ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

‘আমেরিকার ভিসানীতিতে আওয়ামী লীগের ঘুম হারাম’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৩
‘আমেরিকার ভিসানীতিতে আওয়ামী লীগের ঘুম হারাম’

লক্ষ্মীপুর: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ বলেছেন, আমেরিকার ভিসানীতিতে দেশের ওপর বজ্রপাত পড়েছে। ভিসানীতিতে আওয়ামী লীগের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

শুক্রবার (২৬ মে) লক্ষ্মীপুর শহরের পুরাতন গো-হাটা সড়কের বশির ভিলা প্রাঙ্গণে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীন আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয় জনসমাবেশে।

এবং বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানানো হয় সেখানে।

ভিসানীতি কেন দেরিতে প্রকাশ হলো সে প্রশ্ন রেখে সমাবেশে আমির খসরু বলেন, আমেরিকা ভিসানীতি পাঠিয়েছে ৩ মে। কিন্তু ২৫ মে কেন প্রকাশ হলো? এরা (সরকার) তা পকেটে লুকিয়ে রেখেছে। আমেরিকা মনে করেছিল, বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি দেশের জনগণকে জানিয়ে দেবে। সরকার যখন তা জানায়নি, তখন আমেরিকা বিষয়টি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দিয়েছে। সরকার আমাদের জানায়নি। মিডিয়াও তা জানতো না। আমরাও জেনেছি আমেরিকা প্রকাশ করার পর। তখন বুঝতে পারলাম প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা কেন আবোল-তাবোল বক্তব্য দিচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশ্ব বিবেক বাংলাদেশের ওপর বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পুলিশ গুলি করে হত্যা করছে, গায়েবি মামলা দিচ্ছে, গুম করছে, আন্দোলনে বাধাগ্রস্ত করছে। প্রত্যেক বিষয় রেকর্ড করা হচ্ছে। এসব করে আওয়ামী লীগ পার পাবে না। যে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা এগুলোর সঙ্গ জড়িত তারাও পার পাবেন না৷ ভোট চুরির সঙ্গে যারাই জড়িত, কেউ পার পাবেন না। প্রত্যেক ঘটনা নথিবদ্ধ হচ্ছে, প্রত্যেক ঘটনার বিচার হবে।

দেশে নির্বাচনের আলোচনার পরিবেশ নেই জানিয়ে আমির খসরু মাহমুদ বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগ নেই। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ব্যতীত অন্য কোনো আলাপের সুযোগ নাই। কোথায় নির্বাচন কীসের নির্বাচন? দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এখানে পুলিশের একটি অংশ, প্রশাসনের একটি অংশকে ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করার যে প্রক্রিয়া, সেটা বন্ধ করতে হবে। একটি অগণতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক গঠিত অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। যত রাজনৈতিক কারাবন্দি আছেন, তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে। মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। যখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে, তখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা মানে শেখ হাসিনার ফাঁদে পা দেওয়া। কোনো নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হবে না, রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলন করতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিকসহ সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতা, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা- এরা সকলে মিলে একটা চক্র গড়ে দেশটাকে দখল করে নিয়েছে। তাই রাজপথে প্রতিবাদ আর আন্দোলন করে এ চক্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ গুম, খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলা, গায়েরি মামলা, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের জনগণকে আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে। লাখ লাখ, কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচার করেছে। রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদ তাদের হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হচ্ছে। তাই এ অপশক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা আগুনে পুড়ে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছে, তারা সফল হবে।

আওয়ামী লীগ বাকশালে পরিণত হয়েছে জানিয়ে আমির খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ আর রাজনীতির মধ্যে নেই। এটা কোনো রাজনৈতিক দল না। বাংলাদেশে একটি দল আছে, যেখানে রাজনীতি আছে। বিএনপি হচ্ছে দেশে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ আগের মতো বাকশালে পরিণত হয়েছে।

জনসমাবেশের সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপিসহ শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদ মজুমদার, হারুনুর রশিদ ভিপি হারুন, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দিন সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান।

শুক্রবার দুপুর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে সমাবেশস্থলে যোগ দেন। হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।