শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য শিরীন আখতার।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, স্থায়ী কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান শওকত, নুরুল আখতার, সহ-সভাপতি আফরোজা হক রীনা, ফজলুর রহমান বাবুল, সফি উদ্দিন মোল্লা প্রমুখ।
দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে শিরিন আখতার বলেন, সুশাসনের জন্য রাজনৈতিক চুক্তির দাবিতে দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে রাজপথ ও সংসদে সোচ্চার রয়েছে জাসদ। চলমান দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযানে জাসদ প্রধানমন্ত্রীর পাশে ও রাজপথে সোচ্চার থাকবে। জাসদ মনে করে, দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি সেগুলো হচ্ছে- কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না, অপরাধী যেই হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না, দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। মাঠ পর্যায়সহ সব স্তরে পুলিশ ও জনপ্রশাসনকে সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার ও প্রতিকার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার ও নাগরিক সেবা প্রদানের বিষয়ে সংবেদনশীল করতে হবে।
‘অসৎ রাজনীতিক-পুলিশ ও জনপ্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তা-দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা “অপরাধী সিন্ডিকেট” ধ্বংস করে দিতে হবে। ’
দুর্নীতিবাজ-লুটপাটকারী-দলবাজ-দখলবাজ-ক্ষমতাবাজ-ক্ষমতার অপব্যবহারকারী-গুন্ডা-মাস্তান-অত্যাচারি-নির্যাতক, নারী ও শিশু নির্যাতক-ধর্ষক, মাদককারবারীসহ কোনো অপরাধীই যেন রাজনৈতিক-প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের অবৈধভাবে অর্জিত সব অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
বেদখলকৃত নদী-খাল-জলাভূমিসহ সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের অভিযান কঠোরভাবে অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারি জমিতে স্থাপিত রাজনৈতিক দল বা অন্য কোনো সংগঠনের স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং হল-হোস্টেল থেকে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী বিতাড়ন ও টর্চার সেল ধ্বংস করতে হবে। গেস্টরুম ও গণরুমের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিগ্রস্থ ভিসিসহ প্রশাসনে বদল আনতে হবে।
সরকার গৃহিত ‘মেগা প্রকল্পসমূহে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে’ বলে যে অভিযোগ উঠেছে সেগুলো নিস্পত্তি করা ও জনমনে প্রশ্নের অবসানের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।
ব্যাংক লুট ও শেয়ার বাজার কেলেংকারি নিয়েও জনমনে যে প্রশ্ন ও অভিযোগ রয়েছে তার অবসান করার জন্যও একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।
দুদককে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ন্যায়পাল নিয়োগ করতে হবে। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নে, অর্থ বরাদ্দে, ব্যয়ে যেন দুর্নীতি-অপচয়ের কোনো ফাঁক-ফোকর-সুযোগ না থাকে তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। সরকারি টেন্ডারে অংশ নেওয়াসহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রতিযোগিতামূলক করার ক্ষেত্রে সব বাধা দূর করতে হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাড়া জাগানো হত্যাকান্ড, অত্যাচার-নির্যাতন, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, লুটপাটের ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলমান দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযান জোরদার ও অব্যাহত রাখার দাবিতে জাসদ ১৬ অক্টোবর সব জেলা-উপজেলায় গণমিছিল করবে। ২২ অক্টোবর ঢাকায় গোলটেবিল আলোচনা করবে। আর ৩১ অক্টোবর জাসদের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুর্নীতি বিরোধী সুশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চেতনায় দেশব্যাপী জেলা-উপজেলায় আলোচনা সভা-সমাবেশ-পথ সভা-গণমিছিল-মশাল মিছিল করবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, দুর্নীতিবাজরা দলের কলঙ্ক। দুর্নীতিবাজদের গায়ে যে জার্সিই থাকুক না কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। অসৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পুলিশ-প্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ত্রিমূখী শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। সুশাসনের জন্য আন্দোলন ও শুদ্ধি অভিযানের টার্গেটই হবে অপরাধীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
আরকেআর /এইচএডি