ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

জেল থেকে আবেদন করেই ওসির বদলি, দাবি আ. লীগ নেতার!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৩
জেল থেকে আবেদন করেই ওসির বদলি, দাবি আ. লীগ নেতার! ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

নাটোর: জেলে থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠিয়ে ওসির বদলি করিয়েছেন বলে দাবি করেছেন নাটোরের গুরুদাসপুরে সদ্য বহিষ্কৃত এক আওয়ামী লীগ নেতা।  

স্থানীয় নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এমন দাবি করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

 

সদ্য বদলি হওয়া ওসিকে নিয়ে নানা বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ১৬ দিন কারাভোগের পর মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে জামিনে মুক্তি পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা করেন তিনি।

এসময় গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুল মতিনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। আজকে আওয়ামী লীগের স্ট্যান্ডিং সেক্রেটারি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজতে যাবে কেন? প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমি জেলে বসে থেকে আবেদন পাঠিয়েছিলাম।
আবেদন পাঠানোর পর আমি জেলে থাকা অবস্থায়ই সে শাস্তি পেয়েছে। তার বদলি হয়েছে।  

এসময় তিনি আরও বলেন, গুরুদাসপুর থানার ওসি উপজেলাজুড়ে জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছে। ওসি সাহেব আমাকে ব্যক্তিগতভাবে শত্রুতার তালিকায় নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মানুষকে আমার নামে মিথ্যা মামলা করার জন্য প্ররোচনা দিয়েছে।

মতবিনিময় সভা চলাকালে অনেকেই ফেসবুকে লাইভ করেন। ওসিকে উদ্দেশ্য করে বলা কথাগুলো মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে নজরুল ইসলামের মতামত জানতে বার বার তার মোবাইলে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে জানান, নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাতের ৫টি মামলা ও একটি নিয়োগ জালিয়াতি মামলা রয়েছে। গত ২ এপ্রিল আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানোর পর একই দিনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নাটোর ওয়ার হেড কোয়ার্টার্সে তাকে বদলি করা হয়েছে। এখন কেউ যদি তাকে উদ্দেশ্য করে আক্রোশমূলক কথাবার্তা বলে তাহলে কিছুই করাই নেই।

নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, জেল থেকে বের হয়ে রাতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে নজরুল ইসলাম মতবিনিময় সভা করেছেন। সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। বহিষ্কৃত হওয়ার পর নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা হয় কিভাবে- এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমরা তার পদে পুনর্বহালের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুসের কাছে যাব। এই বহিষ্কার আমরা মানি না।

গুরুদাসুপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে জানান, বহিষ্কৃত নজরুল ইসলাম দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করেছে। সেখানে ওসিকে নিয়ে দৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য রেখেছে। এ বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।

গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় তাকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অর্থ আত্মাসাৎ মামলায় তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তার ভাইরাল হওয়া বক্তব্য সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। যদি তিনি এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি দুঃখজনক। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।