ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কবিতা

গুচ্ছ কবিতা | অহ নওরোজ

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
গুচ্ছ কবিতা | অহ নওরোজ গুচ্ছ কবিতা | অহ নওরোজ

গুচ্ছ কবিতা
অহ নওরোজ

প্রসূনের গান
নিভিয়ে দিলাম মোমের শিখা।
অতঃপর
মদের মতো আবহাওয়া,
মুক্তার মতো রঙ; নরম আলো,
আর নীরব আকাশ আমায় ঘিরে ধরে।

হায় নিঃসঙ্গতা!
এক শহর লোকের মাঝে
আমি বড় একেলা।

ভাগ্যিস!
মায়া ছিল,
ছায়া ছিল,
প্রেম ছিল,
আনন্দ ছিল ফাল্গুনের।
রঙ আর সুরভি ছিল প্রসূনের।

আহা প্রসুন! 
কারো জন্মরঙে চেরি ভেলভেট
কারো রক্তলাল সিল্ক,
কেউ বা তুষার বনফুল।
যেন রকমারি উজ্জ্বলতায় ভরা 
প্রতিটি প্রসূন।

এদের রঙ
বর্ণালী বিস্ময় 
ও আগ্রহ দিয়েছে জীবনের;

এদের ঘ্রাণ
সুগন্ধির তসবির দিয়েছে জ্যোৎস্নায়,
কিংবা আনন্দ দিয়েছে বর্ষায়।

তাই সমস্ত নিঃসঙ্গতা যখন
নেমে এসেছে ধীরে,
বুকের প্রতিটি নালি,
শরীরের প্রতিটি ঘ্রাণেন্দ্রীয়,
মস্তিষ্কের সকল নিউরনে
এদের গান বেজে ওঠে অবিরত।

আমি বেঁচে থাকি,
ভাল থাকি,
সুখে থাকি
এইসব প্রসূন সন্ধ্যায়।

ফেরতা 
১.
দিবস যখন বৃত্তের মাঝে দোল খায়,
আমি বেঁচে থাকি ঘ্রাণের ভেতর।
ওম ওম গরমে
রক্তে ঢুকে পড়ে ঘ্রাণ।
কাপড়ের ঘ্রাণ
ঘামের ঘ্রাণ
চুলের ঘ্রাণ
চুড়ির ঘ্রাণ
স্তনের ঘ্রাণ।
একে একে একাকার হয়ে
দীর্ঘ এক তরঙ্গ রচনা করে
এইসব ঘ্রাণ।

আমি স্বস্তি পাই।

২.
ধীরে ধীরে মা হওয়া নারী 
যত্নআঁখি মেলে থাকে,

আমি তাকে দেখি
ভুলে যাই।
আবার দেখি; বারবার দেখি,
তবু ভুলে যাই।
তবে ঘ্রাণের তরঙ্গ তিরতির করলেই
আমি স্বস্তি পাই।

৩.
দিন যায়, দিন যায়।
নদীর আকাশ দেখা শিখি,
সবুজ পাতার জোনাকি নির্ণয় করি,
শরতের নির্জন সন্ধ্যায় উড়ে যায় যে বক
তার পরিচিত স্থান 
খুঁজে ফেলি সহজেই।
দশটি স্বর্ণচাঁপার মাঝে একটি বকুল
বেশ গাঁথতে পারি।
প্রকৃতি কিংবা সময়ের
অভ্যাসবশত
জীবন শরীর চেতন
বেজোড় ঘ্রাণেন্দ্রীয়,
পুষ্ট হয়ে ওঠে।
রক্তে ঝলমল হতে থাকা আলোড়ন,
অস্তিত্ব কেটে কেটে
পায়ে পায়ে,
তলোয়ার করে তোলে আমাকে।

আমি একক হই,
কিংবা হতে চাই,
অথবা হয়ে উঠি।

৪.
একদিন নিমফুলের রাত।
কুয়াশার মতো করে 
চেপে ধরে আমাকে।
আমার সমগ্র অসুখে ডুবে যায়,
আঙুলের প্রেমে পড়া 
কিংবা মধুমাখা হৃৎপিন্ডে
যন্ত্রণার মতো
কুঁকড়ে ওঠে সব।

টলমল টলমল করে
আমার এই দুটি চোখ, 
আঁখির সলিল টেনে ধরে শিকড় পানে
….

৫.
আগে যেমন পায়রা ছিলাম,
ঠিক তেমনি তেমনি করে
পালকি পালকি হাওয়ায়
মায়ের কাছে পৌঁছাই।
মাকে মনে হয় লাল বরফ।
তাকে ছুঁয়ে দেখি,
আবার ছুঁই; বারবার ছুই
তুষারের সংকেত টের পায়
আমার এই নখ
হাত
গ্রীবা
রঙজর্জরিত ঠোঁট
এক নিঃশ্বাসে চেখে দেখে 
আমার কপোল,
আমি কোমল হই,
স্নিগ্ধ হয় আমি’র সকল।

৬.
সমস্ত অসুখ আমার
দগদগে বিষণ্ণতা,
দীর্ঘ অজত্নে দাগপড়া স্নেহ,
নার্গিসফুলের মতো
শুদ্ধ হয়ে ওঠে
মনে হয় 
চারিপাশে শালিক উড়ছে
চিকচিক করছে গলা।

মহাশ্বেতা নেই
বনের ধারে জোছনার কাছে
কোন এক কুয়াশায়
তার সাথে দেখা না হলে 
কখনই হয়তো জানতাম না 
কথা থাকে চোখে, ঠোঁটে, ভুরুতে;
কথা থাকে ইনসমনিয়ায়।

তাজ্জব! 
নারী মানেই নাকি 
নাভির নিচে গভীর জলরাশি,
সমুদ্রমন্থন;
নারী মানেই নাকি
রৌরবের তাব্রিজ শহর,
শতাব্দীর রেহেলে ভেসে থাকা অদ্ভুত সৌরভ।

কিন্তু আমি বলি
নারী মানেই টান
মায়া;
রেটিনার ককপিটে অশরীরী মুদ্রণ।
যেন সিল্কের কাজ করা নীল কুশন,
পাহাড়ের বুকে বেড়ে ওঠা হরিণীর মতন
আদিগন্ত প্রান্তর দেখায় শান্তি।
নারী মানেই যেন
রৌদ্রজ্জ্বল প্রসঙ্গে প্রলম্বিত ছায়া,
যার প্রকোষ্ঠে
আমরা এক রমণীয় শিশু।

যোগাযোগ

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ