সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর কিছু নেতা দলটির নাম পরিবর্তন করে নতুন নামে দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। জামায়াতের সংস্কারপন্থি দাবিদার ওই নেতারা নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে মাঠে নেমেছেন।
উচ্চ আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ২০১৩ সালে হয়েছে। এ নিবন্ধন বাতিলের মধ্য দিয়ে জামায়াতের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনও সুযোগ নেই। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী এ দলটি গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতা বিরোধী অপরাধের (যুদ্ধাপরাধীদের) বিচারে ব্যক্তির পাশাপাশি জামায়াতও অপরাধী দল হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়ের পর্যবেক্ষণে অপরাধী দল হিসেবে জামায়াতকে বিচারের মুখোমুখি করার মত দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন দিক থেকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের দাবি অব্যাহত আছে।
এদিকে, সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইন সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছিলেন জামায়াতের অপরাধের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন। এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। আইনের সংশোধনীর প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।
এ প্রেক্ষাপটে জামায়াতকে টিকিয়ে রাখার জন্যই নতুন দল বা দলের নাম পরিবর্তনের কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, দলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামে জামায়াত আবার রাজনীতির মাঠে নামার কৌশল নিয়েছে। তবে নাম পরিবর্তন বা নতুন নাম নিয়ে দল গঠন করলেও একই আদর্শ ও একই ব্যক্তি, গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হবে নতুন নামের ওই দলটি। মানুষকে বিভ্রান্ত করার, ধোকা দেওয়ার এটা একটা নতুন কৌশল বলেও আওয়ামী লীগের ওই নেতারা মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, নাম পরিবর্তন করলেও জামায়াতের অতীত অপরাধ মানুষ ভুলে যাবে না। আর নাম পরিবর্তন করলেই অপরাধের মাপ হয়ে যায় না। নাম পরিবর্তন এটা জামায়াতের নতুন রাজনৈতিক কৌশল। জামায়াত যে আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়ে এসেছে, ধর্মের দোহাই ও অপব্যাখা দিয়ে এ দলটি স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দলটি গণহত্যায় অংশ নিয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে। নাম পরিবর্তন করলেই এ অপরাধ মুছে যাবে না। জামায়াতের এ অপরাধের বিচার হলে দলটি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এ প্রেক্ষাপটে জামায়াতের আদর্শকে, অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্যই নাম পরিবর্তন করে নতুন নামে নতুন দল মাঠে আসার কৌশল নেওয়া হয়েছে। তবে জামায়াতের অতীত কর্মকাণ্ড ও দলটির আদর্শ সম্পর্কে দেশের মানুষ অবগত। তাই নতুন নামে দল গঠন হলেও মানুষ তাতে বিভ্রান্ত হবে না বলেও আওয়ামী লীগের ওই নেতারা মনে করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যাহা বিষ তাহাই হলাহল। বিষ আর হলাহলের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এ জামায়াত ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, মা-বোনদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। নাম পরিবর্তন করলেই কি এ পাপ থেকে তারা মুক্ত হবে। তারা তো জামায়াতের আদর্শ থেকে সরে আসেনি, জামায়াতের আদর্শকে অস্বীকার করছে না। দলের নাম পরিবর্তন করে মানুষকে ধোকা দেওয়ার এটা একটা নতুন কৌশল।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অপরাধীরা সবসময়ই তার কৌশল পরিবর্তন করে। জামায়াত সে রকম অপরাধী দল। নাম পরিবর্তন বা নতুন দল করলে অপরাধ আড়াল হবে না। দেশের মানুষ তো এ অপরাধীদের চেনে। তাই তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেও সেটা পারবে না, সে সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৯
এসকে/আরবি/