ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

নীরবেই কেটে গেল খালেদা জিয়ার পঞ্চম কারাবন্দি দিবস

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
নীরবেই কেটে গেল খালেদা জিয়ার পঞ্চম কারাবন্দি দিবস -ফাইল ছবি

ঢাকা: নীরবেই কেটে গেল বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পঞ্চম কারাবন্দি দিবস। এদিন কোনো অনুষ্ঠান বা পোস্টার চোখে পড়েনি, দিনের শেষভাগে সাংবাদিকদের মাধ্যমে অবহিত হয়ে শুধুমাত্র একটি বিবৃতি দিয়েছেন দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের পঞ্চম বর্ষপূর্তি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে তিনি গুলশানের বাসায় ফেরেন।

সুত্র জানায়, করোনা আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া কয়েকদফা এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন বাসায় আছেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো। তার জন্য গঠিত  মেডিকেল বোর্ড নিয়মিত বাসায় এসে চেকআপ করে যাচ্ছে। ভাই শামীম এস্কান্দার ও বোন সেলিমা ইসলামসহ আত্মীয়স্বজনরা বাসায় নিয়মিত সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিশেষ সহকারি অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস মাঝে মাঝে বাসায় যেয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

আর লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমান তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান, নাতনী জাইমা রহমান, ছোটে ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান ও দুই নাতনী জাহিয়া ও জাফিয়ার সঙ্গে স্কাইপিতে কথা বলেন নিয়মিত।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলানিউজকে বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আল্লাহর রহমতে বর্তমানে কিছুটা ভালো আছেন। বাসায়ই তার নিয়মিত চিকিৎসা চলছে। ঢাকায় অবস্থানরত পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়মিত দেখতে যান। চিকিৎসকরাও বাসায় এসে তাকে দেখে যান।

খালেদা জিয়ার কারাবন্দি দিবসে বিএনপির কোনো কর্মসূচি ছিল কি না দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন তুললে ওই দিন সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ই-মেইলে একটি বিবৃতি আসে।

দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সাহেল প্রিন্সের পাঠানো বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক দিন। ২০১৮ সালের এই দিনে প্রতিহিংসাপরায়ণ আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ১/১১র জরুরি অবস্থায় সরকারের বিরাজনীতিকরণের মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি সাজা দিয়ে অন্যায়ভাবে আটক রেখেছে। শুধু ফরমায়েশি সাজা দিয়ে তাকে আটক রাখা হয়নি, তার প্রাপ্য জামিনের অধিকার কেড়ে নিয়ে ২৫ মাস অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি রেখেছিল।

বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনকেও দমন করতে সরকার নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। দেশ-বিদেশে সর্বত্র খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সোচ্চার হয়। আইনগতভাবে বারবার তার জামিনের আবেদন করা হলেও সরকারের হস্তক্ষেপে জামিন দেওয়া হয়নি। আইনি লড়াই করতে বিদেশ থেকে আইনজীবী আসতে চাইলেও সরকারের আপত্তির কারণে তাকে আসতে দেওয়া হয়নি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন,  দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে শর্ত সাপেক্ষে সরকার তার সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে তাকে প্রকারান্তরে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তার উন্নত, উপযুক্ত সুচিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে উন্নত বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সুপারিশ করলেও সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়নি।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বন্দি রাখা মানে গণতন্ত্রকে বন্দি রাখা। সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে গণতন্ত্রকেবন্দি রেখেছে। খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র আজ যেন সমার্থক। খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে। গণতন্ত্রের মুক্তি হলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র বিরোধী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সন্নিবেশিত করে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই ১০ দফা দাবি জনগণের ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুম, নির্মম-নির্যাতন হয়েছে, তার অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমি সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের এই নির্মম নির্যাতনের তীব্র ধিক্কার জানাই। সরকারের অন্যায় চাপ ও অগণতান্ত্রিক কাজের প্রতি মাথা নত করেননি, আপোষ করেননি, খালেদা জিয়া। তার জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে জনবিচ্ছিন্ন সরকার ভয় পায়। এজন্যই তার ওপর এত জুলুম নির্যাতন নেমে এসেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইনশাল্লাহ এই সংগ্রাম সফলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে, অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার লালিত স্বপ্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। আমি অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।