ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘ষোলো কোটি’ কান্না

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১২
‘ষোলো কোটি’ কান্না

বন্ধুবর ড. আলী রীয়াজ ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘অন্যসব পারফরমেন্সের ফলাফলের মতো প্রায় ছুঁয়ে ফেলা এশিয়া কাপ বিজয় ম্যাচের রিভিউ হওয়া উচিত সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের স্বার্থে। ’ বড় ভালো লেগেছে রীয়াজের এই পরামর্শ ও উপলব্ধি।



হাতের নাগাল থেকে এবারের মতো বিজয় ফসকে গেলেও সাফল্য ও অর্জন অনেক। মাঠের এগারোজন পারফরমারের বাইরে কৃতিত্ব আরো অনেকের। দলের বাকি সদস্য, টিম ম্যানেজমেন্ট, প্রধান নির্বাচক-নির্বাচক, কোচ, ম্যানেজার, ফিজিও, সাইকোলজিস্ট সবাই বাংলাদেশের এই গর্বিত সাফল্যের অংশ। এখানে একক কোনো কৃতিত্বের অবকাশ নেই। যে যার ভূমিকায় সৎ-নিবেদিত ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সামগ্রিক ও সমগ্র একটি দল গড়ে তুলেছেন। সামগ্রিকতার জোরেই টাইগাররা ‘অশোকা চক্র’ ভেঙে ‘সিংহ’ বধ করতে পেরেছেন। পাকিস্তানিদের ঘাড়ের কাছে ছেড়েছেন হুমকির নিঃশ্বাস। সব মিলিয়ে বিশাল এক অর্জন বাংলাদেশের।

এক দশক আগেও বিত্তশালী কারো মৃত্যুর সংবাদ বিজ্ঞপিতে লেখা হতো বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ক্রীড়ানুরাগী। এখন লেখা হয় ক্রিকেটানুরাগী। ক্রিকেট-প্রীতি এখন ব্যাপক এক সামাজিক সম্মান।   বিনাকারণে জেলা প্রশাসক খেদানো ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদেরা ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড দখলের মাধ্যমে ‘জাতে’ উঠতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু উনারা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেওয়ার বদলে হয়ে উঠেন ভাঁড় জাতীয় ভিলেন। ভিলেন ও ভাঁড় ছাড়া চলচ্চিত্রের কাহিনী গতি পায় না। জীবনের উত্থান-পতনে ছন্দ আসে না। বিনা ‘পলিটিক্সের’ অফিসকে পানশে লাগে। তেমনি আমাদের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড হামবড়া রাজনৈতিক মাতব্বর জাতীয় ভাঁড়  ছাড়া ঠিক যেন জমে না!

ক্ষমতাসীন সরকারের দখল ও নিয়ন্ত্রণে থাকে ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড। সরকারে সবসময় যোগ্য মানুষ থাকেন। কিন্তু কেন মাঝেমধ্যে অযোগ্য ‘বানরদের’ গলায়  অকারণে মুক্তোর মালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বুঝি না?

গেল আওয়ামী সরকারে সাবের চৌধুরী ছিলেন বোর্ডের দায়িত্বে। উনার দক্ষতা-যোগ্যতা ও সততা নিয়েতো প্রশ্ন ওঠেনি। বেশ দাপট ও দক্ষতার সঙ্গে সাবের চৌধুরী দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। জাতীয়তাবাদী সরকারে দায়িত্ব পেয়েছিলেন আজিজ কায়সার টিটো। উনার যোগ্যতা ও অর্জন আজো প্রশংসা কুড়োয়। ক্রিকেটের প্রতি কী পরিমাণ নিবেদন থাকলে জাতীয় দলের অধিনায়ক বুলবুলের ‘ভুলে যাওয়া অগ্রজ’ শফিকুর রহমানকে নিজ উদ্যোগে-বিনা সুপারিশে ডেকে এনে চাকরি দেন? সাবের চৌধুরী-টিটো কায়সারদের নেতৃত্বে আর জালাল-আকরাম-হীরা-দ‍ুর্জয়-বাশারদের  পরামর্শে বাংলাদেশের ক্রিকেট পৌঁছাতে পারে ভিন্ন এক উচ্চতায়। রাজনৈতিক দলীয় বিভাজনের বিবেচনার উর্ধ্বে উঠে ক্রিকেটের স্বার্থে কাজ করাটা কি খুবই অসুবিধার? অসম্মানের? জাতি কেবল যোগ্যদের চায়। ক্রিকেট বোঝেন ও ক্রিকেটারদের সম্মান করেন এমন নেতৃত্ব প্রত্যাশায় থাকে। যেসব ‘লোটাস’ জাতীয় প্রয়োজনে পুকুরে ‘পদ্ম’ হয়ে ফুটতে ব্যর্থ হয়, তাদের জাতি দেখতে চায় না নেতৃত্বে। রিভিউ করে দেখা উচিত কী উদ্ধার করে ফেলেছেন এইসব মহারথী! কিংবা কতটুকু কাবাব মে হাডডি বনেছেন ক্রিকেটের?

ব্যর্থ ও অযোগ্যদের কার্যকলাপে ষোলো কোটি মানুষের কান্না আর কতোদিন? বাইশ বছর বয়সী তামিমের মতো কি অযোগ্যদের দেখাতে হবে জাতির ‘মধ্যমা’?

ইমেল :  [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।