এই সমস্যার শুরু মূলত ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। তার ওই বক্তব্যে শুধু আওয়ামী লীগই ক্ষুব্ধ নয়, জোটের শরিক দলগুলোর নেতারাও বিব্রত এবং কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
গত ১৯ অক্টোবর বরিশালে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্মেলনে মেনন অভিযোগ করেন, গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমি সাক্ষী, এই নির্বাচনে আমিও নির্বাচিত হয়েছি। আমি সাক্ষী দিয়ে বলছি, আমি জনগণ, সেই জনগণ, তারা ভোট দিতে পারে নাই। ’
যদিও এই বক্তব্যে সমালোচনার মুখে পরের দিনই এক বিবৃতিতে সাবেক মন্ত্রী বলেছেন, গণমাধ্যমে ভুল বার্তা এসেছে। আমার বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে উপস্থাপন না করে অংশ বিশেষ উপস্থাপন করায় এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু, তাতে পরিস্থিতির পরিবর্তন আসেনি। কারণ, ভিডিও ফুটেজে রাশেদ খান মেননের বক্তব্য স্পষ্ট।
এই পরিস্থিতিতে তিনি যাতে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ক্ষোভের মুখে না পড়েন, সে জন্য তাকে সতর্ক করা হয়েছে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগের কোনো কার্যালয়ে না যেতে। দলটির ক্ষুব্ধ কর্মীরা তার উপর চড়াও হতে পারে বা কোনো ধরনের বিরূপ মন্তব্য করতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন খোদ ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই। ফলে, গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৪ দলের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে যাননি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি।
রাশেদ খান মেনন জোটের একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা, নিজেও সংসদ সদস্য এবং আগের সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। তার এধরনের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বিব্রত ও হতবাক হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বরাবরই এধরনের মন্তব্য করে আসছে। সেটাই এখন প্রতিধ্বনিত হলো ১৪ দলের জোট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা রাশেদ খান মেননের মুখ থেকে।
তার ওই বক্তব্য শুধু আওয়ামী লীগই নয়, ১৪ দলের অন্য শরিকরাও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এই বক্তব্যের জন্য রাশেদ খান মেননের সংসদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গেছেন। তিনি নিজেও সংসদ সদস্য।
তবে, ১৪ দলের দুয়েকটি দল মেননের বক্তব্যকে প্রসন্নভাবে সমর্থন করছে। বিশেষ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। গত নির্বাচনে আসন সমঝোতায় তাদের কোনো ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ। মেননের বক্তব্যে জাসদের সমর্থন থাকলেও নেতারা অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।
একাধিক সূত্র জানায়, ১৪ দলের অধিকাংশ শরিক দলের নেতারা মেননের বক্তব্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। এই অবস্থায় ১৪ দল রাশেদ খান মেননের কাছে তার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইবে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেননের এই বক্তব্যের পর সেই দল জোটে থাকতে পারে কি-না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এখনই কেউ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাচ্ছেন না।
জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) আজারবাইজান যাচ্ছেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হবে। সেই সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং মেনন বা ওয়ার্কার্স পার্টির বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, আগামী ২ নভেম্বর থেকে চার দিনব্যাপী ওয়ার্কার্স পার্টির ১০ম কংগ্রেস। ১৪ দলে থাকা না থাকার বিষয়ে আগের মতবিরোধ প্রবল হয়ে উঠেছে পার্টির মধ্যে। দলের একটি অংশ ১৪ দলে থাকার বিরুদ্ধে। কংগ্রেসে এই বিষয়টি আরও প্রকট হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতিতে ১৪ দলে ওয়ার্কার্স পার্টির অবস্থান কী হবে, থাকতে পারবে কি পারবে না, এ বিষয়টি নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রাশেদ খান মেনন আবারও দলটির সভাপতি নির্বাচিত হলে জোটের মধ্যে এ বিষয়টি আরও অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৯
এসকে/একে