ঢাকা: অবিলম্বে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, সরকার গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরতে চায়।
শনিবার (০১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন হত্যার বিচার, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে দলটি।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, বর্তমান সরকারের অবাধ দুর্নীতি-লুটপাটের ফলে আর কাছের ভাই-ব্রাদারদের সিন্ডিকেটের কারণে দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে আগুন জ্বলছে। মানুষ আজ ভাত-মাছ-মাংসের স্বাধীনতা চায়। এই কথায় যখন প্রথম আলো প্রকাশ করলো তখন সেই প্রতিবেদককে রাতের আঁধারে কীভাবে তুলে আনা হলো, আমাদের ভাত-মাছ-মাংসের স্বাধীনতা নাই, এমনকি এটা বলার স্বাধীনতাও আমাদের নাই।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, সারা দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে আগুন জ্বলছে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির জন্য বাজার সিন্ডিকেট দায়ী, সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট দায়ী। সম্প্রতি প্রথম আলো পত্রিকায় ‘মাছ মাংস চাইলের স্বাধীনতা লাগবে’ বলে জাকির হোসেন নামে দিনমজুরের বক্তব্য জনজীবনে অসহনীয় দুর্ভোগের বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের দুর্দশা ও কষ্টের এই কথাগুলো যখন গণমাধ্যমে আসছে তখন সরকার সম্ভাব্য জনরোষের ভয়ে ভীত হয়ে গণমাধ্যমকে সর্বতভাবে দমনে উঠে পড়ে লেগেছে। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে এই দমনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ২৬ মার্চের প্রথম আলোর ওই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে গেস্টাপো কায়দায় প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রায় ২০ ঘণ্টা গুম করে রাখা এবং তারপর গভীর রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ তার নামে মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার দেখানো সরকারের এই কর্মকাণ্ডের আরেকটি নির্লজ্জ উদাহরণ।
তিনি বলেন, মামলার এজাহার দেখে বোঝা যায় এটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও মিথ্যা। কিন্তু এই ধরনের একটি আজগুবি মামলাতেও বিচারকরা জামিন না দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। জনসম্মতিহীন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মরিয়া এই সরকার গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরতে চায় এবং সেই কাজে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহারে উন্মত্ত।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তিমূলে আঘাত করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে খোদ সরকারই স্বাধীনতাকে হেয় করছে। একে তামাশার বিষয়ে পরিণত করেছে। স্বাধীনতা এত ঠুনকো বিষয় নয়, কিন্তু সরকার স্বাধীনতার প্রশ্ন এনে মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক দমনের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে।
সরকারের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয় ও নির্দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, সম্প্রতি র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু তারই আরেকটি প্রমাণ। দেশে ভোটাধিকার ও একটি জবাবদিহিতাপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আর কোনো উপায় নেই। গণআন্দোলন গণজাগরণই এই লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র পথ।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, নারী সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা পপী রানী সরকার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৩
এমজেএফ