রোববার (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, তরুণ সমাজ তোমরা যারা প্রথমবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছো, তারা সময় মতো ভোট দিতে যাবে। মনে রাখবে ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও তবেই বাংলাদেশ’।
প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের উদ্দেশে ঐক্যফ্রন্ট নেতা বলেন, প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ যারা ভোটগ্রহণের দায়িত্বে আছেন, আপনারা সম্মানিত মানুষ, আপনার ওপর যে দায়িত্ব তা সততার সঙ্গে পালন করলে আপনাদের সম্মান বাড়বে। ভোটারের মুখের হাসির ওপরই নির্ভর করছে আপনাদের দায়িত্ব পালনের সফলতা ও তৃপ্তি।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি, টিডিপি, কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিতদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ড. কামাল বলেন, আপনারা অতীতের মতো গৌরবময় ভূমিকা পালন করুন। বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষায় আপনাদের ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে। সেই প্রশংসার ফলে সারাবিশ্বে আপনাদের সুযোগ বেড়েছে। কোনো অবস্থাতেই যেন তা ব্যাহত না হয়, সে ব্যাপারে আপনারা সতর্ক থাকবেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা-কর্মচারী ও রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপনারা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করুন। যদি কারও অধিকার হরণ করেন তাহলে মনে রাখবেন, অন্য কেউ আপনার মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানের অধিকার হরণ করছে। এটা করলে জনগণ ইতিহাস, আইন আপনাদের ক্ষমা করবে না।
‘সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বলবো, আপনারা কোনো দলের নয়, আপনারা জনগণের সেবক। জনগণ দেশের মালিক। দেশের মালিকদের তাদের ভোটের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবেন না। কোনো অন্যায় নির্দেশ মানবেন না। ’
প্রবাসীদের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, প্রবাসী ভাই-বোনেরা এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য যারা ভোট দিতে পারবেন না, আপনাদের স্বজনদের ভোট দিতে যেতে বলুন। তারা যদি ভোট দিতে পারেন, তাহলে সেই আনন্দের অংশীদার আপনারাও হবেন।
লিখিত বক্তব্যের সবশেষে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা ভোট দেই। আপনার ভোট খুবই মূল্যবান। কেননা আপনি দেশের মালিক। আল্লাহ আমাদের সহায় হোক।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোট বর্জন করতে পারে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. কামাল বলেন, আমরা বহুবার বলেছি, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবো।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, তিনি আমাদের নেত্রী নন। আমরা কী করবো না করবো, এটা তার বিষয় নয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বিরোধী দলের ১১ হাজার ৫০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৯২৭টি। বিরোধী দলের অফিস, মিছিল ও কার্যক্রমে হামলা করা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৬ বার। এতে ১৩ হাজার ২৫২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মারা গেছেন ৯ জন। শুক্রবার একদিনে গ্রেফতার করা হয়েছে ১ হাজার ১২৭ জন। মামলা দায়ের করা হয়েছে ৫৯টি। ২৯৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জন এখনও কারাগারে। এই ১৭ জনের মধ্যে ৭ জন গ্রেফতার হয়েছেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর।
‘নির্বাচন কমিশন যাদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে তার মধ্য থেকে আদালতে বাতিল হয়েছে ১৬ জনের। যদিও ১৯ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল, শুক্রবার ৩ জন ফিরে পেয়েছেন। আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছিলাম তার মধ্যে ৮ আসনে আদালত থেকে বদল করে দেওয়া হয়েছে। ’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা নানাভাবে খবর পাই সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার যা করেছে জাতীয় নির্বাচনেও সরকার সেরকম কিছু করার পরিকল্পনা করেছে। ভোটের আগে ভোটের বাক্স ভর্তি করা এবং জাল ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার।
‘আমরা জনগণ ও নেতাকর্মীদের কাছে আহবান জানাই, আপনারা সজাগ ও সচেতন থাকবেন। যে কোনো ধরনের মন্দ পরিকল্পনা প্রতিহত করবেন। কেউ যেন আগেই বাক্স ভরতে না পারে। জাল ভোট দিতে না পারে। ফলাফল বদলে দিতে না পারে। মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরাও পরিবর্তন চাই। ’
গণমাধ্যমে প্রচারিত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ ও বরকত উল্লাহ বুলুর ফাঁস হওয়া ফোনালাপে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে অনৈক্যের সুরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। আমাদের ঐক্য জোরদার আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮
এমএইচ/টিএম/এইচএ/