ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশের চেষ্টা করলে কঠোর হবে সরকার

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২২
নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশের চেষ্টা করলে কঠোর হবে সরকার

ঢাকা: নয়াপল্টনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে বিএনপি অনড় থাকলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্ধারিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাওয়ার মধ্যে বিএনপির অরাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

 

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ। ডিএমপি তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।  

সরকার ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি, বিএনপি যে ধরনের সমাবেশ করতে চাচ্ছে বা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তার জন্য রাজধানীর নয়াপল্টনের সড়ক কোনোভাবেই উপযুক্ত নয়। বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম এবং দীর্ঘ সময় ধরে সমাবেশ করার মতো স্থান সেটি নয়।  

অন্যদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সমাবেশ করার মতো সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হওয়া সত্ত্বেও সেখানে রাজি না হয়ে বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার যে ঘোষণা দিয়েছে দিয়েছে, তার মধ্যে ষড়যন্ত্রমূলক উদ্দেশ্য দেখছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির অশুভ পরিকল্পনা রয়েছে। এ কারণেই তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়। সমাবেশের মাধ্যমে ভাঙচুর, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নাশকতা চালানো সহজ হবে বলেই স্থানটি বিএনপি নেতাদের পছন্দ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।  

সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির কী পরিকল্পনা রয়েছে এবং কোনো নাশকতা বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ছক আঁকা হচ্ছে কি না-  সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

৩০ নভেম্বর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই অরাজক পরিস্থিতি যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা করতে। বিএনপি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে সমাবেশ করতে পারে, সে জন্য সোহরাওয়ার্দীতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করলে ভুল করবে।

সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির নেতারা যেমন নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে বলে বার বার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন, অনড় অবস্থান জানান দিচ্ছে, তেমনি সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাও এখানে সমাবেশ করতে না দিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপিকে সমাবেশ করতে হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করতে হবে- এটিই সরকারের অবস্থান।  

বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নামও ছিল। এ ছাড়া তারা মানিক মিয়া এভিনিউ চেয়েছিল। সেখানে কাউকেই সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচেনা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সোহরাওয়ার্দীতে অনুমতি দিয়েছে। এখন নয়াপল্টনে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা প্রতিহত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দীতেই সমাবেশ করতে হবে। তারা বলছে, তাদের সমাবেশে ২০-২৫ লাখ লোক হবে। নয়াপল্টনে সংকুলান তো সম্ভব না। কিন্তু তাদের নয়াপল্টনেই কেন সমাবেশ করতে হবে? এর কারণ লোক বেশি দেখানো যাবে, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা সহজ হবে। সরকারি স্থাপনার ক্ষতি করতে পারবে। সরকার কোনো অবস্থাতেই নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেবে না। দলীয়ভাবেও আমরা তাদের মোকাবিলা করব।  

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি লাখ লাখ লোকের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর জন্য সোহরাওয়ার্দীই তো সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। নয়াপল্টনে সড়কের মধ্যে অল্প লোক নিয়ে এক ঘণ্টার জন্য সমাবেশ করা যেতে পারে। কিন্তু তারা সোহরাওয়ার্দীতে না গিয়ে সেখানেই করতে চায়। এর কারণ কী? 

তিনি বলেন, সব দলই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ, জনসভা করে। বিএনপিও অতীতে করেছে। তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। সারা দেশ থেকে বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিয়ে তারা এসে আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটানো এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে। এই ষড়যন্ত্র নিয়েই তারা অগ্রসর হচ্ছে, তাদের মূল লক্ষ্যটা স্পষ্ট। তবে বিএনপি এটি করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, বিভিন্ন সংস্থা আছে, তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। স্থিতিশীল পরিবেশ রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। রাষ্ট্র অনেক শক্তিশালী। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সতর্ক পাহারায় থাকবেন। আমরা ঘরে বসে থাকব না, জনগণের জীবন রক্ষা, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঠেকাতে আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের মোকাবিলা ও প্রতিরোধ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২২
এসকে/আরএইচ  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।