শনিবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় নিজের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বি চৌধুরী এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে ছিলেন বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) এমএ মান্নান ও যুগ্ম-মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী প্রমুখ।
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গড়ার প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই বিকল্প ধারার নেতৃত্বকে সরব দেখা গেলেও শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এ জোটের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তাদের দেখা যায়নি। পরে জানা যায়, ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ নিয়ে দুপুরে ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় বৈঠকে অংশ নিতে গিয়েও ফিরে যান বি চৌধুরী ও তার ছেলে মাহী বি চৌধুরী। তারা দাবি করেন, বৈঠকে ডাকা হলেও বাসার দরজা বন্ধ ছিল।
এরপর সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’র আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করেন ড. কামাল। সেখানে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ছিলেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও।
** বিএনপিকে ক্ষমতায় বসার ষড়যন্ত্রে যুক্ত হবে না বিকল্পধারা
বি চৌধুরী বলেন, আমি এবং ড. কামাল হোসেন যৌথভাবে যে দু’টি কাগজে স্বাক্ষর করেছিলাম, সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা আছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তাদের বাদ দিতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য তিনটি স্তরে বিন্যাস করতে হবে। এখন কেউ যদি ভুলে যায়, ওই কথা না তুলতে চায়, এর দায়-দায়িত্ব তো আমি নেবো না। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হয়েছে। আমি বলবো দায়-দায়িত্ব আমার নয়, তার। আমরা জাতীয় ঐক্য চাই। আজকের এই অবস্থার জন্য আমি বেশি হতাশ, অনেক বেশি হতাশ। এতো পরিশ্রম করলাম। তবে আমি এখনো আশায় আছি, ডাক্তারতো, রোগীর আশা ছাড়ি নাই!
বিএনপির সঙ্গে বিকল্প ধারার আলোচনা হবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে বি চৌধুরী বলেন, শর্ত না মানলে আলোচনা হবে না। আশা করি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
বিএনপির অস্তিত্বকে দু’ভাগে ব্যাখ্যা করেন দলটির সাবেক এ মহাসচিব। তিনি বলেন, বিএনপি দুইটা। একটা হচ্ছে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের বিএনপি আরেকটা বর্তমান বিএনপি। আমাদের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না।
‘বিএনপি যখন জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করে, তখনতো আপনিও বিএনপিতে ছিলেন’- এমন প্রশ্নে ক্ষোভ প্রকাশ করে বি চৌধুরী বলেন, একটা ভুলের জন্য বহুবার প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছি, আবারও ক্ষমা চাইছি।
‘আপনি অসুস্থ বলে সেখানে (ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশে) যাননি বলে জানিয়েছেন আ স ম আব্দুর রব’- এমন প্রশ্নের জবাবে বিকল্প ধারার প্রধান বলেন, আমি অসুস্থ? কে বলেছেন? কোন ডাক্তার বলেছেন? রব? ওরে বাবা, তিনি আবার ডাক্তারি পাস করেছেন?
ড. কামাল হোসেনের বাসা থেকে ফিরে আসা প্রসঙ্গে বি চৌধুরী বলেন, আমার সঙ্গে তার বাসায় বৈঠক হওয়া কথা ছিল। আমরা সাড়ে ৩টার দিকে তার বাসায় যাই। আমরা গেলাম, তার বাসায় গিয়ে দেখলাম দরজা বন্ধ, কেউ নেই। দরজা খোলার লোকও নেই। কেউতো বলবে- বসেন, এক কাপ চা খান। তিনি বাসায় নেই, আসবেন! সেটা বলার লোকটাও নেই।
‘আমরা সেখানে ১৪-১৫ মিনিট ছিলাম। থাকাবস্থায় তিনি একটা টেলিফোন করতে পারতেন যে- সরি বড় ভাই, আমার একটা কাজ পড়ে গেছে। একটু বসো, একটু চা খাও, আমি আসবো- বলতে পারতেন। আপনারা বিশ্বাস করেন, আমিতো বিশ্বাস করতে পারি না। সেই বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে এখন পর্যন্ত একটা টেলিফোন পর্যন্ত করেননি। আমি অভিযোগের সুরে বলছি না, এটা আসলে একটা সাধারণ ভদ্রতা, শিষ্টাচার। এতে আপনার-আমার মধ্যে যে বোঝাবুঝি ছিল, তাতে খানিকটা সন্দেহের সৃষ্টি হয়। আসলে ব্যাপারটা কী? এটা কি পরিকল্পিত? এটা কি সুপরিকল্পিত? নাকি কুপরিকল্পিত? না অন্য কিছু?’ আক্ষেপ প্রকাশ করেন বি চৌধুরী।
** রব-মান্না ওখানে পরকীয়া করছেন, আসল বিয়ে এখানে
সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম-মহাসচিব ও বি চৌধুরী ছেলে মাহি বি চৌধুরী বলেন, আমরা ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে এখনো সরিনি, উনারা যদি বাদ দিয়ে থাকেন তাহলে উনাদের ঘোষণা দিতে হবে। আমরা এখনো মনে করি, জাতির প্রত্যাশা স্বাধীনতাবিরোধীদের বাদ দিয়ে ক্ষমতার ভারসাম্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় ঐক্য হবে, সেই স্বপ্ন জাতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা এখনো দেখি।
বিকল্প ধারাকে সঙ্গে না রেখে আত্মপ্রকাশ ঘোষিত এই ঐক্যফ্রন্টে আ স ম রবের জেএসডি ও মান্নার নাগরিক ঐক্যের যোগদান প্রসঙ্গে মাহি বি চৌধুরী বলেন, বিএনপি যদি ২০ দলীয় জোটে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে পারে, তবে বলা যায় সেখানে পরকীয়া চলছে। আমরা মনে করি আ স ম আব্দুর রব এবং মাহমুদুর রহমান মান্নারও আসল বিবাহ এখানে, ওখানে পরকীয়া চলছে। ঠিক হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
এসএম/এইচএ/