বাংলানিউজ: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হিসেবে দীর্ঘ ১৩ বছর দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কয়েকদিন আগে নতুন কমিটি করা হয়েছে।
শাহাদাত হোসেন সেলিম: আমি এলডিপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। দলের নামকরণ থেকে শুরু করে গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র তৈরি করার সঙ্গে ছিলাম। নীতিনির্ধারকদের একজন হিসেবে দীর্ঘ ১৩ বছর দল করছি। অর্থ ও শ্রম দিয়েছি। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক সংকট যাচ্ছিল। তখন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের মধ্যে থেকে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না। অলি আহমদ একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে হঠাৎ জামায়াতের পক্ষে স্ট্যান্ড নেওয়াটা আমরা ভালো চোখে দেখিনি।
জাতীয় মুক্তি মঞ্চের এজেন্ডা হলো বিরাজনীতিকরণ। বিএনপি নেতাদের চরিত্রহনন। বিএনপি নেতাদের ব্যর্থ প্রমাণিত করা। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ সৃষ্টি করে দুর্বল করাই জাতীয় মুক্তি মঞ্চের লক্ষ্য। যদিও জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠনের সময় আমরাও ছিলাম। কিন্তু পরে যখন বিভিন্ন রকম ধোঁয়াশা তৈরি হলো, তখন দেখতে পেলাম এর মধ্যে কোনো সঠিক রাজনীতি নেই, জাতীয়তাবাদের রাজনীতিকে ধ্বংস করা ছাড়া। তখন ধীরে ধীরে এ দল ছেড়ে এসেছি। একইসঙ্গে দলীয় প্রধানের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আমার মনোমানিল্য সৃষ্টি হয়। হঠাৎ করে তিনি যে নতুন কমিটি গঠন করেছেন, এটা তার এখতিয়ারবহির্ভূত, অসাংবিধানিক, অগঠনতান্ত্রিক। আমাদের যে গঠনতন্ত্র আছে, তাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে নিতে হয়। তিনি যেটা করেছেন সেটা অনেকটা প্রতিহিংসামূলকভাবে করেছেন। আমাকেসহ কয়েকজনকে বাদ দেওয়ার জন্য কমিটি করেছেন কোনো সম্মেলন ছাড়া। এটা এলডিপির নেতাকর্মীরা কেউ মেনে নেয়নি। অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি এ কাজ করতে পারেন না। কেউ যদি রাজনৈতিক দলকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করেন, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। এলডিপির নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যপারে দুঃখ প্রকাশ করছেন। অনেকে ইতোমধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর যারা এলডিপিতে যোগদান করেছিল তাদের মধ্যে একজন ব্যক্তিও এখন আর এলডিপি করে না। মূলত এ দলের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। কিছু ঠিকানাবিহীন লোকজনের ঠিকানা এখন এলডিপি। এখন ধীরে ধীরে আমি অনেক অজানা তথ্য আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে জানাবো।
বাংলানিউজ: কর্নেল (অব.) অলি আহমদ যদি ফের আপনাকে ডাকেন সেক্ষেত্রে আপনি তার সঙ্গে রাজনীতি করবেন কি-না?
শাহাদাত হোসেন সেলিম: দলের পক্ষ থেকে অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আজকেও (বৃহস্পতিবার) একজন উপদেষ্টা যোগাযোগ করেছেন। তিনি অলি আহমদ সাহেবের কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। আমাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করবেন। যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে সেটার অবসান করতে চান। কিন্তু আমি আসলে একজন নিষ্ঠুর হৃদয়হীন ব্যক্তির নেতৃত্বে আর রাজনীতি করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাংলানিউজ: আপনি ছাত্রদলের প্রথম কমিটিতে ছিলেন। আপনার পুরোনো দল বিএনপি যদি আপনাকে নিতে চায়, তাহলে কী করবেন?
শাহাদাত হোসেন সেলিম: বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে আমি এর রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলাম। জীবনের অনেক সময় বিএনপির জন্য ব্যয় করেছি। মনেপ্রাণে বিএনপির রাজনীতি ধারণ করি। খালেদা জিয়া আমার নেত্রী। তারেক রহমান এদেশের রাজনীতির যোগ্য উত্তরসূরী। আমার অবস্থান সবসময় জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে থাকবে। বিএনপির পক্ষ থেকে যদি আমাকে দলে আহ্বান জানায়, সেটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। শিগগির বিষয়টি আমি আপনাদের জানাবো। এলডিপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই একটা সিদ্ধান্ত নেবো।
বাংলানিউজ: কিছুদিন আগে শুনেছিলাম অলি আহমদ নিজেও বিএনপিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তখন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ বিষয়ে কী মনোভাব দেখিয়েছিল?
শাহাদাত হোসেন সেলিম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার নির্দেশেই আমি একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন তিনি (অলি আহমদ) জানতে চেয়েছিলেন, বিএনপিতে গেলে তার অবস্থান কী হবে। এটা নিয়ে বিএনপি ও অলি আহমদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় বিষয়টি আর সামনে এগোয়নি।
বাংলানিউজ: জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী?
শাহাদাত হোসেন সেলিম: আসলে মুক্তি মঞ্চ একটা লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যহীন মঞ্চ। জাতীয় মুক্তি মঞ্চের পক্ষে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করলেও বিএনপির নেতৃত্বকে খাটো করা ছাড়া মুক্তি মঞ্চের আর কোনো রাজনীতি নেই।
বাংলানিউজ: তাহলে কি বলা যায় অলি আহমদ ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে নেই?
শাহাদাত হোসেন সেলিম: নির্বাচনের পরে তিনি ২০ দলীয় জোটের কোনো মিটিংয়ে উপস্থিত হননি। নির্বাচনের আগেও বিভিন্ন জনসভায় তাকে দাওয়াত দেওয়ার পর তিনি যাননি। তার পজিশন কী হবে, কার আগে কার পরে বক্তৃতা দেবেন এটা নিয়ে কথা বলতেন। রাজনীতিতে তিনি এগুলোকে প্রাধান্য দেন। ব্যক্তিস্বার্থটাই তার মুখ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/