ঢাকা: বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্টু হয়নি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধাসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদন গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার ও ক্ষমাতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এটিকে পক্ষপাতদুষ্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যাসের অংশ বলে অভিযোগ করছেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই আওযামী লীগ সরকারের বিরোধীতা ও সমালোচনা করে আসছে। আগামীতেও দেশটির সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করবে। মানবাধিকার নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রতিবেদন তারই অংশ বলে তারা মনে করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্টু হয়নি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এগুলো তাদের অভ্যাস। তারা এগুলো বলে আসছে, অনেক বলেছে, অনেক কথাই বলবে। তাদের এসব কথা ইগনোর(উপেক্ষা) করাই ভালো। এগুলো মানে জানান দেওয়া যে আমরা আছি। এ সময় তিনি বলেন, ‘সেই গরুর গল্পের মতো, গরু ঘাস খাচ্ছিলো তখন একটা ডাস তার শিং-এর ওপর বসেছিল। কিছুক্ষণ পর ডাস বলে তোমার যদি অসুবিধা হয় আমি উঠে যাই। তখন গরু বলে ও তুমি এখানে ছিলে আমি তো জানিই না। ’ তাদের এসব কথা যদি ধরা হয় তাহলে আগানো যাবে না। তাদের দেশে কি হলো, ট্রাম্পের(সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) কথাই যদি ধরা যায়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এ প্রতিবেদন নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। এই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। সরকার বিরোধী সূত্র থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। এ প্রতিবেদনের তথ্য নেওয়া হয়েছে এমন একটি সংগঠনের কাছ থেকে যেটির অতীতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টা ছিল বলে তারা জানান।
প্রতিবেদনে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাচনে ঘটে যাওয়া ঘটনা উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের এ বিষয়ের দিকে তাদের তাকিয়ে দেখা উচিত বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গরবার এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট চুরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ত্রুটির বিষয়ে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এই অভিযোগ তুলেছেন। সেগুলো কি আপনারা দেখেন না। গণতন্ত্রের ত্রুটি পৃথিবীর দেশে আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ক্যাপিটাল হিলে পাঁচটি তাজা প্রাণ হারিয়েছে এটি আমরা ভুলিনি।
এ প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রতিবেদনটি তৈরির আগে আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তারা সেটি করেননি। মার্কিন প্রতিবেদনে ওপেন সোর্স থেকে এসব ইনফরমেশন নেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে একটি হলো ‘অধিকার’। এই সংস্থাটির অতীতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে মানবাধিকার, নির্বাচন, গণতন্ত্র সংক্রান্ত যেসব বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে সেগুলো পক্ষপাতদুষ্ট বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, সরকারবিরোধী ও পক্ষপাতদুষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে। অবশ্যই পুরো প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি না, কারণ সেখানে অনেক ভালো কথাও বলা আছে। তবে মানবাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্র সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে পক্ষপাতদুষ্টতা রয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এসব সমালোচনা উপক্ষো করে শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে, দেশেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমাদের নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পদ্মা সেতু নিয়েও তারা মিথ্যাচার করেছে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পর তাদের বোঝা উচিত ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
এসকে/এসআইএস