন যুগের মানুষকে যে ইতিহাস জানিয়ে যায় ঔসব ইতিহাস বইয়ে লিখতে হয় না। কালের বিবর্তনে মানুষের মনে ইতিহাস গাঁথা হয়ে যায়। তাই সরকারি আর বেসরকারি যে চ্যানেলেই থাকুক না কেন ইতিহাস চিরঅম্লান, অবিনশ্বর।
স্বাভাবিক জ্ঞান থাকলে ইতিহাস মনে থাকে। ইতিহাস মনে পড়ে। ইতিহাস ভুলে থাকা যায় না। মনের আয়নায় ইতিহাসকে আড়াল করে রাখে এমন প্রতিচ্ছবি থাকে। ইতিহাস আড়ালকারী প্রতিচ্ছবিটি সরে গেলে কিংবা সরিয়ে দিলে প্রকৃত ইতিহাস ভেসে উঠে। আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্ব ইতিহাসের বাইরে নয়। সময়ের ধারাবাহিকতায় আমাদের ইতিহাস সরকারি-বেসরকারি ভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাল সবুজের পতাকা খচিত যে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ঐ দেশের ইতিহাস কারো অজানা নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ইতিহাসের জন্ম হয়েছে সে ইতিহাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে স্বাধীনতার পর ৪০ বছরের ইতিহাস। ইতিহাসের এই যুদ্ধ জাতিকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা সময়ই বলে দেবে।
বাংলাদেশের ’৯০ পরবর্তী ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে আমাদের ভাল-মন্দ থাকার ইতিহাস। ’৯০-এ স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটানোর জন্য প্রধান দু’ দল এক হয়ে আন্দোলন করে একটি চূড়ান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিরোধী দল একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। ২০০১ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির ইতিহাস থেকে সরে আসতে পারে নি। ২০০৬ সালের ইতিহাস বলতে চাই না। বর্তমান বিএনপি একই ধারাবাহিকতায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। প্রত্যেকটি চূড়ান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তবু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। প্রশ্ন এসে যায়, তবে কোন ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বার বার একটি করে ফাইনাল খেলা খেলছে।
চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশে এখন বিশাল আয়োজন চলছে। দু’ দল পরস্পরকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করতে গিয়ে কখন যে নিজেরাই আক্রান্ত হয়ে যাবে তা বলা মুশকিল। ১২ মার্চ ঢাকায় বিরোধী দলের সমাবেশ আর সরকারি দলের বাধা দেওয়ার সমাবেশ কোন সমাবেশের আয়োজন করছে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা জাতির আশংকা বেড়েই চলছে। এই অবস্থায় অতীতের ধারাবাহিকতায় আরেকটি পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য আকাশে মেঘ দেখা ভেসে বেড়াচ্ছে। সরকারি দল ও বিরোধী দল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ার কারণে দেশে এখন ঝড়ো হাওয়া বইছে। খুন হওয়ার পর লাশ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। গলাকাটা লাশের পরিমাণ বাড়ছে। বলতে দ্বিধা নেই যে, ক্রমান্বয়ে আমরা অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছি।
দুঃখ ও আক্ষেপ করে বলতে চাই, আমাদের প্রধান দু’ দলের নেত্রীদ্বয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে গিয়ে এক সাথে পাশাপাশি জেলে ছিলেন ২০০৬ সালের গণতান্ত্রিক সরকারের পর। এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণে দু’টি বছর বাংলাদেশের গণতন্ত্র স্থগিত হয়ে ছিল। দু’ নেত্রী জেলে ঢোকার আগে জেলের প্রধান ফটকে বলেছিলেন কোথায় মানবাধিকার?
আজো সেই স্মৃতি চোখে ভাসে। পরস্পরকে ঘায়েল করতে মরিয়া মাননীয় দু’ নেত্রীর এই সব স্মৃতি মনে আছে কিনা জানি না। তবে মনে না থাকলেও জাতির ইতিহাসে লেখা হয়ে আছে। আমরা গণতন্ত্র চাই, আমরা স্বাধীনতা চাই। আমরা স্বাধীনতার ভেতরে পরাধীন থাকতে চাই না। দু’ নেত্রী যদি দয়া করে ইতিহাস মনে রেখে থাকেন তবে অবশ্যই সমঝোতায় আসেন। না হলে ঈশান কোণে কাল মেঘ দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঝড়ো হাওয়া বাইতে শুরু করেছে। এর পর কি! তা জাতির অজানা নয়। তবে এবারে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দু’ বছরে শেষ হবে এমন কল্পনা সাধারণ মানুষও করে না। এই কারণে খুব হিসেব করে পা ফেলা উচিত যেন আমরা দীর্ঘ মেয়াদী কোন পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ না হই।
এ কে এম রিপন আনসারী
বাংলাদেশ সময় ০৯৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১২