ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

বাইরে নালিশ করা, কান্নাকাটি করা বিএনপির চরিত্র: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
বাইরে নালিশ করা, কান্নাকাটি করা বিএনপির চরিত্র: শেখ হাসিনা

ঢাকা: বিএনপি সরকার আওয়ামী লীগের ওপর যে অত্যাচার করেছিল, বর্তমান সরকার সে পথে যায়নি। আওয়ামী লীগের ওপর যে পরিমাণ অত্যাচার হয়েছে, তার এক ভাগ করলেও বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

বাইরে নালিশ করা, কান্নাকাটি করা বিএনপির চরিত্র বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সোমবার (২৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দল আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় ‘অত্যাচার তো আমরা করিই নাই’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা হয়। সেই অবৈধ ক্ষমতা দখল মূলত লেবাস পরে ক্ষমতায় উত্তরণ। রাজনীতিকে গালি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে তারপর আবার সেই লেবাস খুলে নিজেরাই রাজনৈতিক হয়ে যাওয়া আর ক্ষমতা উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করা কালচারটাই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে।

আজ সেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দলখকারীদের হাতে তৈরি করা যে সংগঠন তারা নাকি গণতন্ত্র চায়! যাদের জন্মই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি; হয়েছে অবৈধ দখলের মধ্য দিয়ে মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র দেয়নি, তারা গণতন্ত্র দেবে? আর গণতন্ত্রের জন্য নাকি তারা লড়াই করে? তোদেরকে জিজ্ঞাস করতে হয় তোদের জন্মটা কোথায়? আর অবৈধ দখলদারি এটা তো আমাদের শুধু কথা না এটা উচ্চ আদালতই বলে দিয়েছেন যে জিয়া, এরশাদ এদের সকলের ক্ষমতা দখল ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ। তারপরেও তারা নাকি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামও করে; লড়াইও করে!

তিনি বলেন, আজকে যদি তুলনা করি, দেখা যায় জিয়াউর রহমানের আমল, এরশাদের আমল, খালেদা জিয়ার আমল। তারা নালিশ করে বেড়ায় তাদের ওপর নাকি খুব অত্যাচার করা হয়েছে। আরে অত্যাচার তো আমরা করিই নাই। অত্যাচার করেছে তো ওই বিএনপি-জামায়াত জোট, জিয়াউর রহমান এসে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার থেকে শুরু করে কয়েক হাজার মানুষকে, বিমানবাহিনীর অফিসারদেরকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। তাদের পরিবারগুলো তাদের লাশও পায়নি। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অগণিত নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে।

জিয়ার আমলে ছিল সাদা মাইক্রবাস, সেটিতে যে উঠছে সে আর কোনো দিন মায়ের কোলে ফিরে আসেনি। এই ভাবে তুলে নিয়ে নিয়ে ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তারা আর কোনো লাশও খুঁজে পায়নি। এভাবে অগণিত মানুষের উপর অত্যাচার করেছে, কত নাম বলবো?

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, আমরা তো তাদের মিছিল-মিটিং করতে দিচ্ছি। আওয়ামী লীগকে তো কোনোদিন মাঠেই নামতে দেয়নি। হাত কেটেছে, পা কেটেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বাড়ি-ঘর দখল করে সেখানে রাতারাতি পুকুর কেটেছে। সারা বাংলাদেশে তারা তাণ্ডব করে বেড়িয়েছে। আর তারা আসে গণতন্ত্রের ছবক দিতে? তাদের ওপর নাকি অত্যাচার হয়? ওরা যা আমাদের সাথে করেছে তার যদি এক ভাগও আমরা করি তাহলে ওদের তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা তো সে পথে যাইনি, আমরা তো আর প্রতিশোধ নিতে যাইনি। ওরা যে অন্যায়গুলো করেছে আমরা মানুষের জন্য সেই ন্যায় বিচারগুলো করেছি, ন্যায়ের কাজ করে যাচ্ছি।

ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধান বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দিয়ে পার্লামেন্টে বসিয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এরশাদ তাদের দল গঠন করার সুযোগ দিয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে দিয়েছে কর্নেল ফারুককে। রশিদ আর হুদাকে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে ভোট চুরি করে তাদেরকে সংসদে এনে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসিয়েছে। তাদের বিচার করা যাবে না? মানবাধিকারের কথা বলে আমরা যারা ১৫ আগস্টে আপনজন হারিয়েছি আমাদের কি মানবাধিকারের কোনো সুযোগ নাই? আমি বিচার চাইতে পারিনি আমার বাবা মার হত্যার। তারা আজ এতো কথা কোথা থেকে বলে?

দেশের ভেতরে না, বাইরে গিয়ে নালিশ করা; কান্নাকাটি করা এটাই তাদের চরিত্র। তার মনে করে বিদেশ থেকে এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। বাংলার মানুষ এখন অনেক সজাগ, অনেক সচেতন। জাতির যে লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, আমরা ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসি তখন আমরা অনেকগুলো কাজ করে বাংলাদেশকে একটা মর্যাদায় নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু ২০০১ সালে আমরা সরকারের আসতে পারিনি। কেন পারিনি? বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রি করতে যদি আমি রাজি হতাম; আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধাই হতো না। কিন্তু দেশের মানুষের সম্পদ বেঁচে দিয়ে, আর দেশের মানুষের মুখ কালো করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে ক্ষমতায় যাবে ওই রাজনীতি আমি করি না।

দেশের উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া এটাই আমাদের অঙ্গীকার, আমরা এটা করছি। আওয়ামীলীগ যেটা বলে সেটা করে। স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরে ২৯ বছর ছিল বাংলাদেশের কালো অধ্যায়। সেই কালো যুগ কেটে আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নতুন সূর্যের আলো নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে, আলোর পথের যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ সেই পথেই চলে যাবে। দেশের মানুষকে বলবো আওয়ামী লীগের প্রতি যে আশা ও বিশ্বাস নিয়ে চলেছে; সেই আশা ও বিশ্বাস নিয়ে যেন এগিয়ে যায়, কারও মিথ্যা কথায় যেন বিভ্রান্ত না হয়।

আমি জানি অনেক আন্তর্জাতিক শক্তি আছে, যাদের এ ধারাবাহিক গণতন্ত্র পছন্দ হয় না। আর আমাদের কিছু আতেল আছে তাদের তো পছন্দই না। এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। যে অবৈধ শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছিল- তাদের কোনো প্রেতাত্মা যেন আবার বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে না পারে, আবার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি করতে না পারে- সে জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং দেশের জনগণ অতন্দ্র প্রহরীর মতো, সকলকে সজাগ থেকে দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছি, আবার ২০১৪ তে ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আছি বলে ধারাবাহিক গণতন্ত্র রয়েছে; ধারাবাহিক উন্নয়ন রয়েছে। তাই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশে সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ২৭, ২০২৩
এসকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।