ঢাকা: আওয়ামী লীগ ফেরেস্তার দল নয়, মানুষের দল মন্তব্য করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ভুল-ভ্রান্তি আমাদের থাকতে পারে। কিন্তু এ ত্রুটি-বিচ্যুতি পুঁজি করে আমাদের সমস্ত অর্জন, তরতর করে এগিয়ে যাওয়াকে কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে, এজন্য যুবক সমাজকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
শনিবার (৭ জনুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীর টিঅ্যান্ডটি মাঠে আয়োজিত এক প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 'সেইভ আর্থ, সেইভ বাংলাদেশ সিজন-৩' শীর্ষক এ প্রদশর্নীর আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'বিডি ক্লিন'।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণ করে শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ঠিক একইভাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রতিটা গ্রামেই যেন প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকে সেই উদ্যোগ নিয়েছেন। এক সময় দেশে মাত্র ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, এখন ১৮০টি বিশ্ব বিদ্যালয় আছে।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা দেশ পরিচালনা শুরু করেছিলেন মাথাপিছু আয় ৯৪ ডলার দিয়ে। সাড়ে তিন বছরে তিনি এ মাথাপিছু আয় নিয়েছেন ২৭৭ ডলারে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এ দেশ শাসন করেছেন সামরিক শাসক এরশাদ, জিয়াউর রহমান ও তাদের উত্তরসূরিরা। তারা আমাদের মাথাপিছু আয় উন্নীত করেছেন মাত্র ৩২৯ ডলার। অর্থাৎ ২১ বছরে তারা আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন মাত্র ৫২ ডলার। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ বছরে আমাদের মাথাপিছু আয় উন্নীত করেছেন ২ হাজার ১২৪ ডলারে। এর পরও কি বলা যাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে?
মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানিরা বাঙালিদের উপর নির্যাতন করতো জিন্দাবাদ বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি করতো জিন্দাবাদ বলে, আমাদের মানুষদের হত্যা করতো জিন্দাবাদ বলে। আর আমরা বলেছিলাম, জিন্দাবাদে লথি মারো, জয় বাংলা কায়েম করো। জয় বাংলা আমার জন্মের স্লোগান, স্বাধীনতার স্লোগান, আমার হৃদয়ের স্লোগান। অতএব জয় বাংলাকে নিয়ে যারা ব্যঙ্গোক্তি করছে, তারা বাংলাদেশকে নিয়ে ব্যঙ্গোক্তি করছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নিয়ে ব্যঙ্গোক্তি করছে, বাংলাদেশের সাড়ে ১৭ কোটি মানুষকে নিয়ে ব্যঙ্গোক্তি করছে। তাদের ব্যাপারে আমাদের সোচ্চার হতে হবে, সতর্ক হতে হবে।
প্রদর্শনীর আয়োজক সংগঠন বিডি ক্লিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এত অবক্ষয়পূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও একটি গোষ্ঠি সৃজনশীল মানসিকতা নিয়ে, দূর দৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তা চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে বিডি ক্লিন। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তারা যেভাবে বিভিন্ন প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন, তা দেখে আমি মুগ্ধ।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবাইকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ যেমন দায়ী তেমনি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানী, চীন, ভারত, বাংলাদেশের মানুষও দায়ী। এ পৃথিবীটা সবার। তাই সবার উচিত এ পৃথিবীর কথা ভাবা।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা হিমালয়ের পাদদেশ ও উপকূলবর্তী একটি দেশ। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সাইক্লোন, বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আর এর পেছনে দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন।
তিনি আরও বলেন, এক সময় বলা হতো, সমুদ্রের মাছ মানুষের শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু এখন উল্টো শরীরের জন্য এটি ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। কারণ সমুদ্রের পানিতে প্রতিদিন হাজার হাজার টন প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে সমুদ্রের পানি দূষিত হয়ে উঠছে। তাই সমুদ্রের মাছ খাওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক, বিডি ক্লিনের প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফরিদ উদ্দিনসহ বিডি ক্লিনের বিভিন্ন ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক ও জীববৈচিত্রে এর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল, চিপসের প্যাকেট ও সিগারেটের ফিল্টার দিয়ে বিভিন্ন প্রতিকৃতি তৈরি করে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বিডি ক্লিন।
গত ৩০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে ছিল ৩০ টন প্লাস্টিক বোতল, ৩ কোটি সিগারেট ফিল্টার ও ৬ টন চিপসের প্যাকেট দিয়ে তৈরি করা বিশাল আকৃতির পাতাহীন গাছ, কচ্ছপ, মাছ, সিগারেট ফিল্টার, গ্রেনেড, মানুষের মস্তিষ্ক, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি।
এছাড়া মূল মঞ্চ ও প্রদর্শনীর সীমানা প্রাচীরও তৈরি করা হয়েছে ফেলে দেওয়া বোতল দিয়ে। যা দেখতে প্রতিদিন হাজার দর্শনার্থীকে প্রদর্শনীতে ভিড় জমাতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
এসসি/জেএইচ